একসাথে ভোট করলেও শরিক দলের নেতাদের বাইরে রেখে মন্ত্রিসভা গঠনের পর তাদেরকে বিরোধী দলে বসানো নিয়ে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার কাদেরের কাছে বিষয়টি নিয়ে তাদের অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।
জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, “সংসদে তারা বিরোধী দলের আসনে বসলে এবং দায়িত্বশীল বিরোধিতা যদি করেন সেটা সরকারের জন্য ভালো এবং তাদের জন্যও ভালো।”
একাদশ নির্বাচনে অভাবনীয় বিজয় উদযাপনে আগামী শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। ওবায়দুল কাদের তারই প্রস্তুতি দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তার কথা হয় সাংবাদিকদের সঙ্গে।
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে মহাজোট গড়ে অংশ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ, যেখানে ১৪ দলীয় জোটের বাইরে জাতীয় পার্টি (জাপা), জাতীয় পার্টি (জেপি), বিকল্প ধারা অংশ নিয়েছিল।
নির্বাচনে মহাজোট ৩০০ আসনের ২৮৮টিতেই জিতেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগই এককভাবে পেয়েছে ২৫৭টি আসন। বিপরীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জিতেছে মাত্র আটটি আসনে।
২২ আসনে বিজয়ী এইচ এম এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি গতবারের মতোই এবারই বিরোধী দলের আসনে বসছে। জাতীয় পার্টিসহ শরিক দলের কোনো নেতারই এবার শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি।
এ অবস্থায় জোটশরিক অন্য দলগুলোর নেতাদেরও আওয়ামী লীগ বিরোধীদলের আসনে বসাতে চাইলেও তাতে আপত্তি রয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জেপি, তরীকত ফেডারেশনের নেতাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “তারা তো বিরোধী দলে থাকবেন বলে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমার মনে হয়, তারা বিরোধী দলে থাকলে তাদের জন্য ভালো, আমাদের জন্য ভালো।”
চৌদ্দ দলের নেতারা বিরোধী ভূমিকা পালন করুক, আওয়ামী লীগ তেমনটা চায় কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “তারা যদি সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে এবং বিরোধী কণ্ঠ যত কনস্ট্রাকটিভ হয়ে পার্লামেন্টে থাকবে, ততই সরকারি দল কোনো ভুল করলে সে ভুলটা সংশোধন করতে পারবে। কারণ বিরোধী দল না থাকলে তো একতরফা কাজ চলবে।
“বিরোধী দল থাকলে বিরোধিতা থেকে সরকারের কিছু শিক্ষণীয় বিষয় থাকবে। সমালোচনা থেকে শুদ্ধ হতে পারবে। সমালোচনা তো মানুষকে শুদ্ধ করে। সমালোচনা থেকে যদি কোনো ভুল হয়, তাহলে সে ভুল শুদ্ধ করতে পারবে।”
চৌদ্দ দলের সঙ্গে কোনো টানাপড়েন নেই বলেও দাবি করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, “১৪ দলীয় ঐক্যজোট একটি রাজনৈতিক জোট। নির্বাচনী জোট আর রাজনৈতিক জোট ভিন্ন জিনিস। ১৪ দলের সাথে আমাদের যে সম্পর্ক সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক জোটের সম্পর্ক। মহাজোট নামের যে বৃহত্তর জোট সেটা কিন্তু নির্বাচনী ঐক্যজোট। যেহেতু ১৪ দলের সাথে আমাদের সম্পর্ক রাজনৈতিক, কাজেই তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক থাকবেই।
জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে ছুটির দিনে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। মাঝে একদিন বাকি। মঞ্চ সাজসজ্জার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশে বিভিন্ন শাখা এবং পার্টির নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। একটি বিশাল বিজয় সমাবেশ হবে।”
এসময় বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমালোচনাও করেন ওবায়দুল কাদের।
“বিএনপির আসলে এখন লেজেগোবরে অবস্থা। তাদের ঐক্যফ্রন্টে এখন ভাঙনের সুর। তাদের দেখে মাঝে মাঝে ভয় হয়- বেপরোয়া ড্রাইভার যেমন দুর্ঘটনার কারণ, রাজনীতিও দুর্ঘটনার কারণ। ফখরুল সাহেবের ইদানিংকালের আচার-আচরণ দেখে তাকে এতটাই ভয়ঙ্কর ড্রাইভার মনে হচ্ছে এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের কথাবার্তায়ও একই সুরের ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে।
“আমরা অতি সহিষ্ণুতার সাথে বিষয়টি দেখছি। কেননা তাদের হেরে যাওয়ার একটি বেদনা আছে, কষ্ট আছে। সেই কষ্ট থেকেই তারা বেপরোয়া হতে পারে, কিন্তু আমরা সরকারি দল, আমরা দেশ চালাচ্ছি, আমাদের একটি দায়িত্ব আছে। বিশাল একটা বিজয়ের সাথে বিশাল একটা দায়িত্ব আমাদের আছে। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমাদের নেত্রী আগামী শনিবার জনগণের উদ্দেশ্যে, আমাদের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে, আমাদের দায়িত্ববোধের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন।”
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের প্রস্তুতি পরিদর্শনে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ।