মাঠে আ. লীগের বিদ্রোহীরা, কেন্দ্র ‘নিশ্চুপ’

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও এখনো বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি আওয়ামী লীগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2018, 07:32 PM
Updated : 15 Dec 2018, 01:42 PM

প্রায় দেড় ডজন আসনে দল ও জোট মনোনীতদের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। কোথাও কোথাও জোটের প্রার্থীর সমর্থকদের এই আওয়ামী লীগ নেতাদের সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।

দলের জন্য ত্যাগ স্বীকারের মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়ে গত সপ্তাহে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজে নামার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার সময় ডিসেম্বরের শুরুর দিকেই বিদ্রোহী প্রার্থীদের হুঁশিয়ার করে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, “নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে।”

এখন তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের বেশিরভাগ বিদ্রোহী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে ফেলেছে। বাকিদের মধ্যে চারজন দেশের বাইরে আছে। অতি শিগগিরই দলের আলোচনা সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেওয়া হবে। এই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”

তবে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ বেশ কয়েকজন নেতার কথায় এ বিষয়ে দলের কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসার আভাস পাওয়া গেছে।

দলটির শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার আমাদের দলের বিদ্রোহীর সংখ্যা একেবারে কম। সম্ভবত তাদের বিরুদ্ধে দল তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”  

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মহাজোটের প্রার্থী তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বাশার মাইজ ভান্ডারীর বিপক্ষে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা এ টি এম পিয়ারুল ইসলাম।

নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে আছেন যেসব নেতা

ময়মনসিংহ-৯ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন আনোয়ারুল আবেদিন খান। ওই আসনে নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ২০০৮ সালে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত সাংসদ অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম কুড়াল প্রতীকে নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন।

মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মন্ত্রী শাজাহান খান নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এই আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আল আমিন মোল্লা সিংহ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

মানিকগঞ্জ-১ আসনে বর্তমান সাংসদ নাইমুর রহমান দূর্জয় নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ওই আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এ বি এম আনোয়ারুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। ওই আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিনের ছেলে পৌর মেয়র ফয়সাল বিপ্লবের স্ত্রী চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিন বিদ্রোহী প্রার্থী। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী একতারা প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ে আছেন।

যশোর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন স্বপন ভট্টাচার্য। তিনি ২০১৪ সালে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন। এবার ওই আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ সম্পাদক কায়সার হাসান বারী, ঢাক প্রতীকে নির্বাচন করছেন তিনি।

কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনে ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ওই আসনে উপজেলা যুবলীগের নেতা আব্দুল্লাহ নজরুল নোঙ্গর প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লা চৌধুরীর নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। সেখানে গতবার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন নিক্সন চৌধুরী। এবারও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।

গাইবান্ধা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইউসুফ আলী সরকার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ওই আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগের আবু জাফর মো. জাহিদ।

১৪ দলীয় জোট প্রার্থীদের মধ্যে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বাশার মাইজ ভান্ডারী। ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য এ টি এম পিয়ারুল ইসলাম। তিনি কোনোভাবেই নির্বাচন থেকে সরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। দুই দিন আগেও নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় পিয়ারুলের সমর্থকরা।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির মো. ইয়াসিন আলী জোট প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। ওই আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমদাদুল হক মটরকার প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।

এছাড়া মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে দেওয়া ২৯ আসনের মধ্যে পাঁচটিতে রয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

পিরোজপুর-৩ আসনে জোট প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ওই আসনে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফুর রহমান মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে আপেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করছেন। ওই আসনে বিদ্রোহী হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার।

রংপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাজোটের প্রার্থী করা হয়েছে। ওই আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আসাদুজ্জামান বাবলু, তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

গাইবান্ধা-১ আসনে মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামীম হায়দার পাটোয়ারী। ওই আসনে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আফরুজা বারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এমদাদুল হক বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।

লক্ষীপুর-২ আসনে মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান। ওই আসনে কুয়েত আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বিদ্রোহী হিসেবে এখনও আছেন।

নরসিংদী -৩ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেয়েছেন জহিরুল ইসলাম মোহন। ২০১৪ সালে মোহনের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয় পেয়েছিলেন সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। এবারও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা সিংহ প্রতীকে লড়ছেন।