বিআরটিসির কার কত ‘ইনকাম’, ভালোই জানি: মন্ত্রী

রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘অনিয়ম-দুর্নীতি’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2019, 11:46 AM
Updated : 22 Jan 2019, 11:51 AM

বিআরটিসিতে নতুন গাড়ি আনার ‘কিছু দিনের মধ্যে’ সেগুলো জরাজীর্ণ হওয়া নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

ব্যক্তিস্বার্থে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি যেন আর করা না হয় সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করেছেন মন্ত্রী। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে সংস্থার চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী।

মঙ্গলবার মতিঝিলে বিআরটিসি কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিআরটিসির মধ্যে খুব একটা সুনামের বিষয় নেই। এখানে অনিয়ম দুর্নীতির জঞ্জাল দীর্ঘদিন ধরে বাসা বেঁধে আছে।”

ভারতীয় ঋণের অর্থে দেশটি থেকে বিআরটিসির জন্য ৬০০ বাস ও ৫০০ ট্রাক আনা হচ্ছে। এরমধ্যে প্রথম চালানের প্রথম কিস্তিতে চারটি এসি বাস এবং ২৫টি ট্রাক দেশে এসে পৌঁছেছে। এই মাসেই আরও গাড়ি আসছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

নতুন গাড়ি আসাটা জনগণের জন্য স্বস্তির খবর হলেও বিআরটিসির অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য তা নিয়ে খুব আশাবাদী হতে পারছেন না ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “নতুন গাড়ি আসছে, মানুষ স্বস্তি পাবে, নতুন আশা। কিন্তু এই গাড়িগুলো কতদিন টিকবে তা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে।”

নিজের এই অবস্থানের কারণ ব্যাখ্যায় মন্ত্রী বলেন, এর আগেও গাড়ি এসেছে, এইসব গাড়ি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ‘ভীষণ বাজে অবস্থা’।

তিনি বলেন, “নানা ধরনের অনিয়ম এখানে। এই নগরীতে হঠাৎ একটা বিআরটিসিতে আমি যখন উঠি তখন দেখি সিটের ‘ছাল-বাকল’ উঠে গেছে, এসি কাজ করে না- এই অবস্থা দীর্ঘ দিন ধরে। বাইরে থেকে গাড়ির দিকে তাকানো যায় না। নোংরা ময়লা আবর্জনা। গাড়ি আসবে গাড়ির কোনো যত্ন নেই, কয়দিন পরে ডাম্পিং হয়ে যাবে।

“অত্যাধুনিক গাড়ি আসবে, কিছু দিন পরে দেখা গেল এই গাড়ি জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। কিছু দিন পরে দেখা গেল বডি খুলে খুলে পড়ছে, জোড়া তালি দিয়ে চালানো হচ্ছে, কেন এমন হয়?”

এর জন্য বিআরটিসির কর্মীদের দুর্নীতি ও আন্তরিকতার অভাবকে দায়ী করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করে, যদি প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের ভালোবাসা না থাকে, তাহলে দেশের প্রতি তাদের ভালোবাসা আছে সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। নিজেদের পকেটের উন্নয়নে বিআরটিসিকে ব্যবহার করে।”

সবাইকে সতর্ক করে মন্ত্রী বলেন, “যারা বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্বে আছেন, কার কত ইনকাম আমি ভালো করে জানি। কীভাবে ইনকাম হয় তাও জানি।”

কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে গাড়ি আনায় দেশের মানুষ কী সুফল পায়, তা ভেবে দেখার সময় হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নতুন গাড়ি যাতে ‘সঠিক ব্যক্তির’ হাতে দেওয়া হয় সেদিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “বিআরটিসির গাড়িগুলো মেরামতের অভাবে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকালে নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই চেয়ারম্যান সাহেব আনন্দের খবর গাড়ি আসছে, কিন্তু এই গাড়িগুলোর ম্যানেজমেন্ট, রক্ষণবেক্ষণ কীভাবে হবে? কারা এই গাড়িগুলো চালাবে, এটা এখন থেকে ঠিক করতে হবে।

“সঠিক ব্যক্তির হাতে দায়িত্ব না পড়লে বিআরটিসির আগের পরিণতিই হবে। মাঝে মাঝে আমি হতাশ হই, যখন আমি পরিদর্শনে যাই তখন আমি হতাশ হই, কেন এমন হয়?”

আগামী এপ্রিলের মধ্যেই ১১০০ নতুন গাড়ি বিআরটিসিতে যুক্ত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব গাড়ির মধ্যে ৩০০ দ্বিতল ও ৩০০ সিঙ্গেল ডেক বাস রয়েছে। বাসের মধ্যে ২০০ এসি ও ১০০ নন-এসি আসবে। আর ৫০০টি ট্রাক আসবে। ট্রাক থেকে কিছুটা লাভজনক অবস্থা বিআরটিসিকে দিচ্ছে, যেটা যাত্রীবাহী বাস থেকে আমরা পাচ্ছি না।”

বিআরটিসির যেসব বাস অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া আছে, তার হিসাব চান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “যেসব গাড়ি বিভিন্ন জায়গায় লিজ দেওয়া আছে সেগুলোর হিসাব দিতে হবে। কার কার কাছে আছে, কত বছর যাবৎ আছে, কিসের বিনিময়ে আছে- এগুলো জানা দরকার।”

এখন নতুন রুটে গাড়ি দেওয়া হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “রুট আবার অদৃশ্য ইশারায় এদিক সেদিক হয়ে যাবে।”

সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে তা তাড়াতে হবে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “এখন যাত্রা শুরুতে প্রথম রাতে বিড়াল মারতে হবে, কোনো আপোস করা যাবে না। খারাপ অফিসারদের বাদ দিয়ে দিতে হবে। যারা দুর্নীতির সাথে বিআরটিসিকে সমার্থক করে ফেলেছে তাদের এখানে থাকার কোনো অধিকার নেই। ‘জিরো টলারেন্স’ দিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।

“তা না হলে কোটি কোটি ডলার খরচ করে বিদেশ থেকে গাড়ি এনে জনস্বার্থের কোনো উপকার হবে না। সাময়িক একটা স্বস্তি দেওয়া যাবে। এই ১১০০ গাড়ির পরিণতি যেন এর আগের আমদানি করা গাড়ির মতো না হয়, এই ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।”