১৪ ফেব্রুয়ারির শহীদ জয়নাল, দীপালীদের প্রতি শ্রদ্ধা

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৩-র মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও সে সময়কার ছাত্রনেতারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2019, 10:41 AM
Updated : 14 Feb 2019, 10:42 AM

বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার হাই কোর্ট মোড়ের শিক্ষা অধিকার চত্বরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা।

তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের দুই অংশ এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদের পাশাপাশি বিএনপি নেতারা শামিল হয়েছিলেন শ্রদ্ধা জানানোর কাতারে।

এছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্রলীগ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন এরশাদ সরকারের আমলে তার শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খানের সাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালালে মোজাম্মেল, জয়নাল, দীপালী সাহা, কাঞ্চনসহজন কয়েকজন শিক্ষার্থী নিহত হন। সেই থেকে দিনটিকে ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন।

ফুল দেওয়ার পর এক মিনিট নীরবতা পালন করে নিহত সহযোদ্ধাদের স্মরণ করেন সে সময় আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রনেতারা।

পরে শিক্ষা অধিকার চত্বরেই তৎকালীন জাসদ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশতাক হোসেনের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়নের সে সময়ের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক ও জাসদ ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি মুনীর উদ্দিন আহমেদ।

শহীদ শিক্ষার্থীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের কাতারে অন্যদের মধ্যে সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের রাজেকুজ্জামান রতন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, জাতীয় যুব জোটের সভাপতি রোকনুজ্জামান, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শরীফুজ্জামান শরিফসহ সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ডা. মুশতাক হোসেন ১৪ ফেব্রুয়ারির ওই আন্দোলন ও এর আগে-পরের ঘটনাবলী নিয়ে একটি লেখায় বলেছেন, “১৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৩। এরশাদের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের এক রক্তাক্ত অথচ গৌরবময় দিন।”

রক্তাক্ত ওই ঘটনার বিবরণে তিনি লিখেছেন, “মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল, ছাত্র বন্দীদের মুক্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে ছাত্র সমাজ সামরিক আইনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে যাত্রা শুরু করে। মিছিলের অগ্রভাগে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রীরা।

“কার্জন হল ও শিক্ষা ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ মিছিলটি পৌঁছা মাত্রই অপেক্ষমান পুলিশ-বিডিআর-সেনাবাহিনী সাঁড়াশি আক্রমণ চালায় ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর। শহীদ হন জয়নাল, জাফর, দীপালী সাহাসহ অনেক নাম না জানা ছাত্র-ছাত্রী।”

ওই আন্দোলনের পথ ধরেই সামরিক শাসন থেকে বাঙালির মুক্তি ঘটে বলে মনে করেন সাবেক ছাত্র নেতা মুশতাক হোসেন।

তার ভাষায়: “সামরিক সরকার প্রণীত ড. মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতির ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ১৯৮৩ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারীতে রচিত হয় এক গৌরবজনক অধ্যায়। এ আন্দোলনই পরিণতি লাভ করে গণআন্দোলনে এবং এরশাদের স্বৈরশাহীর পতন ঘটে।”