এরশাদের সিএমএইচে যাওয়ার কারণ বললেন রাঙ্গাঁ

জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেছেন, তাদের চেয়ারম্যান এরশাদ অসুস্থ অবস্থায় বাসায় একা থাকতে ‘ভয়’ পান বলেই মাঝেমধ্যে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2018, 09:19 AM
Updated : 6 Dec 2018, 07:14 AM

নির্বাচন সামনে রেখে মহাজোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির পর দলীয় অবস্থা বিবেচনা করে এরশাদ ১০ ডিসেম্বরের পর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে পারেন বলেও আভাস দিয়েছেন রাঙ্গা। 

মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পরদিন মঙ্গলবার বনানীতে পার্টি চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এরশাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন রাঙ্গাঁ।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অসুস্থতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে নানা আলোচনা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদ নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ভর্তি থাকা অবস্থাতেই এমপি নির্বাচিত হন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করা হয় তাকে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জাপা যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ আগ্রহীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করে, তখনই জাপা জানায়, ‘অসুস্থতার’ জন্য এরশাদ সিএমএইচে ভর্তি হয়েছেন। অবশ্য তার শারীরিক অসুস্থতা ‘এমন কিছু নয়’ জানিয়ে সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এরশাদ নির্বাচনে অংশ নেবেন।

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নতুন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, “ঘুমের ডিস্টার্ব হলেও তিনি সিএমএইচে যান। বাসায় একা থাকেন বলে তার একলা লাগে, ভয় করে। তাছাড়া ইনফেকশনের ভয়ও আছে।”

রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার পর শারীরিক অবস্থা নিয়ে এরশাদ ‘ভয়ে থাকেন’ বলে তথ্য দেন সরকারের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা রাঙ্গা। 

তিনি দাবি করেন, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে দলের মহাসচিবের পদ থেকে সরানো হয়নি।‘শারীরিক অসুস্থতা’ এবং দল পরিচালনায় ‘অক্ষমতার’ কথা জানিয়ে তিনি নিজেই এরশাদের হাতে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

ঋণ খেলাপের কারণে পটুয়াখালী-১ আসনে হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেলে সোমবার অনেকটা আকস্মিকভাবেই জাতীয় পার্টির মহাসচিব পরিবর্তনের ঘোষণা আসে।

এবার জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষে বেশ কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেছিলেন, ‘মোটা টাকায়’ মনোনয়ন বিক্রি করেছেন এরশাদ ও হাওলাদার। তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন হাওলাদার।

নতুন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ সোমবার মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রাপ্ত ও মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা এখনও এরশাদের দেখা পাচ্ছেন না বলে গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রাঙ্গা মঙ্গলবার সকালেও বারিধারায় এরশাদের বাসায় প্রাতঃরাশ সেরে আসার কথা জানিয়ে বলেন, সেখানে ‘অবাঞ্ছিত কাউকে’ ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

এরশাদের চিকিৎসার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, “তিনি এখন হান্ড্রেড পারসেন্ট ফিট রয়েছেন। তবে তার বাইরে যাওয়া জরুরি। তবে তা হবে ১০ তারিখের পর।”

আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে মহাজোটের আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে জানিয়ে রাঙ্গা বলেন, “চেয়ারম্যান মহোদয় ১০ তারিখ পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখবেন। দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব শেষ না করে তিনি দেশের বাইরে যেতে চান না। “

জাতীয় পার্টি এবার মহাজোটের কাছে ৫৪-৫৫টি আসন পেতে পারে বলে আশা করছেন রাঙ্গা, যিনি নিজে রংপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করছেন।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘দর কষাকষি’ নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “যেসব স্থানে আমাদের প্রার্থীদের জয়ের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত, তা আমরা মহাজোটের কাছে উপস্থাপন করব। সে আসনগুলো আমরা চাইব। আমরা এত বেশি আসন চাইছি না। জোটে আমাদের সমঅধিকার আছে। কোন আসনে কে জিতবে, কে হারবে, তা বিবেচনায় আনতে হবে।”

আসন বণ্টনের বিষয়ে জাতীয় পার্টিতে নয় সদস্যের একটি দল আলোচনা করছে বলেও জানান রাঙ্গাঁ। তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্ত না মেনে কেউ বিদ্রোহী হলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।