একজন নারী ক্ষমতায়, আরেকজন নির্যাতিত: খন্দকার মোশাররফ

খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে কার্যত নির্যাতন করা হচ্ছে অভিযোগ করে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে আঙুল তুলেছেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2019, 02:14 PM
Updated : 17 Feb 2019, 02:14 PM

তিনি বলেছেন, “একজন নারী প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের ক্ষমতায়, সেই সময় এই নির্যাতন হচ্ছে। একজন নারী প্রধানমন্ত্রী আরেকজন সাবেক নারী প্রধানমন্ত্রীকে নির্যাতন করছেন।” 

রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন: প্রতিরোধ ও প্রতিকার’ শীর্ষক এক আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এমন মন্তব্য আসে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে, দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে সেটা নিজে প্রমাণ করেছেন খালেদা জিয়া। অথচ তাকেই এখন কারাগারে থাকতে হচ্ছে।

দুটি দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপির অভিযোগ, তাদের নেত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে ‘মিথ্যা’ মামলায় এই সাজা দেওয়া হয়েছে।  

মোশাররফ বলেন, “এক বছর পার হয়ে গেল, এখন পর্যন্ত নানা অজুহাতে তাকে কারারুদ্ধ রাখা হয়েছে জামিন না দিয়ে। এটাকে কী বলা যায়? এটা নির্যাতন। এটাই বাংলাদেশে প্রথম যে, একজন নারী আরেক নারীর ওপরে নির্যাতন করছে।”

কেবল খালেদা জিয়া নয়, বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপির ‘শত শত নেতা-কর্মী’ এভাবে কারাগারে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন দলটির স্থায়ী কমিটির এই নেতা। 

তিনি বলেন, গত ১২ বছরের চিত্র যদি তুলনা করি সর্বক্ষেত্রে কেবল ‘অবক্ষয়’ দেখা যাবে, আর এর কারণ হল ‘গণতন্ত্রহীনতা’।

“এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সমাজে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকতে হবে, মানুষের অধিকার থাকতে হবে, কথা বলার অধিকার থাকতে হবে। আমরা যে শাসনমালে এসে উপস্থিত হয়েছি, গণতান্ত্রিক সরকার তো দূরের কথা, কোনো সংজ্ঞাতেই এটা পড়েন না।”

সকলকে সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মোশাররফ বলেন, “গণতন্ত্রের মাতা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়া- মাদার অব ডেমোক্রেসি। তাকে বন্দি রেখে গণতন্ত্রকে মুক্ত করা সম্ভব হয়। অতত্রব আমাদের সকলকে, এদেশে সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে সোচ্চার হতে হবে, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।”

আর সেই লক্ষ্যে বিএনপি ও সহ সহযোগী সংগঠনে পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যেখানে যেখানে যা কিছু আমাদের দুর্বলতা আছে, সেগুলোকে সংশোধন করে, সেগুলো দ্রুত কাটিয়ে উঠে… আগামী দিনে আমরা গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করব, দেশনেত্রীকে মুক্ত করব, স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করব।”

আর তা করা গেলেই নারী ও শিশু নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম-খুন-লুটপাট থেকে দেশ মুক্ত হতে পারবে বলে মন্তব্য করেন মোশাররফ।

মাদক ও ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের প্রসঙ্গ টেনে মোশাররফ বলেন, “মাদকের ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে সরকার ও পুলিশের প্রধান গিয়ে হটাৎ করে আত্মসমর্পণ করিয়েছে, লিস্ট করে। আমাদের প্রশ্ন, লিস্ট তো পুলিশের কাছে আগেও ছিল। কেন তাদেরকে একজন একজন করে এতোদিনে বিচারের আওতায় আনা হল না?

“দেশ আজ একনায়কের অধীনে। একজন যা ভালো মনে করবেন- তাই হবে। একজন দলের সমর্থক যদি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হন, তাহলে তো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা যায় না। যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেই রিপোর্টের মধ্যে এমনভাবে কারসাজি করে, এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়, ফলে বিচারও করা সম্ভব হয় না।”

বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পড়েন দলের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরা।

দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরী আরা সাফার সভাপতিত্বে ও মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক শাহিদা রফিক, কেন্দ্রীয় নেত্রী নেওয়াজ হালিমা আরলী, শাহিনা খান, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ আলোচনায় অংশ নেন।