খালেদার এই অবস্থা ‘কল্পনায় আসেনি’ মওদুদের

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে এক বছর ধরে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার এই অবস্থার কথা ‘কল্পনাও করতে পারেননি’ দলটির নেতা মওদুদ আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2019, 03:35 PM
Updated : 7 Feb 2019, 03:35 PM

বিএনপি চেয়ারপারসনের বন্দিত্বের বছর পূর্তির আগের দিন বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, আইনি পথে তাদের নেত্রীর মুক্তির আশা ছেড়ে দিয়েছেন, আন্দোলন ছাড়া আর কোনো রাস্তা দেখছেন না।

এক বছর কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়া এখন আর হাঁটতেই পারেন না বলে জানিয়েছেন মওদুদ আহমদ

সরকার ‘হস্তক্ষেপ বন্ধ করলে’ সাত দিনের মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব বলে মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

এখন নেত্রীকে মুক্ত করতে আন্দোলনের জন্য তৈরি হতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ।

তিনি বলেন, “যেহেতু আদালতের মাধ্যমে সম্ভবপর হচ্ছে না, সেজন্য আন্দোলন আমাদের করতেই হবে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সকলের কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে-সেটা হলো এই যে, আমাদের সকলকে সংঘবদ্ধ হয়ে সুশৃঙ্খলভাবে একটা আন্দোলনের কর্মসূচি আমরা রচনা করব।”

কারাগারে খালেদা জিয়ার শরীর খারাপ হলেও তার মনোবল শক্ত আছে দাবি করে মওদুদ বলেন, “অতি সংক্ষেপে বলতে চাই, নেত্রীর ছবির দিকে তাঁকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। এই সপ্তাহে দেখা হয়েছে উনার সাথে। উনার শরীর খুবই নরম হয়ে গেছে, কিন্তু মনোবল খুবই শক্ত।

“উনি (খালেদা জিয়া) হাঁটতে একেবারেই পারেন না এখন, দুই হাতেই সাংঘাতিক রকম ব্যথা। পা মাটিতে রাখা সম্ভবপর হয় না বলে হুইল চেয়ার ব্যবহার করেন।

“কোনো দিন কল্পনা করতে পারি নাই যে, বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় নেত্রী এবং তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে একটা তুচ্ছ ভিত্তিহীন মামলায় সাজা দেবে। পাঁচ বছরের সাজায় আপিল ফাইল করার পর সাতদিনের বেশি উনার জেলখানায় থাকার কথা নয়।”

আলোচনায় ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া আইনের মাধ্যমে কতটুকু মুক্তি পাবেন আমি বুঝতে পারি না। আমরা অ্যাডভোকেট বেআইনি কাজও করতে পারি না। বেআইনি হবে না আবার আইনের লংঘনও হবে-এর মাঝামাঝি একটা পথ যদি বের করে জোরালোভাবে আমরা ফাইট করতে পারি তাহলেই বেগম জিয়ার মুক্তি হবে বলে আমরা ধারণা।”

খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়ার জন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে দায়ী করেন গণফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।

বিএনপির আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আইনি লড়াই করে এই সরকারের অধীনে কিছু করতে পারবেন বলে আমরা মনে হয় না। যদি তাই হত তাহলে পাকিস্তানে নওয়াজ শরীফ ও তার কন্যা তো জেলে ছিল না। এসে আত্মসমর্পণ করেছেন পাঁচ দিনের মাথায় জামিন হয়ে গেছে। সেখানে তো মাহবুবে আলম নাই যে, সঙ্গে সঙ্গে আপিলে যাবে, চেম্বার জজে যাবে।

“পৃথিবীর কোনো দেশে কোনো সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রী গ্রেপ্তার হওয়ার পরে জামিন পায়নি-এটার একমাত্র নজির শুধু বাংলাদেশেই আছে। এখানে কী স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ। এটা মার্শাল ল’র চেয়েও দেখি কড়া কিছু আর কি।”

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ আন্দোলনের কথা বলেন সুব্রত চৌধুরী।

‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয়’ শিরোনামে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও ফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আইনজীবী আমিনুল হক, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আলহাজ গিয়াসউদ্দিন, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, গোলাম মোস্তফা খান, আজাদ মাহবুব, শাহ আহমেদ বাদল, বদরুদ্দোজা বাদল, অলিউর রহমান খান, খোরশেদ মিয়া আলম, রফিকুল ইসলাম মেহেদী, এসএম কামালউদ্দিন ওমর ফারুক রুহুল কুদ্দস কাজল, মনির হোসেন, সাইফুর রহমান, মাজেদুল ইসলাম পাটোয়ারি উজ্জ্বল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভায় ঢাকা আইনজীবী সমিতির আসন্ন নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্যজোটের সভাপতি প্রার্থী ইকবাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হোসেন আলী খান হোসেনের নেতৃত্বে নীল প্যানেলের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। আগামী ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হবে।

খালেদা জিয়াসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবিতে শুক্রবার ঢাকায় ও শনিবার সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে বিএনপি। ঢাকার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিকালে আলোচনা সভা করবে তারা।