মানুষ মেনে নেবে না: কামাল হোসেন

একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকার ‘হরণ’ করা হয়েছে অভিযোগ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা কামাল হোসেন বলেছেন, এটা মানুষ মেনে নেবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2019, 04:34 PM
Updated : 12 Feb 2019, 04:37 PM

মঙ্গলবার রাজধানীতে এক স্মরণ সভায় গণফোরাম সভাপতি কামাল বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন যা ঘটেছে, তা ‘প্রহসন’।

“আমি বিশ্বাস করি, ১৬ কোটি মানুষ এটা মেনে নেবে না। আমাদের যা করণীয় আছে, আমরা অন্তত করব।”

ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন কনফারেন্স লাউঞ্জে গণফোরামের উদ্যোগে এই স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।

ব্রিটিশ নাগরিক রাশেদ সোহরাওয়ার্দী গত ৮ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে নিজের বাসায় মারা যান। ‘লিজেন্ড’, ‘ডক্টর হু’ ও ‘জিন্নাহ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সকলে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করেন এবং প্রয়াত রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

কামাল হোসেন বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর যে ভালোবাসা ছিল, সেই আদর্শকেই অনুসরণ করে গেছেন রাশেদ সোহরাওয়ার্দী। তার জীবন কর্ম থেকে নতুন প্রজন্ম শিক্ষা নিতে পারে।

জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব আলোচনা সভায় বলেন, “এবারের নির্বাচন গণতন্ত্র বা রাজনীতির জন্য হয় নাই, এবার নির্বাচন হয়েছে ব্যবসার জন্য, টাকার জন্য।…  হায়রে টাকা বাতাসে উড়ে, বাতাসে উড়ে।”

তিনি বলেন, “৩০ ডিসেম্বর জনগণকে যে অপমান, অবহেলা, অবজ্ঞা করা হয়েছে, গণতন্ত্রের লাশের ওপর শকুনদের উল্লাস। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সেটা কল্পনা করা যায় না। আমাদের খুব দূঃখ হয়, আমরা কী মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, কেন করেছিলাম। ভোট ডাকাতির জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম?”

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি তুলে ধরে রব বলেন, ‘‘সারা দেশে বিরোধী দলের লাখো নেতা-কর্মী জেলে আছে। হাজার হাজার গায়েবী মামলা। বিনা অপরাধে বছরের পর বছর কারাগারে আছে। এদেরকে সহজে মুক্ত করা যাবে না, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া তাদের মুক্তি আসবে না।”

দেশের গণতন্ত্র ‘পুনরুদ্ধারের জন্য’ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান জেএসডি সভাপতি রব। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, “রাজনীতিবিদদের মধ্যে যে সৌহার্দ্যের পরিবেশ ব্রিটিশ আমলে, এমনকি ১৯৪৭ সালের পরেও ছিল, সেটা আজকে আর দেখা যায় না। এখানে রাজনীতির নামে যেটা হচ্ছে সেটা হিংসা-দ্বেষ।… এই পরিস্থিতিতে আমরা এসেছি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও তার ছেলে রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।”

হিংসা-দ্বেষ ভুলে রাজনীতিতে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধার পরিবেশ সৃষ্টি করা গেলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর আত্মা শান্তি পাবে বলে মন্তব্য করেন এই বিএনপি নেতা।

ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, “দেশে আমলাতন্ত্র চলাচ্ছে। আমাদের দেশের পুলিশ আমাদের জনগণকে পিটাবে- এটা বেদনার। নিজেরাও চিন্তা করুন, সোহরাওয়ার্দী সাহেব কি এই রাজনীতি করেছেন? তিনি সুবিধাবাদী রাজনীতি করেননি, বাড়ি-গাড়ির জন্য ছোটাছোটি করেন নাই। একদম নিঃস্ব হস্তে মারা গেছে। তার চিকিৎসার অর্থ ধার করে দিতে হয়েছে।”

বয়সে দুই বছরের বড় রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ছেলে মঈনুল বলেন, “বাবার মহৎ উদ্দেশ্য সে কখনোই ছোট হতে দেয়নি। সবসময় বাবাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করেছেন।”

যে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ভূমিকা ছিল, সেই দলের কেউ রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর দিকে ‘তাকায়নি’ মন্তব্য করে মঈনুল বলেন, “এটা আমার খুবই কষ্ট। তার দেহটা পর্যন্ত বাংলাদেশে আনা হলো না। লন্ডনে তার কেউ নেই। আওয়ামী লীগ সরকারে যারা আছেন, তারা ইচ্ছা করলে তার ডেড বডিটা আনতে পারতেন।”

কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে গণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুর পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোক্কাবির খান ও আমসা আমিন আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।