লুটপাটের জন্য ক্ষমতায় যেতে মরিয়া আ.লীগ-বিএনপি: সেলিম

একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এক দল আরেক দলের নেতাদের ছুটিয়ে এনে প্রার্থী করার খেলায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির ব্যস্ততার কমতি না থাকলেও এখনও ইশতেহার প্রকাশ না করায় দল দুটির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2018, 03:37 PM
Updated : 15 Dec 2018, 03:37 PM

তিনি বলেছেন, লুটপাটের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা একটি সুবিধাজনক উপায় ও মাধ্যম। তাই লুটপাটের প্রয়োজনে ক্ষমতার জন্য দুপক্ষই মরিয়া।

বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “তাই দেশের অর্থনৈতিক নীতি-ব্যবস্থার মত মৌলিক বিষয়ে আলোচনা-বিতর্ক-জনমত সংগঠিত করার কাজে তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায় না। তাদের প্রধান লক্ষ্য হল যেনতেন উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়া। নির্বাচনকে তারা পরিণত করেছে হোন্ডা-গুণ্ডা-টাকাওয়ালা-ইসলামপছন্দ ব্যক্তি ও শক্তিকে পক্ষে টেনে প্রার্থী করার কুৎসিত প্রতিযোগিতায়।

“জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করা, জনগণের মতামতের প্রকাশ ঘটানোর মত বিষয়গুলো তারা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে। এ কারণেই ‘নৌকা’ ও ‘ধানের শীষ’র পক্ষ থেকে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে পর্যন্তও কোনো নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা হয়নি।”

শনিবার বিকালে পুরানা পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। 

‘ভিশন-মুক্তিযুদ্ধ ৭১’ বাস্তবায়নে বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে সেলিম বলেন, “আগামী দিনগুলোতে দেশ কোন নীতি-আদর্শ-ব্যবস্থা-কর্মপন্থা অনুসরণ করে চলবে, তা নিয়ে জনগণের মাঝে আলোচনা-বিতর্ক ছড়িয়ে দেওয়ার কর্তব্যের প্রতি ‘নৌকা’ ও ধানের শীষ’ ওয়ালাদের দৃষ্টি নেই বললেই চলে।

“কিছু মন ভোলানো বাগাড়ম্বর ছাড়া এসব মৌলিক বিষয়ে আলোচনা-বিতর্ক সামনে আনতে তারা অনাগ্রহীই শুধু নয়, সেটিকে তারা ভয় পায়। কারণ এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক চললে তারা যে এক শতাংশের স্বার্থ রক্ষা করে তা জনগণের সামনে খোলাসা হয়ে যাবে।”

আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের উদাহরণ টেনে সিপিবি সভাপতি বলেন, “পাকিস্তানী আমলে আমাদের অধিকার ছিল না। ভোট দিতে দেওয়া হতে না। মৌলিক গণতন্ত্র চালু হয়েছিল। আইয়ুব খান, মোনায়েম খানের বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করেছিলাম। ১৯৬৮ সালে আইয়ুব খান উন্নয়নের এক দশক পালন করেছিল। বক্তৃতা দিয়ে বলত তার আমলে প্রবৃদ্ধি ১১ শতাংশ বেড়েছে।

“তখন মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে রেজ্যুলেশন নেওয়া হল যে, আইয়ুব খানকে আজীবন প্রেসিডেন্ট বানানোর প্রস্তাব সংবিধানে ঢুকিয়ে দেওয়া হোক। এতকিছুর পরও উৎসব শেষে তিনমাসের ভেতরে আইয়ুব খানের পতন হয়ে গেল ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে।”

সেলিম বলেন, “এখন শেখ হাসিনা দাবি করে ৮ শতাংশ এবং খুব বাহাদুরি নেয়। আমি তখন তাকে জিজ্ঞেস করি দেশের সম্পদ যদি ৮ শতাংশ বাড়ে তাহলে ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যেকটি মানুষের প্রকৃত আয় কেন ৮ শতাংশ বাড়েনি? বেড়েছে মাত্র ২ শতাংশ। বাকি ৬ শতাংশ গেল কোথায়? খুঁজে বের করেন। আমরা এর জন্য তো দেশ স্বাধীন করিনি।”

অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির অবস্থান অভিন্ন মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনা বিরোধীদলে থাকলে রাস্তায় স্লোগান দিয়ে গলা ফাটায়া বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। আর সরকারে গেলে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের নামে প্রহসন। বিএনপিও সেরকমই।”

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, প্রেসিডিয়াম সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, কোষাধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আদনান রিয়াদ, ক্ষেতমজুর সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল ইসলাম নাদিম, হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি কবীর হোসেন ও ইয়াসিন স্বপন।