এবার ক্ষান্ত দিন, নেত্রীকে মুক্তি দিন: প্রধানমন্ত্রীকে রিজভী

সরকার প্রভাব খাটিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি আটকে দিচ্ছে অভিযোগ করে অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দলটির নেতা রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2019, 10:33 AM
Updated : 6 Feb 2019, 11:17 AM

বুধবার নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে যেন ‘লুকোচুরি’ খেলা হচ্ছে।

“এক মামলায় জামিন নিলে অন্য আরেকটি মামলায় জামিন বাতিল করা হচ্ছে, হাই কোর্ট জামিন দিলে আপিল বিভাগ আবার জামিন স্থগিত করেছে, পরে আপিল বিভাগ জামিন দিলে নিম্ন আদালত আরেকটি মামলায় জামিন আটকে দিয়েছে। এমনি করে পার হতে যাচ্ছে একটি বছর।”

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের সাজা নিয়ে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া। তার বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় কারাদণ্ড হয়েছে তার।

বিএনপি নেত্রীর বন্দিত্বের এক বছর পূর্তির আগের দিন এই সংবাদ সম্মেলনে খালেদার মামলাগুলোয় জামিনের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে তার মুক্তির ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।

তিনি বলেন, “এই সরকার প্রধানের উদ্দেশে আমাদের আহ্বান, এবার একটু ক্ষান্ত দিন। অনেক করেছেন, অনেক অন্যায় করেছেন। অনেক অবিচারের মধ্যে আপনি একজন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিষ্ঠুরভাবে দমন-পীড়ন করেছেন। এবার একটু ক্ষান্ত দিন।

“একজন গুরুতর অসুস্থ বয়স্কা নেত্রীর ওপর আর জুলুম করবেন না, একটি বছর তাকে কারারুদ্ধ রেখে অনেক অত্যাচার করছেন। এবার মুক্তি দিন। ইতিহাস পড়ুন, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। আমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চাই।”

যেসব মামলায় অন্যরা জামিনে আছেন সেসব মামলায় খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্বের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে শুক্রবার।

বিএনপি নেত্রীর মুক্তির ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রিজভী

তিনি বলেন, “এই প্রক্রিয়াটি মঞ্চস্থ করতে সম্পূর্ণ দলীয়করণের মাধ্যমে প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সরকার। পৃথিবীর ইতিহাসে একজন সম্মানিত ৭৩ বছর বয়সী জনপ্রিয় নেত্রীকে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় জ্বলে-পুড়ে এমনভাবে সাজানো মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়ার কোনো দৃষ্টান্ত আর নেই।”

জামিন নিয়ে টালবাহানার দৃষ্টান্ত হিসেবে ২০১৫ সালে কুমিল্লায় বাসে পেট্রোল বোমা হামলা মামলার প্রসঙ্গ টানেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, “কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দুটি মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে। মামলা দুটির মধ্যে একটি মামলায় হাই কোর্ট গত ২৭ জানুয়ারি দেশনেত্রীকে স্থায়ী জামিন দিয়েছেন। নিম্ন আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই জামিন দেওয়া হয়। অপর মামলায় জামিন মঞ্জুর বা নামঞ্জুরের বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রেখে বিলম্বিত করা হয়েছে।

“সেই একই ঘটনার অপর মিথ্যা মামলায় গত সোমবার বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন কুমিল্লার আদালত। সেই সঙ্গে মামলাটির অভিযোগপত্র গঠনের জন্য আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। বিম্ময়ের ব্যাপার হলো এই যে, এই মামলায় ৭৭ আসামির মধ্যে ইতোমধ্যে তিনজন মারা গেছেন, পাঁচজনকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, বাকি ২৯ জনের সবাই জামিনে আছেন শুধু বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া।”

কারাগারে থেকে খালেদা জিয়া প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করেন রিজভী।

“চোখে প্রচণ্ড ব্যথা, তার পা প্রায় ফুলে গেছে। অথচ তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।”

খালেদা জিয়ার অনিচ্ছায় কারাগারের ভেতরের আদালতে বিভিন্ন মামলার শুনানিতে তাকে ‘জোর করে’ হাজির করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা।

কারাবন্দি বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আসলাম চৌধুরী, ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরফত আলী সপু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শহিদুল ইসলাম বাবুল, রফিক শিকদার, শেখ মোহাম্মদ শামীম, হয়রত আলী, আবুল হোসেন বককর, মিয়া নুর উদ্দিন অপু, মনোয়ার হোসেন, একরামুল হক বিপ্লবসহ নেতা-কর্মীদেরও মুক্তির দাবি জানান রিজভী।

সিইসির সমালোচনা

আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচন একাদশ সংসদ  নির্বাচনের মতো ‘সুষ্ঠু’ হবে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে ‘প্রতারণামূলক’ বলেছেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, “তার এই বক্তব্য হাসি-কান্না সব কিছুকে অতিক্রম করে গেছে। একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার আজ্ঞাবাহী হতে পারেন কিন্তু এতো নির্লজ্জ হবেন, এতো বেহায়া হবেন এটা ভাবা যায় না। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, সচিব ছিলেন। আত্মা বিক্রি করেছেন করেছেন, কিন্তু এই ধরনের বেহায়াপনা করতে এটা খুব দুঃখের বিষয়।”

এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সিইসি আবার জাতির সঙ্গে একটি ‘প্রতারণা করার’ ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘কাদের সাহেব কী বলবেন?’

মহাজোটের শরিক দল জাসদের একাংশের নেতারা একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট ‘কারচুপির’ যে কথা বলেছেন, সেই বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের জবাব চেয়েছেন রিজভী।

তিনি বলেন, “২৯ ডিসেম্বর ভোট ডাকাতি হয়ে গেল, লুটপাট হয়ে গেল। এখন এই কথা মহাজোট সরকারের শরিক দল জাসদও বলছে যে, ২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোট ডাকাতি হয়ে গেছে, ব্যালট বাক্স পূর্ণ করা হয়েছে। এখন কী বলবেন ওবায়দুল কাদের সাহেব?”

প্রশাসনের কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তার জন্য ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগের রাতে অনেক জায়গায় ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরা হয়েছে বলে সম্প্রতি জাসদের একাংশের (আম্বিয়া) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু ও আবদুল আউয়াল খান উপস্থিত ছিলেন।