প্রচারে সরকারি সুবিধা নিচ্ছেন ওবায়দুল কাদের: মওদুদ

ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী হিসেবে সরকারি সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন নোয়াখালী-৫ আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2018, 12:39 PM
Updated : 12 Dec 2018, 12:47 PM

সাবেক এই আইনমন্ত্রী বুধবার ঢাকার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের নির্বাচনী এলাকায় প্রচারে বাধা পাওয়ার অভিযোগও তুলেছেন।

কোম্পানিগঞ্জের ওই আসনে দীর্ঘদিন ধরেই ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ।

জাতীয় পার্টি ও বিএনপির হয়ে আসনটিতে পাঁচ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মওদুদ। অন্যদিকে ওবায়দুল কাদের এনিয়ে তৃতীয় বার ওই আসন থেকে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন এখন।

কাদেরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে মওদুদ বলেন, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সমস্ত প্রটোকল নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় যান প্রচারণা চালানোর জন্য।

“সাত-আটটা গাড়িসহ শতাধিক মোটর সাইকেলের বহর নিয়ে সরকারি সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে ক্ষমতা এবং প্রভাব দেখিয়ে তিনি সর্বত্র ঘুরে বেড়ান। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে মাইক ব্যবহার করে উনি বক্তব্য রাখেন।”

নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন সরকারের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেন মওদুদ।

“রিটার্নি অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, পুলিশের এসপি ও ওসির কাছে বার বার অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। আমি লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে আমি ব্যক্তিগতভাবে টেলিফোনে আলাপ করেছি। তাতে কোনো লাভ হয়নি।”

‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের’ বদলে এখন  ‘আন-লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেন এই বিএনপি নেতা।

নির্বাচনী আচরণবিধিতে মন্ত্রীর মতো সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারের কর্মসূচিতে না জড়ানোর কথা বলা আছে। এতে বলা হয়েছে। মন্ত্রীরা প্রচারের সময় সরকারি গাড়ি, সরকারি প্রচারযন্ত্র ব্যবহারসহ অন্য সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না।  

এদিকে মওদুদের অভিযোগেড়র জবাবে কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছি না। আর নিরাপত্তার জন্য মওদুদ সাহেবের জন্যও পুলিশ থাকে। আমার সঙ্গে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ছিল।”

নিজের এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে ওবায়দুল কাদের (সোমবারের ছবি)

মওদুদ অভিযোগ করেন, নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে ধানের শীষের প্রচার চালাতে না পেরে ফিরে আসতে হয়েছে তাকে।

“১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জেলা সম্পাদক ও নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী প্রকাশ্যে বক্তৃতায় বলেছেন, ‘কবিরহাটের কোথাও মওদুদকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না এবং মওদুদ যেখানেই যাবে তাকে প্রতিহত করা হবে’।

“গতকাল অনুমতি থাকা সত্ত্বেও আমাকে কবিরহাটে নির্বাচনী সভায় না যেতে ডিসি সাহেব (রিটার্নিং কর্মকর্তা) জানিয়ে দেন; এসপি সাহেব, যিনি আইনশৃঙ্খলার কর্তা, দুজনই আমাকে টেলিফোনে বলেছেন, কবিরহাটে আমার যাওয়া ঠিক হবে না, আমি যেন না যাই।”

“তাহলে এটা কী নির্বাচন? অর্থাৎ একজন প্রার্থী, আমার মতো প্রার্থী যদি নির্বাচনী সভা করতে না পেরে বাড়ি ফিরে আসে। অর্থাৎ এর অর্থ হলো এটা কোনো নির্বাচন হচ্ছে না,” বলেন মওদুদ, যিনি মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও উপ রাষ্ট্রপতির দায়িত্বেও ছিলেন।

গত নয় দিনে নোয়াখালী-৫ আসনে শতাধিক নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা, প্রচারে বাধার নানা ঘটনা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন মওদুদ।

তিনি বলেন, “গতকাল কবিরহাটের স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি সত্ত্বেও সরকারি দলের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের লাঠিসোঁটা, চাপাতি ও বন্দুক নিয়ে হামলা করলে সভাস্থলেই শতাধিক নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জন গুরুতর অবস্থায় ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।”

মওদুদ দাবি করেন, নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা থেকে ক্ষমতাসীন দল বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, “তবে আমরা জোরের সাথে বলতে চাই, আমরা শেষ দিন পর্যন্ত মাঠে থাকব। যতই অত্যাচার-নির্যাতন হোক আমাদের উপরে, যতই তারা বিধি লঙ্ঘন করুন, যতই তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করুক। এবার ধানের শীষের যে জোয়ার উঠেছে, এই জোয়ার আওয়ামী লীগ ঠেকাতে পারবে না।”

সংবাদ সম্মেলনে মওদুদের সঙ্গে ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, নিলোফার চৌধুরী মনি, মুনির হোসেন প্রমুখ।