অপপ্রচার বন্ধ না হলে আইনি ব্যবস্থা: বিএনপি

রাষ্ট্রের অর্থের অপব্যবহার করে বিরোধীদলের বিরুদ্ধে সরকার ‘মিথ্যা অপপ্রচার’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। অপপ্রচার বন্ধ না হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2018, 12:58 PM
Updated : 10 Dec 2018, 06:05 PM

বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সুচিন্তিতভাবে একটা ভয়াবহ রকমের, জঘন্য রকমের অপপ্রচারে সরকার মেতে উঠেছে।

“এটা করতে গিয়ে তারা সরকারি অর্থ ব্যয় করে সোশাল মিডিয়া, দেশের প্রিন্টিং মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমকে ব্যবহার করছে। সরকারি দল ও মন্ত্রীরা জঘন্য মিথ্যাচার শুরু করেছে।”

রোববার আওয়ামী লীগের এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র অংশ হিসেবে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সঙ্গে লন্ডনে তারেক রহমান এবং পাকিস্তান দূতাবাসে মির্জা ফখরুল গোপন বৈঠক করেছেন।

সোমবার নোয়াখালীতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে একই অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

ক্ষমতাসীন দলের এই অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “গতকাল বিভিন্ন পত্রিকায় একটা সিন্ডিকেটেড নিউজ ছাপানো হয়েছে যে,পাকিস্তান দূতাবাসের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি এবং তথাকথিত আইএসআইর সঙ্গে লন্ডনে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব বৈঠক করেছেন।

“আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এটা বলেছেন। ওবায়দুল কাদেরের মতো একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের মতো দলের সাধারণ সম্পাদকের মুখ দিয়ে এই ধরনে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন, জঘন্য মিথ্যাচার হয় সেটা শুধু অপ্রত্যাশিত ও অনাকাংখিতই নয়, এটা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের প্রতি জঘন্য আঘাত বলে আমরা মনে করি। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও প্রতিবাদ করছি।”

তিনি বলেন, “আমি খুব দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করছি যে, এই ধরনের কোনো বৈঠক কখনোই আমাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়নি  এবং লন্ডনেও আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কোনো সংস্থার কোনো বৈঠক হয়নি। এটা শুধুমাত্র বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং এটা জঘন্য মিথ্যাচার। আমরা এহেন বক্তব্য প্রত্যাহার করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হব।”

বিএনপি সমর্থিত সোশাল অ্যাক্টিভিস্টদের গ্রেপ্তার করার অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, “তারা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছেন, আইসিটি অ্যাক্ট, ৫৭ ধারা করেছেন। এসব করতে গিয়ে তারা সমস্ত স্বাধীন চিন্তা, মুক্ত চিন্তা, বাক স্বাধীনতাকে হরণ করেছেন।

“তারা শীর্ষ নিউজসহ ৫৮টি নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। এভাবে তারা মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশকে রক্ষা করতে হলে  মিডিয়াকে এগিয়ে আসতে হবে।”

বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন, “আমাদের জানা মতে তিনশ উপরে আইডি খোলা হয়েছে, তাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, নোংরা ছবি, বানোয়াট গল্প প্রচার করা। সরকার নগ্নভাবে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, যা নিকৃষ্টতম ফ্যাসিবাদ ছাড়া আর কিছুই না।”

প্রধানমন্ত্রী তনয় সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেইসবুক পেইজে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেনের একটি কার্টুন দেখিয়ে তিনি বলেন, “কার্টুন দিতেই পারেন। সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক নেতাদের কার্টুন আসতেই পারে। যখন আওয়ামী লীগের নেতা, প্রধানমন্ত্রী অথবা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে এই ধরনের কার্টুন দেওয়া হয় তখন তাদেরকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রামের মহিলা তাকেও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “এখন আমরা মামলা শুরু করব। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। দেখব সরকার কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, কেন্দ্রীয় নেতা জিএম ফজলুল হক, শহীদুল ইসলাম বাবু, আবদুল আউয়াল খান, হায়দার আলী লেলিন, আমিরুজ্জামান শিমুল, তাবিথ আউয়াল, শামসুজ্জামান সুরুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার হওয়া অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।