মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপি অফিসে দেলোয়ারপুত্রের কান্না

বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় নাম না থাকায় ক্ষোভ-হতাশায় কেঁদে ফেলেছেন দলটির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে অ্যাডভোকেট খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলু।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2018, 06:09 PM
Updated : 7 Dec 2018, 08:21 PM

চূড়ান্ত মনোনীতদের নাম ঘোষণার পর শুক্রবার রাতে ছোট বোন দেলোয়ারা বেগম পান্নাকে নিয়ে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আসেন ডাবলু। তার সঙ্গে বেশ কিছু নেতাকর্মীও ছিলেন।

ডাবলু অফিসে এসে দোতলায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে নিচে নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে আটকে দেয়। এ সময় ডাবলুর অনুসারীর হৈ চৈ শুরু করেন।

এরপর ক্ষোভ প্রকাশের এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন আবদুল হামিদ ডাবলু, তার বোন পান্নাকেও এ সময় অশ্রুসজল দেখা যায়।

ছোট বোন দেলোয়ারা বেগম পান্নাকে (ছবিতে বাঁয়ে) নিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে আসেন ডাবলু। হতাশায় কান্না করেন পান্নাও।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ডাবলু। ওই আসনে এসএ জিন্নাহ কবিরকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে দল।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডাবলু বলেন, “এই মনোনয়নে আমি ক্ষুব্ধ। সংস্কারপন্থিদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলের জন্য যারা জীবন বাজি রেখে ত্যাগ করেছেন তাদের জন্য এটা বেদনা ও ক্ষোভের।

“আমার বাবা এই দলের জন্য নিজের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে গেছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সমূলে শেষ করতে আজকে গুলশান অফিসে সংস্কারপন্থিরা আসন গেড়ে বসেছে।”

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার আগ মুহূর্তে দলের মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুঁইয়াকে বহিষ্কার করে ওই পদে খোন্দকার দেলোয়ারকে নিয়োগ দেন।

এরপর দুঃসময়ে দলের জন্য কাজ করে যান খোন্দকার দেলোয়ার। ২০১১ সালে মারা যাওয়ার সময়ও বিএনপির মহাসচিব ছিলেন তিনি।

দেলোয়ারের ছেলে-মেয়ে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে দেখা করতে রাত ৯টার দিকে বিএনপি কার্যালয়ে আসেন। তবে রাত ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসচিবের দেখা পাননি, সেখানে অপেক্ষায় আছেন তারা।

ডাবলুকে দোতলায় যেতে বাধা দিলে হৈ চৈ করেন তার অনুসারীরা

ডাবলু ছাড়াও মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক সাংসদ অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন। কুষ্টিয়া-৩ আসনে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জাকির হোসেন সরকারকে।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সোহরাব বলেন, “বিএনপির জন্য এক এগারোর সময়ে আমি শরীরের ওপর নির্মম নির্যাতন হয়েছে। আজকে এটা আমার প্রাপ্য? এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।”

ত্যাগীদের বাদ দিয়ে ‘সুবিধাবাদীরা’ বিএনপিকে গ্রাস করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মনোনয়ন নিয়ে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন নারায়ণগঞ্জের গিয়াসউদ্দিনের সমর্থকরাও।

বাদ পড়লেন আলোচিত যেসব নেতা

বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়নের তালিকায় দলের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা এবং সাবেক মন্ত্রী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বাদ পড়েছেন।

২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের তিন মাসের হরতাল-অবরোধের সময় নাশকতার ২২ মামলায় আসামি করা হয় সেলিমা রহমানকে

বঞ্চিতদের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, গাজীপুরের সাবেক মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নান ও তার ছেলে মনজুরুল করিম রনী, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন হ এহছানুল হক মিলন ও তার স্ত্রী নাজমুন নাহার বেবী, সাবেক সাংসদ ও সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি কলিম উদ্দিন মিলন, সাবেক সাংসদ ইসমত সুলতানা ইলেন ভুট্টো রয়েছেন।

চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী সেলিমা রহমান বরিশাল-৩ আসনে মনোনয়ন চেয়ে বিফল হয়েছেন।

দুদু মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে, সেখানে প্রার্থী করা হয়েছে মো. শরীফুজ্জামানকে। খুলনা- ৪ আসনে দলের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজ এবার মনোনয়ন পাননি।

সাবেক মহিলা সাংসদ রাশেদা বেগম হীরা (চাঁদপুর-১), নিলোফার চৌধুরী মনি (জামালপুর সদর) আসনে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। ২০০৮ সালে তারা বিএনপির নির্বাচিত সাংসদ ছিলেন।

২০১৪-২০১৫ সালে হরতাল-অবরোধে নাশকতায় প্রাণহানির মধ্যে পুলিশি ধরপাকড়ে বিএনপি নেতারা যখন কারাগার ও আত্মগোপনে, সেই সময় সামনে আসেন শামসুজ্জামান দুদু

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বামপন্থি নেতা আতাউর রহমান ঢালীকেও (ঢাকা-১৩) চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় বাদ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা-২০ আসনে ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান এবার মনোনয়ন পাননি। তার জায়গায় দেওয়া হয়েছে তমিজ উদ্দিনকে।

নেত্রকোণা সদর আসনে আশরাফ উদ্দিন খান মনোনয়নের চূড়ান্ত তালিকায় নেই। তার জায়গায় জেলা বিএনপি সভাপতি ডা. আনোয়ার হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

সাবেক সাংসদ অবসরপ্রাপ্ত মেজর মনজুর কাদের এবং চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর মাহমুদ আল মামুনও মনোনয়ন চেয়ে পাননি। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে তাদের বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ছাত্র দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমকে।

মাদারীপুর-২ আসনে মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হেলেন জেরিন খান এবং ঢাকা-২০ আসনে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ মনোনয়ন চেয়ে পাননি।

প্রয়াতমন্ত্রী হারুনার রশীদ খান মুন্নুর মেয়ে আফরোজা খান রীতা মানিকগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তার আসনে এখনও প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামানকে নেত্রকোনা- ৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।