কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৈয়দ আশরাফ, যিনি এখনও থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মঙ্গলবার বিকালে ধানমন্ডির সুধাসদন থেকে কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফের অসুস্থতার কথা তোলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “যেহেতু সৈয়দ আশরাফ সাহেব অসুস্থ, তাছাড়া আমি যেহেতু সব জায়গায় যেতে পারছি না, তাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জবাসীর কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।”
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ৬৮ বছর বয়সী সৈয়দ আশরাফ এখন থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অসুস্থতার কারণে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। দুই মেয়াদে ওই দায়িত্ব পালনের পর এখন তিনি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
জাতীয় চার নেতা ১৯৭৫ সালে কারাগারে নিহত হওয়ার পর যুক্তরাজ্যে চলে যান আশরাফ। দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে কিশোরগঞ্জের এই আসন থেকে নির্বাচন করে তিনি সংসদ সদস্য হন। এরপর ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পুনর্নির্বাচিত হন তিনি।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গেল মাসে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার সময় আশরাফের আসনে কাকে প্রার্থী করা হবে তা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ওপরই আস্থা রাখেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
নির্বাচনী প্রচারে মঙ্গলবারই প্রথম ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সে জেলা নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। প্রথমে তিনি বান্দরবানের প্রার্থী বীর বাহাদুল উশৈ সিং এবং তার এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে কিশোরগঞ্জের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আগামী ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হবে,সেই নির্বাচনে আমাদের কিশোরগঞ্জের ছয়টা সিট। এই ছয়টা সিটের পাঁচটা আমাদের নৌকা আর একটা লাঙ্গল। ঠিক আছে লাঙ্গল ভবিষ্যতে আমরা নৌকায় তুলে নেব। তারপরও একটায় লাঙ্গলে ভোট দেবেন। বাকি পাঁচটা সিটে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সবাই যেন জয়যুক্ত করে।”
অতীতের নির্বাচনগুলোতে কিশোরগঞ্জের অধিকাংশ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেই ঐতিহ্যটা আপনারা ধরে রাখবেন। আমি চাই, এখানে সবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এক হয়ে কাজ করবেন যেহেতু এখানে সৈয়দ আশরাফ সাহেব অসুস্থ, সবাই মিলে তার জন্য কাজ করে যাবেন যেন তিনি নির্বাচনে জয়ী হন। সুস্থ হয়ে তিনি যেন আমাদের মাঝে ফিরে আসেন এই দোয়া করছি।
“ইনশাল্লাহ, জয় আমাদের হবেই। কারণ বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেন। আমরা আসতে পারলে উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “কিশোরগঞ্জবাসীর স্লোগান বাংলাদেশের অন্য জায়গাগুলো থেকে আলাদা, সুরেলা স্লোগান। আমি শুনেছি। কাজেই আমরা চাই, এই সুরেলা স্লোগান সেইটা নিয়ে নৌকায় ভোট দেবেন যেন আমরা বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।”
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এক সময় কিশোরগঞ্জ অবহেলিত জায়গা ছিল।
“তবে কিশোরগঞ্জের মানুষের ভাগ্য ভালো। তিনজন রাষ্ট্রপতি আপনাদের। এদিক থেকে কিশোরগঞ্জ সব সময় উপরে আছে। সব সময় থাকবে। এই অঞ্চল নৌকার ঘাঁটি হিসেবে থাকুক সেটা আমরা চাই।”
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি কিশোরগঞ্জবাসীর উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
“হাওড় অঞ্চলের যে সম্পদ সেটা কীভাবে কাজে লাগানো যায় এবং এই সম্পদকে কাজে লাগাতে ব্যাপক কর্মসূচি নিচ্ছি। হাওরবাসীর কষ্ট করে জীবন যাপন করতে হয়। হাওরবাওর ও জলাভূমি অঞ্চলের উন্নয়নে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছি। তাদের যেন কষ্ট করতে না হয় সেদিকে আমরা দৃষ্টি দিয়েছি।”
ভিডিও কনফারেন্সের সময় ঢাকায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক,আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম উপস্থিত ছিলেন।
অপরপ্রান্তে অন্যদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরল আহসান শাহজাহান ও সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজলসহ নৌকার প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।