ভোট চাইতে গিয়েও কাঁদলেন ফখরুল

নিজ আসনে ভোটের প্রচারণায় নেমে অশ্রুনয়নে ধানের শীষে ভোট চাইলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2018, 04:58 PM
Updated : 12 Dec 2018, 05:01 PM

বুধবার বিকালে সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের কুমারপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তিনি।

বিএনপির ‘ঘোর দুঃসময়ে’ দলের হাল ধরে থাকা এই নেতাকে এর আগেও বিভিন্ন সময় আবেগতাড়িত হতে দেখা গেছে। 

কারাবন্দি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নের প্রত্যয়নপত্রে সই করে সেই চিঠি দলীয় প্রধানের প্রতিনিধির হাতে সম্প্রতি ফখরুল তুলে দিয়েছিলেন অশ্রুভেজা চোখে।

দুই বছর আগে ঢাকায় এক আলোচনা সভায় দলের নেতাকর্মীদের দুরবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বিএনপি মহাসচিব।

গত বছর নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে দলীয় সভায় বক্তব্য দিতে গিয়েও কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি। 

ঠাকুরগাঁও-১ আসনের প্রার্থী ফখরুল বুধবারের জনসভায় বলেন, “যাদের ছেলে-স্বামী গুম হয়ে গেছে; যাদের মা এখনও অপেক্ষা করে আছে তার ছেলে কখন ঘরে ফিরবে, স্ত্রী অপেক্ষা করে আছে স্বামী কখন ফিরবে; ছোট্ট শিশু সন্তান অপেক্ষা করে কখন তার বাবা ঘরে ফিরবে; কিন্তু ফেরে নাই।

“আওয়ামী লীগ সরকার দেশটাকে শ্মশান ও আর্তনাদের দেশে পরিণত করেছে। শুধু কষ্ট, কষ্ট আর যন্ত্রণা। আমাদের একজন নেতাও নেই যার বিরুদ্ধে মামলা নেই; জেলে গেছে। কারণ আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। এই কষ্টের শেষ হতে হবে না? এই কষ্ট লাঘব করতে হবে না?”

৩০ ডিসেম্বর ভোটের মধ্যে দিয়ে সেই ‘পরিবর্তন’ আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “তাহলে এই কষ্টের শেষ হবে, নির্যাতনের শেষ হবে। আমার ভাইয়েরা ফিরে আসবে; আমাদের গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়া ফিরে আসবে।”

বিরোধী নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “হাজার হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় রিকশা চালায়, সিকিউরিটির কাজ করে; কী অপরাধ? গণতন্ত্র ও অধিকার চাওয়া কি অপরাধ? আজকে মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়ে গোটা দেশকে এ অবস্থা তৈরি করেছে। এখান থেকে আমরা মুক্তি চাই।”

আওয়ামী লীগের গত ১০ বছরের শাসনকালে মানুষের ভাগ্য ফেরেনি বলে দাবি করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফখরুল। তিনি বলেন, “তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি।

“কোনো চাকরি হয় নাই; ডিএনএ টেস্ট করে আওয়ামী লীগ না থাকে তাহলে চাকরি হয় না। তারপরও টাকা দিতে হয়। কনস্টেবল নিয়োগের ক্ষেত্রে ১০ লক্ষ টাকা করে দিতে হয়। এই যে দুর্নীতি, এই যে মানুষকে ঠকানো, এসব আমরা করি নাই।”

আওয়ামী লীগের ‘দুঃশাসনের জবাব দিতে’ ৩০ ডিসেম্বর সবাই সদলবলে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। 

ঠাকুরগাঁও সদর থানা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন লালের সভাপতিত্বে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সহ সভাপতি সুলতানুল ফেরদৌস নম্র চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ প্রমুখ।

এরআগে নির্বাচনী গণসংযোগের শেষ দিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর, নারগুন, জগন্নাথপুর, রুহিয়া, সালন্দর, আউলিয়াপুর ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নেয়।

ঠাকুরগাঁও-১ আসনে ফখরুলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রমেশ চন্দ্র সেন নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত করেছিলেন ফখরুলকে। ভোটের ব্যবধান ছিল ৫৬ হাজার ৬৯০।

এর আগে ২০০১ সালের নির্বাচনে ফখরুল ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে রমেশকে হারিয়েছিলেন ৩৭ হাজার ৯৬২ ভোটে।