গত পাঁচ বছর শেখ হাসিনার সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী মেনন অনুযোগ করেছেন, এবার একাদশ সংসদে তাদের ভূমিকার বিষয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি জোটে।
দেড় যুগ আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ১৪ দল গঠনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গাঁটছাড়া বাঁধে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ কয়েকটি বাম দল।
২০০৮ সালের নির্বাচন তারা একসঙ্গে করে, নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের সময় মন্ত্রী করেন সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়াকে। পরে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকেও নেন মন্ত্রিসভায়।
ওই মেয়াদের শেষ সময়ে শেখ হাসিনার তিন মাসের ‘নির্বাচনকালীন সরকারে’ স্থান পান মেনন। পরে ২০১৪ সালের বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনা জোটের সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করেন, মেননও তাতে জায়গা পান।
এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটে এলেও তারা মাত্র আটটি আসনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ তাদের জোটসঙ্গী সব দলকেই বিরোধী দলে ঠেলে দিয়েছে।
মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টি মন্ত্রিত্ব বাদ দিয়ে আগের মতো প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসতে গাইগুঁই করে রাজি হলেও ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা স্পষ্ট আপত্তি জানিয়ে আসছিল।
বুধবার একাদশ সংসদের অধিবেশন শুরুর দিন নবনির্বাচিত স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারকে ধন্যবাদ দিতে দাঁড়িয়ে ওই প্রসঙ্গ তোলেন মেনন।
তিনি বলেন, “একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমরা আনন্দিত। তবে, এই আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে আমরা একটু বিব্রতও বটে। আজকে ঢোকার মুখেও (সংসদে প্রবেশের সময়) আমাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। জানতে চেয়েছে সংসদে আপনাদের অবস্থান কী হবে?
“এই সংসদে সরকারি দল যেমনি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের হবে, তেমনি বিরোধী দলও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের হবে। কিন্তু বিষয়টিকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত যেটা দাঁড়িয়ে গেছে.. আমাদের বলা হচ্ছে আপনারা কেন বিরোধী দলে গিয়ে বসছেন না।”
এবার তিনটি আসনে জয়ী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন বলেন, সংসদে তাদের অবস্থান নিয়ে জোটে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি।
“বিষয়টি নিয়ে তো আমাদের কেউ জিজ্ঞাসা করবে, প্রশ্ন করবে বা আলোচনা করবে, কিন্তু তা হয়নি। মনে হয় এই সিদ্ধান্ত, বলা হচ্ছে সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে।”
এই অবস্থায় সংসদে নিজেদের অবস্থান কী হবে- তা তুলে ধরে এই বাম নেতা বলেন, “আমরা সরকারের সকল উন্নয়ন কাজের প্রশংসা করব। সাথে সাথে ত্রুটি-বিচ্যুতি যা থাকবে, সেটার যদি বিরোধিতার প্রয়োজন হয়, তা অবশ্যই করব।”
এই প্রসঙ্গে আগে সরকারি দলে থেকেও সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বিলে দুটি বিষয়ে বিরোধিতা করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন মেনন।
তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে এখানে বসছেন, অবশ্যই শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে তারা অংশগ্রহণ করবেন। আমরা সকলে মিলে একসঙ্গে এগিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে স্পিকারের সুদৃষ্টি বিশেষ প্রয়োজন।”
মেননের মতোই নতুন ভুমিকায় আসা জাসদের সভাপতি ইনু বলেন, “সংসদকে প্রাণবন্ত ও সক্রিয় করতে আমরা চেষ্টা করব।”