নাইকো মামলা: খালেদার উপস্থিতিতে মওদুদের শুনানি

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতির মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি অব্যাহত রয়েছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2019, 06:11 PM
Updated : 4 Feb 2019, 06:11 PM

সোমবার পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কারাগারে স্থাপিত এজলাসে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপস্থিতিতে শুনানি করেন মামলার অন্যতম আসামি ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ।

ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে এদিন ছিল অভিযোগ গঠনের শুনানির ষষ্ঠ দিন।

দুদকের এই মামলায় নিজের অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ। তার বক্তব্য শেষ না হওয়ায় বিচারক আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছেন।

দুর্নীতির দুটি মামলায় দণ্ড নিয়ে একমাত্র বন্দি হিসেবে ওই কারাগারে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদাকে বেলা ১২টা ৩৩ মিনিটে হুইলচেয়ারে করে আদালতে আনা হয়। তার সঙ্গে গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমও ছিলেন।

খালেদা জিয়া আদালতকক্ষে ঢোকার তিন মিনিট পর বিচারক এজলাসে উঠলে শুনানি শুরু হয়।

শুরুতে খালেদা জিয়ার পক্ষে মামলায় জব্দ করা আলামত, কেস ডকেট, মামলার অনুমোদনের কাগজপত্র চেয়ে আবেদনের উপর শুনানি করে আব্দুর রেজ্জাক খান।

তিনি বলেন, সার্টিফায়েড কপি পেলে যথাযথ বক্তব্য উপস্থাপন করব। আর ডকুমেন্ট পর্যালোচনার সুযোগ পাব। এরপর দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলাটি অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে আছে। ক্রিমিনাল রুলস অ্যান্ড অর্ডার মতে সার্টিফায়েড কপি দিতে হবে।

“উনারা কোনো আবেদন করবেন না। ১২ বছরেও দরখাস্ত করেননি। আজকে দরখাস্ত দিয়েছেন কপি প্রদানের জন্য। এমতাবস্থায় মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত করতে এবং ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টার জন্য কপির আবেদন করা হয়েছে। পেপার ছাড়া তারা ম্যাডাম খালেদা জিয়ার মামলা করতে আসছেন। তাই আবেদনটি নামঞ্জুর করা হোক।

এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবা বলেন, “আমরা চার্জশিট, আলামত দেওয়ার জন্য দরখাস্ত দিয়েছি।”

বেলা ১টা ১৫ মিনিটের দিকে এ বিষয়ে শুনানি শেষে পরে আদেশ দেবেন বলে জানান বিচারক।

এরপর বিচারক মওদুদ আহমদকে অভিযোগ গঠনের শুনানি করতে বলেন।

আধা ঘণ্টাকাল শুনানিতে ১টা ১৬ মিনিটে মওদুদ আহমদ চার্জ শুনানি শুরু করেন। ১টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত নিজের পক্ষে শুনানি করেন।

শুনানিতে আইনজীবী হিসেবে মওদুদ বলেন, “যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিচার হচ্ছে না, বিচার হচ্ছে আমাদের। আওয়ামী লীগ সরকারই নাইকোর সঙ্গে চুক্তি করেছিল। আমরা শুধু ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছি। যারা করেছে তারা আজ আসামির বাইরে।”

বিচারক আসামি সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেনকে শুনানির জন্য বললে তার আইনজীবী অসুস্থ থাকায় সময়  চাওয়া হয়। তখন বিচারক সময় দেন এ আসামিকে।

এ সময় খন্দকার শহীদুল ইসলামের পক্ষে তার আইনজীবী সময় চাইলে আদালত তা নাকচ করে তার পক্ষে অব্যাহতির শুনানির কার্যক্রম শেষ হয়েছে বলে আদেশ দেন।

এদিকে খালেদার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন তার নেত্রীর সঙ্গে মামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য সময় চাইলে আদালত তাতে সায় দেন। আদালতের কার্যক্রম শেষে খালেদার আইনজীবীরা তার সঙ্গে কথা বলেন।

তবে আদালতের কার্যক্রম চলাকালে খালেদাকে তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে।

বেলা ২টার কিছু পরে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

এই মামলাটিতে এখনও খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি শুরু হয়নি।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে তুলে দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক।

খালেদা জিয়া ছাড়া মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী মওদুদ আহমদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

২০১৭ সালে এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরুর পর খালেদা জিয়া ও মওদুদ আহমদ ছাড়া বাকি সবার অব্যাহতির আবেদনের শুনানি আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করতে না পারায় এবং মওদুদের সময়ের আবেদনে এ শুনানি প্রায় এক বছর আটকে ছিল।