আ. লীগের কেউ নয়, এমপি হয়েছে ইউএনও-ওসি: রিজভী

ভোটে ‘কারচুপির’ পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী মতের মানুষের ওপর ‘সন্ত্রাস’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2019, 08:00 AM
Updated : 2 Jan 2019, 08:25 AM

দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী এবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি, বরং প্রত্যেক এলাকার ইউএনও, থানার ওসি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।”

এমনিতে প্রায় প্রতিদিনই রিজভী নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ব্রিফিং করতে এলেও ভোটের মধ্যে দুই দিন বিরতি দিয়ে বুধবার আবার তিনি সাংবাদিকদের সামনে এলেন।

ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনের নামে নিষ্ঠুর রসিকতা করে এখন জনপদের পর জনপদে ধানের শীষের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর চলছে পৈশাচিক বর্বরতা। আক্রমণ করে ভেঙে ফেলা হচ্ছে নিরীহ মানুষের বাড়ি-ঘর-দোকানপাট-বাজার। অগ্নি সংযোগ করা হচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কৃষি খামার-সহায় সম্পদের ওপর বেপরোয়া হানা দেওয়া হচ্ছে অবিরামভাবে।”

এ পরিস্থিতিতে নেতা-কর্মীরা এলাকায় থাকতে পারছে না জানিয়ে রিজভী বলেন, “গ্রেপ্তারের রীতিমত হিড়িক শুরু হয়েছে। নানা হয়রানিসহ শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হচেছ, আক্রমণে অনেক নিহত হয়েছে। আমি অবিলম্বে আওয়ামী লীগের এই নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।”

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের শরিকরা মিলে মাত্র ৭টি আসন পেয়েছে। অতীতে কোনো নির্বাচনে আর কখনও এত বাজে ফলাফল বিএনপিকে দেখতে হয়নি। 

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে ২৮৮ আসন নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মত সরকার গঠন করতে যাচ্ছে।

ঐক্যফ্রন্ট কারচুপির অভিযোগ এনে ওই ফল প্রত্যাখ্যান করেছে, সেই সঙ্গে অবিলম্বে পুনঃভোটের দাবি জানিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন তাদের জানিয়েদিয়েছে, পুনঃভোটের কোনো সুযোগ এখানে নেই। আর আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি ‘নিজেদের দোষেই’ এতটা বাজেভাবে হেরেছে।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ভোটের দিনকে একটি ‘অন্ধকার দিন’ হিসেবে বর্ণনা করে রিজভী বলেন, “ভোটের আগের দিন ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মানবশূন্য কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতির নির্বোধ উল্লাসে মেতে উঠেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী ক্যাডাররা। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নের ওপর ধেয়ে এল মহাদুযোর্গ।

“ভোটের দিন বিশ্ববাসী মহাশঙ্কা নিয়ে দেখল বিজেবি-র‌্যাব-পুলিশ কর্তৃক দেশের জনগণের আত্মমর্যাদাবোধে অসম্মানের দৃশ্যটি, তারা দেখল ভোট বঞ্চনার শেষ দৃশ্যটি।”

নির্বাচনে এই ‘মিথ্যা জয়ের’ জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে ‘পানির মতো টাকা খরচ’ করেছে বলেও মন্তব্য করেন এই বিএনপি নেতা।

তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার দল মানুষের ভোটে জেতেনি, তার দল জিতেছে গায়েবী ভোটে। এখন তার নেতৃত্বে যে সরকার গঠন হবে তা হবে গভার্নমেন্ট অব দি বিজিবি বাই দি র‌্যাব অ্যান্ড ফর দি পুলিশ।”

নির্বাচন ঘিরে কুমিল্লা-১ আসনের দাউদকান্দি পৌরসদরসহ উত্তর দাউদকান্দির গোয়ালমারী, সুন্দলপুর, বিটেশ্বর, মারুফা, দৌলতপুর, ইলিয়টগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম-১৪ আসনের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার ৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের’ সহিংসতার অভিযোগ তিনি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন।

“উদাহরণ হিসেবে আমি খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও অলি আহমেদের এলাকার কথা তুলে ধরেছি। এরকম ৩০০টি নির্বাচনী এলাকাতেই বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগের ব্যাপক সন্ত্রাসী হামলা, লুটপাট, মারধর, চাঁদাবাজি ও প্রকাশ্যে হুমকি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে।”

এরপরও যারা রোববারের নির্বাচনকে ‘শান্তিপূর্ণ‘ বলছেন, রিজভীর ভাষায়, “তারা হয় উৎকোচ গ্রহণ করেছেন, না হলে জ্ঞানপাপী।”

নির্বাচনের দিন নোয়াখালীতে এক অটোরিকশা চালকের স্ত্রী ‘নৌকায় ভোট না দেওয়ার কারণে’ ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের ধর্ষণের শিকার হওয়ার যে খবর পত্রিকায় এসেছে, সে বিষয়েও কথা বলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।  

তিনি বলেন, “এটি শুধু একজন নারীর শ্লীলতাহানী নয়, এটি জনগণের ভোটাধিকারের শ্লীলতাহানী।”

গত দশ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পর আরও পাঁচ বছরের জন্য শাসনদণ্ড হাতে পাওয়া আওয়ামী লীগকে হুঁশিয়ার করে রিজভী বলেন, “পতন দিনক্ষণ, তারিখ-মাস ঘোষণা দিয়ে আসে না।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।