বঙ্গবন্ধুর কথা মেনে চলুন: আওয়ামী লীগকে কামাল

আওয়ামী লীগের দেশ পরিচালনার সমালোচনা করে তাদের বঙ্গবন্ধুর কথা মেনে চলার আহ্বান জানালেন দলটি ছেড়ে আসার পর এখন বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে চলা কামাল হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2019, 03:30 PM
Updated : 3 Feb 2019, 03:30 PM

গণফোরাম সভাপতি কামাল রোববার এক আলোচনা সভায় বলেন, “আমরা সাধারণত বিরোধী দল হিসেবে সরকারকে ধোলাই করি। আজকে আমি সেটা করব না।”

এরপর তিনি দেশে ‘গণতন্ত্রহীন’ পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, “আমি কথা বলছি সংবিধানে দেখে। সেখানে যে কথাগুলো আছে আমি এটা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, সরকার এটাকে বির্তকের মধ্যে টানতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত কথাকে সরকার অমান্য করতে পারে না।”

বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী কামাল দুই যুগ আগে আওয়ামী লীগ ছাড়ার পর এবার তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছিলেন।

নির্বাচনে ভরাডুবির পর তিনি কারচুপির অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলেছেন।

রোববারের আলোচনা অনুষ্ঠানে কামাল নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “যদি নির্বাচনে গলদ থাকে, নির্বাচন বিতর্কিত হলে, সেখানে একটা সমস্যা সৃষ্টি অবশ্যই হয়। আমরা সেটা দেখেছি।

“আজকে তো ৪৮ বছর হতে চলেছে। ২০২১ সালে ৫০ বছর হবে। এখন থেকে দুই বছরের মধ্যে আমাদের সবাইকে নাগরিক হিসেবে সতর্ক ও সচেতনভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে, যাতে এখানে যে সরকার দায়িত্ব ভোগ করবে, তারা যেন সংবিধানের ভিত্তিতে সেই দায়িত্ব নেয় এবং সংবিধানে যে দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে, সেটা পালন করে।”

জাতির জনককে স্মরণ করে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত সংবিধানে রয়েছে এক নম্বর, দেশে কার্যকর গণতন্ত্র থাকতে হবে।

“কার্যকর গণতন্ত্র মানে নামকাওয়াস্তে গণতন্ত্র নয়। কার্যকর গণতন্ত্রের অর্থ হল আপনারা সকলে অনুভব করবেন যে আমরা তো মালিকের মতো ভূমিকা রাখতে পারছি, আমাদের কথাকে দাম দেওয়া হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হবে। অর্থাৎ নির্বাচনকে গুরুত্ব দিতে হবে। গণতন্ত্র চলতে পারে না যদি ফ্রি স্টাইলে লুটপাট হতে থাকে।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে কামাল বলেন, “সংবিধানে উল্লেখ আছে, দেশের পুলিশ বাহিনী আইন মেনে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। সংবিধানে স্পষ্টভাবে লেখা আছে জনগণ ক্ষমতার মালিক, পুলিশ নয়।

“আমি আজকে কোনো বিরোধের কথা বলতে চাই না। আমি আজকে ঐকমত্যের কথা বলতে চাই এবং সেই ঐকমত্য হল পুলিশ পুলিশ হিসেবে তাদের দায়িত্ব করবে।

“তাদেরকে আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলাকে রক্ষা করা, জনগণকে রক্ষা করা, জনগণের অধিকারকে রক্ষা করা। জনগণকে কোনোভাবে আক্রমণ না করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দায়িত্ব পালন করা।”

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি যে কথাগুলো বলছি, সেটা বঙ্গবন্ধুর কথা, উনার স্বাক্ষরিত দলিলের কথা। উনি বলেছেন জনগণ ক্ষমতার মালিক। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথাগুলো উনি সংবিধানে দিয়ে গেছেন। আমাদের উপর দায়িত্ব দিয়ে গেছেন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে।

“আমি তো মনে করি বঙ্গবন্ধুর কথা সকলকে মানতেই হবে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে মানতে হবে। তার কথার ওপরে কেউ নেই।”

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিকের একাদশ মৃত্যুবার্ষিকীতে মতিঝিলে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কামাল।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রয়াত নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

গণফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক মোশতাক আহমেদের পরিচালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দলের নির্বাহী সভাপতি মফিজুল ইসলাম কামাল, সুব্রত চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, আ ম সা আ আমিন, মুকাব্বির খান, কেন্দ্রীয় নেতা আ ও ম শফিক উল্লাহ্, সাইদুর রহমান সাঈদ, আবদুল মোমিন চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম পথিক, খান সিদ্দিকুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন চুন্নু প্রমুখ।