আর ভুল করবেন না, শপথে আসুন: ফখরুলকে কাদের

নির্বাচনে জয়ী বিএনপি ও তার জোটসঙ্গী দলের নেতাদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Jan 2019, 12:10 PM
Updated : 1 Jan 2019, 12:24 PM

তিনি বলেছেন, বিএনপি নেতৃত্ব ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে ‘ভুল’ করেছিল, এবার আর ভুল করবেন না।

রোববার অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৫৯টি আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীরা। আর জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য জোটসঙ্গীদের নিয়ে তাদের আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৮টি। অপরদিকে বিএনপির পাঁচজন এবং তাদের জোট শরিক গণফোরামের দুজন নেতা সংসদ সংসদ নির্বাচিত হয়েছেন।

এদের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বগুড়া-৬ (সদর) আসনে, বগুড়া-৪ আসনে মোশারফ হোসেন, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে হারুনুর রশিদ ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন।

আর মৌলভীবাজার-২ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ধানের শীষ এবং সিলেট-২ আসনে গণফোরামের মুকাব্বির খান দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য প্রতীকে জয়ী হয়েছেন।

নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জয়ী প্রার্থীদের শপথে অংশ না নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার দুপুরে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমি এখনও মনে করি, তারা জনগণের রায়কে অপমান করবে না। তারা গতবার নির্বাচন বর্জন করে ভুল করেছেন, এবারও জনগণ যে রায় তাদের দিয়েছে, এতে সন্তুষ্ট-অসন্তুষ্ট এটা তাদের ব্যাপার।

“এর মধ্যে যে কয়জন নির্বাচিত হয়েছে তারা জনগণের রায়ে নির্বাচিত হয়েছেন। জনগণের রায়কে যেন অসম্মান না করে, এটা আমি বলতে চাই।”

নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ঘোষণাকে আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে-প্রশ্ন করা হলে কাদের বলেন, “বিএনপির দেশে আন্দোলন করার মতো কোন অবজেকটিভ কন্ডিশন নেই এবং আন্দোলনে অংশ নেওয়ার মতো কোন সাবজেকটিভ প্রিপারেশনও তাদের নেই। এ অবস্থায় আন্দোলনের সূত্র তাদের বিরুদ্ধে।

“গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তাদের নেতাদের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখেছেন? এত নার্ভাস, তারা হতাশায় ভেঙে পড়েছেন। নেতারাই হতাশায় ভেঙে পড়েছেন, কর্মীরা কীভাবে আশাবাদী হবে? কর্মীদের মধ্যে কীভাবে গতি পাবে?”

আন্দোলনের জন্য যে মানসিকতা এবং কর্মীদের সংগঠিত যে প্রস্তুতি দরকার, তা বিএনপির নেই বলে মন্তব্য করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা কাদের।

তিনি বলেন, “যদি থাকত তাহলে সারা দেশে তাৎক্ষণিক একটা মিছিল করতে পারত, এ রকমটাও দেখলাম না। নির্বাচন নিয়ে যে আপত্তি তারা করেছে, এর একটা প্রতিবাদও কোথাও দেখলাম না।

“বিএনপি নেত্রী জেলে, তারপরেও তারা কোনো সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করতে পারেনি। যা তারা এতদিন করতে পারেনি, এখন তাদের আরও ভাঙ্গাহাট। এই ভাঙ্গাহাট নিয়ে নতুন করে কোনো আন্দোলনের সক্ষমতা অর্জন করবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বিএনপি অচিরেই কোন আন্দোলন গড়ে তুলবে, এটার ভাবার কোন কারণ নেই।”

নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ কী জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ একটাই- যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং বিজয় পেয়েছে।

“দেশের জনগণের কাছে, জাতির কাছে ইশতেহারে যে ওয়াদাগুলো করা হয়েছে, সেটার বাস্তবায়নই হচ্ছে আমাদের চ্যালেঞ্জ।”

এবারের নির্বাচন ১৯৭০ ও ৫৪ সালের মতো হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সারা দেশে যে গণজোয়ার, ’৭০ সালের পর আমরা এমন জোয়ার দেখিনি। ৭০ সাল, ৫৪ সালের নির্বাচনের ফলাফলটা যেমনটা নৌকার পক্ষে হয়েছিল এবারও সে রকমটাই হয়েছে।

“তবে আমি অবাক হয়েছি এত বড় দল বিএনপি, যার কোনো সাংগঠনিক অবকাঠামোই নেই, তারা যে আন্দোলন করতে পারেনি, সাংগঠনিক কাঠামোতে দুর্বলতা- এটাই ছিল বড় কারণ।

“এবারকার নির্বাচনে দেখা গেছে, তারা তাদের সেই সাংগঠনিক শক্তিটা প্রদর্শন করতে পারেনি। তাদের অবস্থা এতই দুর্বল নড়বড়ে সংগঠন যে, তারা বিভিন্ন কেন্দ্রে, তাদের মধ্যে যাদেরকে হেভিওয়েট বলা হয় তারাও নিজেদের কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারেনি।”

“এজেন্ট না দিতে পারলে ভোটের ফলাফলের প্রতিক্রিয়া তো এমন হবেই। আমরা তো তাদের অনুরোধ করেও এজেন্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারিনি।”

নির্বাচনে হারার আগেই বিএনপি নেতারা ‘হেরে গিয়েছিলেন’ বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

নিজের আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদকে নিয়ে কাদের বলেন, “মওদুদ আহমদ সাহেবের সঙ্গে এমন জয় আমি আশা করিনি। আমি ভাবছিলাম তিনি থাকবেন, উনার এজেন্টরা থাকবেন তাহলে তো ভোটের ব্যবধানটা অনেক কমে যেত। এত ব্যবধান হত না।”

ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাপটে প্রচারে বের হতে পারেননি বিএনপির প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা। অধিকাংশ এলাকায় তাদের ব্যানার-পোস্টার দেখা যায়নি। হুমকি-ভয়ে ধানের শীষের পোস্টারই ছাপায়নি ঢাকার অধিকাংশ ছাপাখানা।

তবে ওবায়দুল কাদের এখন বলছেন, বিএনপির প্রার্থীরা নিজেরাই পোস্টার লাগাননি, নির্বাচনী প্রচারে গুরুত্ব দেননি।

“আসলে নির্বাচনের নামে একটা নাটক তারা করেছেন, সারা বিশ্বকে দেখানোর জন্য এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও নির্বাচনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি তারা গ্রহণ করেননি,” বলেন তিনি।

কবে নাগাদ নতুন মন্ত্রীদের শপথ হতে পারে জানতে চাইলে কাদের বলেন, “আশা করি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ জানুয়ারির মধ্যে এমপি ও মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাবে।”