গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় হাতে হাত তিন দলের পাঁচ নেতার

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফলাফল যাই হোক না কেন, একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায়  একযোগে কাজ করার শপথ নিলেন বাংলাদেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের পাঁচ শীর্ষ নেতা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2018, 07:01 PM
Updated : 5 Dec 2018, 07:01 PM

বুধবার সকালে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘শান্তিতে বিজয়’ শীর্ষক এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে তারা এই শপথ নেন।

দলীয় ভেদাভেদ ভুলে দেশে শান্তি, গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় একযোগে কাজ করার শপথ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম বলেন, “আমরা রাজনৈতিক বিভাজনের কথা বলি। কিন্তু এখন শান্তি অর্জনের জন্য আমরা প্রচণ্ড প্রচেষ্টা করছি। এখন সকলের জন্য করণীয় কী, সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে।”

ঘোষিত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সবগুলো রাজনৈতিক দল অংশ নেওয়ায় এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এইচ টি ইমাম বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী থেকে আমরা শান্তির জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, আইনের শাসন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবাই মিলে একসাথে কাজ করব।”

অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনপি নেতা মঈন খান বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য, দেশ এখন প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু আমরা যদি শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই, তবে সব ভেদাভেদ ভুলে আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে।”

বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, “শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গেলে বেশকটি ইনডিকেটর রয়েছে। প্রথমত বলব গণতান্ত্রিক পরিবেশের কথা। পরে আসবে ইউনিভার্সাল হিউমেন রাইটসের কথা। আমরা বলছি, মৌলিক অধিকারের কথা। সেই মৌলিক অধিকারের মধ্যে রয়েছে, বাক স্বাধীনতা, ভোটাধিকার প্রয়োগ ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা। এসব নিশ্চিৎ করা গেলে তবেই প্রতিষ্ঠা হবে মৌলিক অধিকার।”

রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার আগে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও ক্ষমতায় গিয়ে তা ভুলে যাওয়ার কথা স্বীকার করে নেন তিনি।

“পিস ফাউন্ডেশনের পথে সিলেকটিভ হলে চলবে না। ক্ষমতায় থাকলে বা ক্ষমতার বাইরে থাকলেও শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে আমাদের নিজেদের কথাই ধারণ করতে হবে। তবেই আসবে গণতন্ত্র।”

হাছান মাহমুদ বলেন, “একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা খুবই প্রয়োজনীয়। গণতন্ত্রে অর্থবহ শান্তি প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।”

নির্বাচনের ফলাফল মেনে না নিয়ে বিজিত দলটি হরতাল, অবরোধের পথে গেলেও গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কোনো বিজিত দল সেটা করেনি বলে রাজনীতিতে ‘শান্তি বিরাজ’ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের অন্যান্য নেতাকর্মীদের চরম সমালোচনাকারী হাছান মাহমুদও এদিন সুর কিছুটা বদলে ফেলেন।

তিনি বলেন, “এবার নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রেও দেখুন, প্রতিটি রাজনৈতিক দল শান্তি বজায় রেখেছে। সবাই এটাই চায়। পাবলিক সেক্টরের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আমাদের হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে।“

ভিশন-২১ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণতন্ত্রের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা দ্রুত সমাধানের তাগিদ দেন জিয়াউদ্দিন বাবলু।

“দারিদ্র্যমুক্ত, শিক্ষিত ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায়  শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সব দলগুলোকে পরিস্থিতি মেনে কাজ করতে হবে। এখানে কোনো শর্ত আরোপ চলবে না।”

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অফ পার্টি কেটি ক্রোক, পরে কথা বলেন ডেমোক্রেসি ইন্টার‌ন্যাশনালের সিইও গ্লেন কোয়েন।

নির্বাচনকালীন সময়ে দেশে শান্তি ধরে রাখতে কয়েকটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই নেতা।

নির্বাচনকালীন সময়ে সহিংসতা বন্ধে প্রার্থীদের একে অপরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধ করার পরামর্শের পাশাপাশি নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেওয়ার সুপারিশ রয়েছে তাদের প্রস্তাবনায়।

নির্বাচনের সময় কেন্দ্রে প্র্রশিক্ষিত পোলিং এজেন্ট নিয়োগ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন নিয়ে কথা বলেন এই দুই বড় রাজনৈতিক দলের নেতারা।