ঐক্যফ্রন্ট না টেকারই কথা: কাদের

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিকে নিয়ে গড়ে ওঠা কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য ‘টিকবে না’ বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2019, 08:32 AM
Updated : 18 Jan 2019, 12:07 PM

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভাবনীয় বিজয় উদযাপনে অনুষ্ঠেয় ‘বিজয় সমাবেশ‘ এর প্রস্তুতি দেখতে শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, "আমাদের রাজনীতির অভিজ্ঞাতা থেকে দেখেছি, ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্যেই ভাঙার উপাদান ছিল। সেই ফ্রন্ট না টেকারই কথা। তাছাড়া যেখানে বিএনপিতে ভাঙ্গার সুর ধরেছে সেখানে ঐক্যফ্রন্ট তো ভাঙবেই।"

সেই ‘ভাঙার উপাদান’ কোনটি?

সেতুমন্ত্রী কাদের বলছেন, ‘সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক শক্তির’ ঐক্য টেকসই হয় না।   

একাত্তরে বাংলাদেশের বিরোধিতায় যুদ্ধাপরাধে নেতৃত্ব দেওয়া জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার আহ্বানে কখনও সাড়া দেননি বিএনপি নেতারা। বরং উল্টো যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তারা সমালোচনাও করেছেন। 

সেই বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে গতবছর অক্টেবরে সাবেক কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা যখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা একে ‘সাম্প্রদায়িক জোট’ আখ্যায়িত করেছিলেন।

জোটের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন সে সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে কোনো ‘বৃহত্তর ঐক্যে’ তিনি যাবেন না।

কিন্তু নির্বাচনের সময় দেখা গেল, নিবন্ধন হারানো জামায়াতের ২২ জন প্রার্থী এবার ভোট করছেন বিএনপির মনোনয়নে ধানের শীষ নিয়ে। ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিকরাও একই প্রতীকে ভোট করছেন এবার।

ভোটের প্রায় দুই সপ্তাহ পর শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কামাল ‘ভুল স্বীকার’ করে বলেন, “আমি বলেছি যে, ভাই এটা তো আমার জানাই ছিল না। তখন ওরা (বিএনপি) বললো না যে জামায়াতের ২৫ জন না কত .., আমি যখন এখানে সম্মতি দিয়েছি, সেটা আমাকে জানানো হয় নাই। আমরা মতে সেটাও একটা ভুল করা হয়েছে।”

তার ওই স্বীকারোক্তির পর থেকেই ঐক্যফ্রন্টে টানাপড়েনের খবর আসতে শুরু করে সংবাদ মাধ্যমে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার জোটের স্টিয়ারিং কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বিএনপির কেউ না থাকায় গুঞ্জন আরও জোরালো হয়ে ওঠে। 

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু অবশ্য টানাপড়েনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, যে অবস্থায় ঐক্যফ্রন্টের সূচনা হয়েছিল, এখনও সে জায়গাতেই আছে। জোটে কোনো বিষয়ে ‘দ্বিমত নেই’।

গত ৩০ ডিসেম্বরে নির্বাচনে বড় জয় পেয়ে ইতোমধ্যে টানা তৃতীয়বারের মত সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। আর মাত্র আটটি আসন পাওয়া ঐক্যফ্রন্ট নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার দাবি তুলেছে। তাদের বিজয়ী প্রার্থীরা এখনও শপথও নেননি।

এ অবস্থায় আগামী উপজেলা নিবার্চনে বিএনপিকে আনতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যাগ নেওয়া হবে কি না- তা ওবায়দুল কাদেরের কাছে জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি বলেন, “গণতন্ত্রকে গুরুত্ব দিলে বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে নিজে থেকেই আসবে। জাতীয় নিবার্চনে যেমন তারা এসেছে, সেভাবেই আসবে। জাতীয় নিবার্চনে বিএনপিকে ডেকে আনা হয়নি, উপজেলা নিবার্চনেও হবে না।"

গত নির্বাচনে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের বিজয় উৎসব স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ ঘটবে বলেই তারা আশা করছেন। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, "এটা আওয়ামী লীগের ও শেখ হাসিনার সততার ফসল। সারা দেশ থেকে মানুষের ঢল নামবে।"

বিজয় সমাবেশ থেকে সরকারের কী বার্তা আসবে, তারও একটি ধারণা দেন সেতুমন্ত্রী কাদের।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের বিশাল বিজয়ের পর সরকার তিনটি বিষয়ে খুব কঠোর আছেন, এবার বিজয় সমাবেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুনীর্তি বিরুদ্ধে সরকার আরো কঠোর হতে বলবেন।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গির কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায়, সদস্য এস এম কামাল হোসেন ও মির্জা আজম এ সময় কাদেরের সঙ্গে ছিলেন।