মহিউদ্দিন সোহেলের হত্যা পরিকল্পিত, ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের দাবি

মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা মহিউদ্দিন সোহেলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক একদল নেতা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2019, 10:37 AM
Updated : 13 Jan 2019, 10:37 AM

নিহত মহিউদ্দিন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মাহমুদ হাসান রিপন-মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন কমিটির উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক ছিলেন। এর আগে ছিলেন চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, “ষড়যন্ত্রমূলক এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মহিউদ্দিন সোহেল। হত্যাকারীরা তাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, এখন তার নামে 

মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।  আমরা এ হত্যাকাণ্ড ও মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ারও জোর দাবি জানাই।”

তিনি আরও বলেন, “মহিউদ্দিন সোহেল দীর্ঘদিন ছাত্রলীগ এবং কেন্দ্রীয় রাজনীতির পাশাপাশি একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে 

প্রতিষ্ঠিত করেছেন।  তার জন্মস্থান পাহাড়তলীকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করার সংগ্রামের প্রথম কাজ হিসেবে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দিশারী ক্লাবকে পুনরায় সংগঠিত করেন গত বছর। স্থানীয় কয়েকটি মাদকের আখড়া ভেঙ্গে দেন।

“শুধু তাই নয়, স্থানীয় কাউন্সিলর সাবের সওদাগরের নেতৃত্বে-কর্তৃত্বে ও সাবেক জামায়াত নেতা বর্তমানে স্থানীয় জাতীয় পার্টি নেতা ওসমান খানের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা অনৈতিক ব্যবসার আখড়া ভেঙে দিয়ে এলাকাবাসীর জন্য জানাজার নামাজের মাঠ নির্মাণ করে দেন। এমনতর আরো 

অনেক জনকল্যাণকর উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে স্থানীয় ভূমিদস্যু, মাদক এবং অসামাজিক কার্যকলাপকারী ব্যক্তিদের রোষানলে পড়েন।”

ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু বলেন, “মূলত মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মহিউদ্দিন সোহেলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে একটি চক্র।

তিনি বলেন, “তার মতো এ রকম ভালো একটি ছেলের এ রকম পরিণতি হবে তা আমার ভাবতেও অবাক লাগে। মূলত পাহাড়তলী বাজার

ও আশপাশের এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতাধীন করার  উদ্যোগ, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত এলাকা করার ঘোষণা এবং তার লিজকৃত জমিতে

জানাজার মাঠ করার উদ্যোগ নেয়াই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে সেখানকার প্রভাবশালীদের বিরাগভাজন হয়ে ওঠেন তিনি। 

যার মূল্য দিতে হয় তাকে তার জীবন দিয়ে।”

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, সাবেক সহ-সভাপতি রাশেদুল মাহমুদ রাসেল, হাসানুজ্জামান লিটন, রফিকুল আলম গাফ্ফারী রাসেল, ফজলুল হক, আবু সাইদ, সাবেক যুগ্ম 

সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান টুটুল, জসিম উদ্দিন, রিপন পোদ্দার, মিজানুর রহমান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান শাহীন, 

সাবেক প্রচার সম্পাদক আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল, ঢাবি ছাত্রলীগ-এর সাবেক সভাপতি সোহেল রানা টিপু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব

বাদশা ও ওমর শরীফ, সাবেক সহ-সম্পাদক মফিজুল ইসলাম ঢালী, জুলফিকার আলী, শফিক আহমেদ, ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক 

সম্পাদক মোক্তারুল হাসান মিলটন, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মনির হোসেন, ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ফাহিম খান রনি ও মাসুম হাসান।

গত ৭ জানুয়ারি (সোমবার) সকালে পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজারের ব্যবসায়ীরা ‘চাঁদাবাজি’তে অতিষ্ঠ হয়ে ‘গণপিটুনি’ দিয়ে মহিউদ্দিন সোহেলকে মেরে ফেলে বলে পুলিশ ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছিল।

পরদিন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে মহিউদ্দিন সোহেলের পরিবার দাবি করে, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে।

এরপর সোহেলের ভাই শাকিরুল ইসলাম শিশির বাদী হয়ে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও দেড়শ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।

ওই মামলায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাবের আহম্মেদ ও জাতীয় পার্টির নেতা ওসমান খানকে প্রধান আসামি করা হয়।

মামলায় ওসমান খানসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।