আমরা শপথ নিচ্ছি না: ফখরুল

একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করা বিএনপির নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2019, 08:36 AM
Updated : 3 Jan 2019, 11:51 AM

এবারের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের নিয়ে এক ‘জরুরি’ বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে ফখরুলের এ ঘোষণা আসে। 

বেলা ১১টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যখন এই বৈঠক শুরু হয়, ঠিক ওই সময়ই জাতীয় সংসদে শুরু হয় একাদশ সংসদে নির্বাচিতদের শপথ অনুষ্ঠান।

গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিএনপির পাঁচজন এবং তাদের জোটের শরিক গণফোরামের দুইজন নির্বাচিত হলেও তারা কেউ শপথ নিতে যাননি। 

কারচুপির অভিযোগ তুলে পুননির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিতরা যে বৃহস্পতিবার শপথ নিচ্ছেন না, সে ইংগিত তাদের কর্মসূচি থেকেই মিলেছিল।

কিন্তু প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে শপথ নেওয়ার সুযোগ থাকায় তারা পরে শপথ নিতে পারেন বলেও গুঞ্জন ছিল। গুলশানে প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকের পর সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দেন মির্জা ফখরুল।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “শপথ তো পার হয়ে গেছে, প্রত্যাখ্যান করলে শপথ থাকে নাকি আর?... আমরা শপথ নিচ্ছি না, পরিষ্কার করে বললাম।”

মির্জা ফখরুল জানান, সারাদেশে নির্বাচনের দিন ‘অনিয়মের’ বিভিন্ন অভিযোগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচনের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি নিয়ে বিকালে নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

এছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সব প্রার্থী আলাদাভাবে নির্বাচনের অনিয়ম ও কারচুপির বিষয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করবেন বলে জানান তিনি।

৩০ ডিসেম্বর ওই ভোটে বিএনপি ৫টি আসনে এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরাম দুটি আসনে জয়ী হতে পেরেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২৫৭ আসন, জোটগতভাবে তাদের আসন সংখ্যা ২৮৮। এই নিরঙ্কুশ জয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে যাচ্ছে।

ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন ভোটের পর ফল প্রত্যাখ্যান করে অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচন দেওয়ার দাবি জানালেও সিইসি নূরুল হুদ পরদিন নাকচ করে বলেন, পুনঃভোটের কোনো সুযোগ নেই।  

এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকালে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঐক্যফ্রন্ট। মির্জা ফখরুল বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে অবহিত করেন।

আর বিএনপির পক্ষ থেকে তাদেরে প্রার্থীদের বেলা ১১টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে বিএনপি থেকে নির্বাচিত পাঁচজনসহ মোট ১৭৮ জন অংশ নেন। তবে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুজন বৈঠকে ছিলেন না।

বৈঠকের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে রওনা হন স্মারকলিপি দিতে।

সারা দেশে তিনশ আসনের মধ্যে এবার ২৯৮ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। এছাড়া চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির অলি আহমেদ নিজের দলের প্রতীক ‘ছাতা’ এবং কক্সবাজার-২ আসনে জামায়াতে ইসলামীর হামিদুর রহমান আযাদ স্বতন্ত্র হিসেবে ভোট করেন।

বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে বগুড়া-৬ আসনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন, ঠাকুরগাঁও-৩ আসেন জাহিদুর রহমান, চাঁপাই নবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম ও চাঁপাই নবাবগঞ্জ-২ আসেন হারুনুর রশীদ জয়ী হন।

আর গণফোরামের প্রার্থীদের মধ্যে সিলেট- ২ আসনে মোকাব্বির খান ও মৌলভীবাজার-২ আসনে সুলতান মো. মনসুর জয় পান।

খালেদা জিয়ার আসন বগুড়া-৭ এ বিএনপি যাকে বিকল্প প্রার্থী করেছিল, তার প্রার্থিতা আদালতে বাতিল হয়ে যায়। ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করীমকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছিল, তিনিও বিজয়ী হন।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি ছাড়াও জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, খেলাফত মজলিশ, এনপিপি, লেবার পার্টির প্রার্থীরা থাকলেও জামায়াত ইসলামীর কেউ ছিলেন না। গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুজনও ছিলেন অনুপস্থিত।  

ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধরী, শাহজাহান ওমর, মিজানুর রহমান মিনু, আমিনুল হক, আবদুস সালাম, শাহজাহান মিয়া, ভিপি জয়নাল আবেদীন, হারুনুর রশীদ, আসাদুল হাবিব দুলু, আনোয়ারুল আজীম, শামা ওবায়েদ, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, গৌতম চক্রবর্তী, আলমগীর কবির, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, সুলতান মাহমুদ বাবু, রফিকুল ইসলাম হিলালী, শরীফুল আলম, জালাল উদ্দিন, আজিজুল বারী হেলাল উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

আরও ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, জিএম সিরাজ, সাখাওয়াত হোসেন বকুল, জহিরউদ্দিন স্বপন, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জাহিদুর রহমান, অরুণ মেহেদি, সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিকী, নবী উল্লাহ নবী, মোরশেদ মিল্টন, পারভেজ আরেফীন সিদ্দিকী, রুমানা মাহমুদ, আমিনুল ইসলাম আলিম, সেলিম রেজা হাবিব, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, সৈয়দ ফয়সল আহমেদ চৌধুরী, মিজানুর রহমান, জি কে গউছ, আবু তাদের তালকুদার, কায়সার কামাল, আনোয়ারুল হক, তাহসিনা রুশদির লুনা, লুৎফর রহমান কাজল, মুন্সি রফিকুল আলম, খন্দকার মুক্তাদির, মোশাররফ হোসেন, শফি আহমেদ চৌধুরী, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আসাদুজ্জামান, শাহ রিয়াজুল ইসলাম, একরামুজ্জামান, আবু সুফিয়ান, মিল্টন বৈদ্য, আনিসুর রহমান খোকন।

এছাড়া শাহ আবু জাফর, খোন্দকার আখতার হামিদ ডাবলু, মো. মোশাররফ হোসেন, মো. আলী সরকার, তাজভীরুল ইসলাম, টিএস আইয়ুব, সাইফুর রহমান রানা, মো. হানিফ, আনোয়ারুল ইসলাম, আলী নেওয়াজ খৈয়াম, এমদাদুল হক ভরসা, সাহাদাত হেসেন, মাসুদা মোমিন, সালমা আলম, রফিকুল ইসলাম, সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা, সালাহ উদ্দিন সরকার, কাজী নাজমুল হোসেন, শাহ শহীদ সারোয়ার, আবদুল খালেক, মজিবুল হক, মো. ইউনুস, ফাহিম চৌধুরী, শামীম আরা বেগম, আহসান উল্লাহ হাসান, নসরুল হক সাবু, ওয়ারেস আলী মামুন, আজহারুল ইসলাম মান্নান, লায়ন হারুনুর রশীদ, আমিনুল ইসলাম, মনি স্বপন দেওয়ান, কনক চাঁপা, সাচিং প্রু, ফরহাদ হোসেন, আজাদ, ফজলুর রহমান, আবু ওহাব আখন্দ, মাহমুদুল হক রুবেল, এম নাসের রহমান, আবুল ভায়ের ভূইয়া, আশরাফ উদ্দিন বকুল, শিরিন সুলতানা ও লুৎফর রহমান খান আজাদ উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

শরিকদের মধ্যে জিএসডির আসম আবদুর রব, আবদুল মালেক রতন, শহীদউদ্দিন মাহমুদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, ইকবাল সিদ্দিকী, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, আমসা আমিন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বৈঠকে অংশ নেন।