নিজের এলাকায় নৌকার পক্ষে ‘অচিন্ত্যনীয়’ জনস্রোত দেখেছেন কাদের

নিজের নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীতে গিয়ে নৌকার পক্ষে জনগণের ‘অভূতপূর্ব’ সাড়া পাওয়ার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2018, 11:36 AM
Updated : 12 Dec 2018, 11:53 AM

কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত নোয়াখালী-৫ আসনে নৌকা প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ে আছেন ওবায়দুল কাদের। সেখানে তার প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। 

মওদুদের মনোনয়নপত্রে ‘ছোটখাট কিছু ভুল ছিল’ জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, প্রতিপক্ষ শক্তিশালী না হলে নির্বাচন জমবে না। তাই মওদুদের ছোটখাটো ভুল যেন না ধরা হয় সেকথা বলেছিলেন তিনি।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর সম্প্রতি নোয়াখালীতে নিজের নির্বাচনী এলাকা ঘুরে এসেছেন ওবায়দুল কাদের।

বুধবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে সেখানকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছি। সেখানে আমি যা দেখেছি অভূতপূর্ব, অচিন্ত্যনীয় এমন জনস্রোত আমি দেখিছি, যা ২০০৮ সালেও দেখিনি।”

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষে দুই বছর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। এরপর ২০১৪ সালে বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত ভোটে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

নোয়াখালী-৫ আসনে ১৯৯১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের। প্রথমবার মওদুদ আহমেদের কাছে হারলেও ১৯৯৬ সালের ভোটে জয়ী হয়ে তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকারের প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি।

এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে আবার মওদুদ আহমেদের কাছে হেরে গেলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হন ওবায়দুল কাদের।

নিজের এলাকায় ভোটের মাঠের প্রধান প্রতিপক্ষ সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদকে নিয়ে কাদের বলেন, “গত পাঁচ বছরে পৌনে চার বছরও মওদুদ সাহেব এলাকায় যাননি। উনি কিন্তু জমাতে পারছেন না। বিএনপির ভাঙ্গা হাট কোথাও জমছে না। অথচ উনারা বলছেন, গণজোয়ার। আমি বলছি গণভাটা। বিএনপির এখন গণভাটা চলছে।

“তার এতই জনসমর্থন যে তিনি তার সভাস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গিয়ে বসে থাকলেন।”

নির্বাচনী প্রচার শুরুর দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার মওদুদ কবিরহাটে পথসভা করতে গিয়ে পারেননি, যার জন্য আওয়ামী লীগ কর্মীদের দায়ী করেছেন তিনি।

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, “দলীয় নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সভাস্থলে (কবিরহাট জিরো পয়েন্ট) আসার সময় যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। এতে আমার অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন।”

সোমবার প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর নিজের নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালী-৫ আসনের বসুরহাট সরকারি মুজিব কলেজ গেইটে পথসভায় ওবায়দুল কাদের

মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচারের’ অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “মওদুদ সাহেব বলেছেন, আমি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছি। সরকারি গাড়ি আমি ব্যবহার করছি না। আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, সরকারি গাড়ি আমি ব্যবহার করছি না।

“নিরাপত্তার জন্য মওদুদ সাহেবের জন্যও পুলিশ থাকে। আমার সঙ্গে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ছিল। আমার সঙ্গে ১৪ জনের মতো সাংবাদিক ছিল, তারা দেখেছে।”

এদিকে মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার এওজবালিয়ায় যুবলীগ নেতা মো. হানিফকে (২৪) মাথা থেঁতলে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, যার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের দায়ী করেছেন পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। রাতেই ফরিদপুরে এক ‘বিএনপিকর্মীর’ লাঠির আঘাতে নিহত হয়েছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা।

এই প্রসঙ্গ তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “নোয়াখালীতে যুবলীগের এক কর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। ফরিদপুরে আরেকজনকে হত্যা করল। বিএনপি আবারও প্রমাণ করল, তারা সন্ত্রাসী দল। সহিংসতা কারা করছে, এটা প্রমাণ হয়ে গেল।

“ফখরুল সাহেব, বিরোধী দল হয়ে দুটি খুনই, আওয়ামী লীগের কর্মীদের হত্যা করেছে। এটার প্রমাণ আছে। সারা দেশে নিপীড়ন তারা করছে। পল্টনে নেতৃত্ব দিয়েছে বিএনপির মির্জা আব্বাস। তার মেয়েকে পর্যন্ত সন্ত্রাসী বানিয়েছে।”

এ বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনে গণমাধ্যমের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমাদের দুইজন কর্মীকে হত্যা করা হল, এটা নিউজের হেডলাইন নাই। কিন্তু হেডলাইন হল, ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুলের গাড়ি ভাংচুর হয়েছে। মির্জা ফখরুলের গাড়ির একটা কাঁচও তো ভাঙল না, মির্জা ফখরুলের গাড়িতে তো কেউ হামলা করেনি।

“মিডিয়ার একটা অংশ আমাদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন করছে। মনে হচ্ছে, তারাই ঐক্যফ্রন্ট। সঠিক খবর তারা প্রকাশ করছে না।”

বিএনপির মিছিলে অস্ত্রের মহড়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “তারা লাঠির মাধয় জাতীয় পতাকা লাগাচ্ছে। এই সব লাঠিসোঁটা নিয়ে তারা মাঠে নামছে। এছাড়া ধানের শীষের মধ্যে চাপাতি। এগুলো দেখা যাচ্ছে।”

বিএনপি শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে থাকলে কোন দলের জনপ্রিয়তা কতটুকু, সেটা প্রমাণিত হবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “শতভাগ সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ হবে, আপনারা যে মুসলিম লীগের কাছাকাছি চলে গেছেন। আপনারা নির্বাচনে থাকুন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকলে খুশি হব। জনপ্রিয়তার দৌড় কার কত, তা বাংলাদেশের জনগণ দেখিয়ে দেবে।

“গ্রামের মানুষ শেখ হাসিনাকে হারাতে চায় না। এই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে গ্রামের মানুষ আবারও শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চায়। আপনাদের জনপ্রিয়তার দৌড় কতটুকু তা ৩০ তারিখ দেখা যাবে।”

গত দশ বছরে দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার যে সব কাজ করেছে সেগুলো জনগণ মূল্যায়ন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “আমাদের কাজ আছে, আমরা মিথ্যা কোনো স্বপ্ন কাউকে দেখাচ্ছি না।”

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে কাদের বলেন, “এগুলো এখন আর স্বপ্ন নয়। পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হলে এই সরকারের আবার ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন। আপনি আপনাদের এইটুকু বলতে পারি, যা সত্য নয় তা প্রচার করে লাভ নেই।”

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক হাছান মাহমুদ। ‘বাংলাদেশের পক্ষে, শেখ হাসিনার পক্ষে, উন্নয়নের পক্ষে’ সবাইকে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান জানান, দেশের খ্যাতিমান লেখক-অধ্যাপক, অভিনয় শিল্পী, সংগীতশিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে নৌকার পক্ষে ঢাকা শহরে প্রচার চালাবেন।

আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অন্যদের মধ্যে অভিনেত্রী শমী কায়সার, অরুনা বিশ্বাস, তানভীন সুইটি, অভিনেতা শাকিল খান, শাহরিয়ার নাজিম জয় উপস্থিত ছিলেন।