যুদ্ধাপরাধের বিচার অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ঐক্যফ্রন্টের

জামায়াত নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে থাকা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগামীতে সরকার গঠনের সুযোগ পেলে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2018, 11:17 AM
Updated : 17 Dec 2018, 11:17 AM

সোমবার ঢাকার হোটেল পূর্বাণীতে সংবাদ সম্মেলন করে ৩৫ দফাসহ প্রতিশ্রুতিসহ ঐক্যফ্রন্টের এই ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।

বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে জোটের ইশতেহার পড়ে শোনান নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

ইশতেহারের ৩৫ দফার মধ্যে ৩২ দফায় ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা’ অংশে বলা হয়, ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে-

>> যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলমান থাকবে

>> মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার চেতনা নিয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলা হবে

>> সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হবে

>> মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করে ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ দের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে

>> মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে

যুদ্ধাপরাধের বিচার ছিল ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি। তরুণ প্রজন্মের ব্যাপক সাড়ায় সেই নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহুল প্রতীক্ষিত বিচার শুরু হয়।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে পর আপিল শুনানি শেষে জামায়াতের পাঁচ শীর্ষ নেতা এবং বিএনপির একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে এ পর্যন্ত। প্রতিটি রায়ের পর হরতাল ডেকে ব্যাপক সহিংসতা চালিয়েছে জামায়াতকর্মীরা। তাদের সঙ্গ ছাড়ার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে বিএনপি নেতারা উল্টো যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা করেছেন।  

একাত্তরে বাংলাদেশের বিরোধিতায় যুদ্ধাপরাধে নেতৃত্ব দেওয়া জামায়াতের নেতারা বিএনপির সরকারে মন্ত্রিত্বও পেয়ছিলেন, যাকে শহীদের প্রতি ‘চপেটাঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করা হয় যুদ্ধাপরাধের এক মামলার রায়ে।

সেই বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে গত অক্টেবরে কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করলে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা একে ‘সাম্প্রদায়িক জোট’ আখ্যায়িত করেছিলেন।

কামাল হোসেন অবশ্য সে সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে কোনো ‘বৃহত্তর ঐক্যে’ তিনি যাবেন না।

কিন্তু নির্বাচনের মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় দেখা গেল, নিবন্ধন হারানোয় জামায়াতের অন্তত ২২ জন প্রার্থীকে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে। তাদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের আত্মীয় পরিজনরাও আছেন। আসন্ন নির্বাচনে তারা ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই ভোট করবেন। 

কামাল হোসেন নিজে নির্বাচন না করলেও তার দল গণফোরাম ও ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিকরাও একই প্রতীকে ভোট করছেন এবার।

গত শুক্রবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সাংবাদিকরা কামাল হোসেনকে জামায়াত নিয়ে প্রশ্ন করলে ক্ষেপে যান তিনি।

সাংবাদিকদের সামনে ধমকে উঠে তিনি বলেন, “চুপ কর। চুপ কর। খামোশ।” 

এরপর রোববার বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সাংবাদিকরা আবারও তাকে একই প্রশ্ন করলে কামাল হোসেন বলেন, “আমরা যদি ঐক্য করি, সে ঐক্যকে সুসংহত করি- ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে নিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে।

“যে কোনো দিক থেকে যদি কাজে লাগে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই জনগণের সে শক্তি আছে, আমরা স্বাধীনতাকে রক্ষা করব।”