নতুন মন্ত্রিসভার ‘সুনাম শুনতে’ পাচ্ছেন কাদের

টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৭ সদস্যের যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করছেন, চারপাশে তার ‘প্রশংসা শুনতে পাচ্ছেন’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2019, 08:10 AM
Updated : 7 Jan 2019, 08:10 AM

তিনি বলেছেন, ‘দলের প্রয়োজনেই’ মন্ত্রিসভা থেকে পুরনো অনেক ‘বড়’ নেতাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুনরা কতদিন থাকতে পারবেন, তা নির্ভর করবে তাদের কর্মদক্ষতার ওপর।

নতুন মন্ত্রিসভার শপথে আগে সোমবার সচিবালয়ে পুরনো মন্ত্রীদের শেষ কর্ম দিবসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ কথা বলেন কাদের।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম রোববার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ও দপ্তর ঘোষণা করেন। তাতে দেখা যায় গত সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী কাদেরকে নতুন সরকারেও একই দায়িত্বে রেখেছেন শেখ হাসিনা।

তবে ৪৭ সদস্যের এই মন্ত্রিসভায় পুরনো অনেকেরই স্থান হয়নি। আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মত প্রবীণ ও বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের বাদ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

নতুন সরকার তিনি সাজিয়েছেন মূলত নতুনদের নিয়ে। জোটের শরিক দল থেকেও কাউকে এবার সরকারে রাখা হয়নি। 

 সোমবার বিকালে বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ হবে। এ প্রেক্ষাপটে নতুন এই মন্ত্রিসভাকে জনগণ কীভাবে দেখছে, তা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের।

“এই যে পরিবর্তন..... নতুন সরকারের নতুন ভাবনা, নবীন প্রবীণের সমন্বয়ে ও বেশিরভাগ নিউ ফেইস নিয়ে যে মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে উপহার... এটা জনগণ কী চোখে দেখছে, কীভাবে নিচ্ছে... সেটা ভেরি ইমপর্টেন্ট।

“তবে বিষয়টা তারা ভালোভাবেই নিচ্ছে। এই মন্ত্রিসভার সুনামই শুনতে পাচ্ছি। এতে ফ্রেশ মুখ আসায় অনেকে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন টেলিভিশন টকশোতে প্রশংসা বেশি এসেছে।”

যারা এবার সরকারে ডাক পাননি, তাদের ব্যর্থ বলে মনে করেন না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, “এ সিদ্ধান্তটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এখানে বাদ পড়াটা আমি ঠিক ওভাবে বলতে চাই না। আমার মনে হয় বিষয়টা দায়িত্বের পরিবর্তন; সেভাবে দেখা যায়। তারা হয়ত পার্টিতে মনোনিবেশ করবেন, কারণ সরকারের মধ্যে দল যখন হারিয়ে যায়, তখন দলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন।”

বাদ পড়াদের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগানো হবে মন্তব্য করে কাদের বলেন, “সরকার এবং দলের আলাদা আলাদা স্বত্তা, সেটা যাতে বিকাশের সুযোগ পায়। একটা স্মার্ট আধুনিক সরকারের পাশাপাশি স্ট্রংগার স্মার্ট দল একটা যদি থাকে, তাহলে বলে ব্যাটে স্কোর করতে সুবিধা।”

ওবায়দুল কাদের মনে করেন, শেখ হাসিনা দলের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের ‘উপযোগী’ করেই মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন।

“ইশতেহার বাস্তবায়নে এই মন্ত্রিসভায় অভিজ্ঞ অনেকে আছে। এনার্জি, ট্র্যাডিশন, টেকনোলজি আর নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে ফাইন ব্যালেন্স করে আমাদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সহজতর হবে।”

তবে মন্ত্রীদের দক্ষতার ওপরই যে নতুন সরকারের সাফল্য ব্যর্থতা নির্ভর করবে, তা স্বীকার করছেন ওবায়দুল কাদের।

“নতুন মন্ত্রীরা যখন কাজে মনোনিবেশ করবেন, তারা যখন দায়িত্ব পালন করবেন, তখন তাদের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে, প্রমিজের উপর তারা কতটা ডেলিভারি করতে পারে, সেটার উপর নির্ভর করবে সাফল্য ব্যর্থতা। প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার মিল কতটুকু তখন জানা যাবে।”

যেসব এলাকা থেকে দীর্ঘদিন কেউ মন্ত্রিসভায় আসতে পারেননি, এবার সরকার গঠনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সেসব জেলায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

শরিক দল থেকে কাউকে সরকারে না রাখার সিদ্ধান্ত কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলে কাদের বলেন, “শরিক দল তো আমাদের সাথে আছে, থাকবে। মন্ত্রী না হলে থাকবে না সে রকম তো কথা না। এ মুহূর্তে প্রথম মন্ত্রিসভা গঠিত হল, ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারণ হতে পারে, এগুলো তো হবেই… ৫ বছর অনেক সময়।

“এখন যারা আছেন তারাই স্থায়ী তা মনে করার কারণ নেই। এটা সময়ে সময়ে চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তনও হতে পারে।”

নতুনদের বেশি প্রাধান্য দেওয়ায় দলে কোনো অসন্তোষ থাকছে কিনা জানতে চাইলে কাদের বলেন, “আমাদের দলে এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে ঐক্য অনেক বেশি দৃঢ় ও শক্তিশালী। এটি নিয়ে আমাদের দলে কোনো অসন্তোষ বা ফাটল ধরার কারণ নাই। আমাদের সময়ে সময়ে সম্মেলন হয়, দলের মধ্যে দায়িত্বের পরিবর্তন আসে।”

গতবার একইসঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টি এবার মন্ত্রিসভায় না আসায় সরকার ও বিরোধী দল- দুই পক্ষের জন্যই ‘ভালো হয়েছে’ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতা কাদের।

তিনি বলেন, “স্ট্রং বিরোধীদল থাকা দরকার। আসলে পাঁচমিশালীভাবে থাকার চেয়ে এটাই ভালো। অপজিশন রোলটা প্লে করলে গণতন্ত্রের সুশাসনের জন্য ভালো।”