বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফের বিবৃতি তুলে ধরে ওই ফোনালাপকে ‘কাটপিস’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, “মোশাররফ হোসেনের কণ্ঠকে কাটপিস করে, এডিট করে, কারো সাথে জুড়ে দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় যে ভুয়া ফোনালাপ’প্রকাশ করা হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট।”
সংবাদ সম্মেলনে মোশাররফ হোসেনের বিবৃতি থেকে উদ্ধৃত করে রিজভী বলেন, ‘‘সম্প্রতি বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া, অনলাইন, গণমাধ্যমে থাইল্যান্ডভিত্তিক পোর্টাল এশিয়ান ট্রিবিউনের বরাত দিয়ে আমার সাথে জনৈক মেহমুদের কথোপকথনের একটি বানোয়াট ফোন আলাপের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।”
নির্বাচনী প্রচারণায় ‘বিঘ্ন ঘটানোর উদ্দেশে’ ওই টেপ বানানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন মোশাররফ।
তার বিবৃতিতে বলা হয়, “এই ভিডিওটি আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার কাজে বিঘ্ন ঘটানো এবং আমাকে বিব্রত করার জন্যই; রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই বানোয়াট ও সৃজিত ভিডিওটি প্রকাশ ও প্রচার করা হয়েছে।”
ধানের শীষের ভোটপ্রার্থী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দাবি, ওই ফোনালাপে কথিত আইএসআইয়ের সদস্য মেহমুদকে চেনেন না তিনি।
‘‘ভিডিওতে কথিত আইএসআইয়ের কোনো ব্যক্তি বা কর্মকর্তাকেও আমি চিনি না। কখনো ওই কথিত ব্যক্তি ও আইএসআইয়ের কোনো কর্মকর্তার সাথে আমার কথোপকথন হয়নি।”
মোশাররফের পক্ষে বিবৃতি পড়ে শুনিয়ে অডিওটি প্রচার করা থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ রাখেন রিজভী।
তবে প্রকাশিত এই টেলি কথোপকথনের সূত্র ধরে বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনেছেন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোহাম্মদ আলী সুমন।
আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে কুমিল্লা-১ ও ২ আসনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ। আর অভিযোগকারী মোহাম্মদ আলী কুমিল্লা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুবিদ আলী ভূঁইয়ার ছেলে।
ভোটের প্রচারে নেমে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘সন্ত্রাস’ উসকে দিচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মাফিয়া ডনদের মতে গতকাল বলছেন, আর ভাষণ নয়, অ্যাকশনে যেতে হবে। অর্থাৎ তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি নিজেদের দুর্বিনীত ক্যাডারদেরকে সহিংসতার পথ অবলম্বনের জন্য উসকানি দিলেন।”
আওয়ামী লীগ ‘বেপরোয়া’ হয়ে ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
তিনি বলেন, পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতারা ধানের শীষের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ‘একাট্টা’ হয়েছে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং অফিসারদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
বিএনপি তারপরও ভোটের লড়াইয়ে থাকবে জানিয়ে রিজভী বলেন, “আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আমরা সব বাধা অতিক্রম করে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত ভোটের লড়াই করে যাব। অব্যাহত মামলা-হামলা, গুম-খুন, দুর্নীতি ও দুর্বত্তায়নের বিরুদ্ধে নির্বাচনে জনগণের রায় প্রতিফলিত হবে।”
বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের একটি তালিকা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন রিজভী।
তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে মোট ১৫৮টি মামলায় তাদের দুই হাজার ৪১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে ৪২৫ জন।
অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল লতিফ খান, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, হারুনুর রশীদ, কাজী রফিক, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।