সাবিরার ভোটের পথ বন্ধই থাকল, আটকে গেলেন দণ্ডিত অন্যরাও

যশোর-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবিরা সুলতানার দণ্ড স্থগিত করে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্থগিত রেখেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2018, 06:07 AM
Updated : 8 Dec 2018, 10:55 AM

সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবিরার অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকল না। তার মতো যারা দুই বছরের বেশি সাজায় দণ্ডিত তাদের নির্বাচন করার পথও আর খুললো না।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানাকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ছয় বছরের সাজা ও দণ্ড বৃহস্পতিবার স্থগিত করেছিল হাই কোর্টের একটি একক বেঞ্চ। রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আবেদনে চেম্বার আদালত শনিবার তা স্থগিত করে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বিভাগ রোববার এ বিষয়ে শুনানি করে স্থগিতাদেশ চলমান রাখে।

আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনালে মাহবুবে আলম, তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও এবিএম বায়েজিদ।

আর সাবিরা সুলতানার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, তার সঙ্গে ছিলেন আমিনুল ইসলাম।

আদেশের পর অ্যাডভোকেট আমিনুল সাংবাদিকদের বলেন, “ইতোপূর্বে অনেকেই সাজাপ্রাপ্ত হয়েও আপিল করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। সে সময় আদালত এবং অ্যাটর্নি জেনারেল তাতে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। অথচ আমার মক্কেল তার পক্ষে আদেশ পাওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল গতকাল অস্বাভাবিকভাবে চেম্বার আদালত বসান। সেখানে তারা আবেদন করে স্থগিতাদেশ নিয়ে যান।

তিনি বলেন, “সরকার একদিকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ব্যবস্থার কথা বলছে, অন্যদিকে সরকার আদালতকে ব্যবহার করে একতরফা একটি নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। বিএনপির জনপ্রিয় প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে নানা কৌশলে এগোচ্ছে।”

যশোর ঝিকরগাছার এই প্রার্থীর উদাহরণ কাজে লাগিয়ে সরকার বিএনপির প্রার্থীদের নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণার ‘পরিকল্পনা করেছে’ বলেও অভিযোগ করেন আমিনুল।

তিনি বলেন, এই আদেশের বিরুদ্ধে আইনগত প্রতিকার পাওয়ার কোনো সুযোগ আছে কি না- জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ আদেশের ফলে নৈতিক স্খলনজনিত কারণে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্তরা নির্বাচন করতে পারবেন না জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “আজকের এই আদেশ একটি মাইলফলক। একটি অপরাধ করে তারপার আবার তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এটা আমাদের সংবিধান প্রণেতারা চাননি। এ কারণে ১৯৭২ সালে আমাদের সংবিধানে ৬৬ অনুচ্ছেদ সন্নিবেশ করা হয়েছে। এটি থাকবে, এটিই কামনা করি।”

সরকার বিচার বিভাগের মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কৌশল নিয়েছে- বিএনপিপন্থিদের এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে মাহবুবে আলম বলেন, “ফৌজদারি মামলায় যদি কোনো ব্যক্তি দোষি সাব্যস্ত হন, তাহলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না- এটা বিশেষ কোনো দলের বিষয় না। সর্বজনীনভাবে সমস্ত লোকের জন্য এটা প্রযোজ্য, যারা সংসদ সদস্য হতে চান।

“এখন থেকে যারা নির্বাচন করবেন, রাজনীতি করবেন, তারা নিজেদের কলুষমুক্ত রাখবেন। এখন এটা মেসেজ যাবে যে, জনপ্রতিনিধি হতে হলে তাকে সৎ হতে হবে। মামলা মোকদ্দমায় তিনি যাতে দণ্ডপ্রাপ্ত না হন এমন কাজ তারা করবেন না।”

জনপ্রতিনিধিদের জন্য আপিল বিভাগের এ আদেশ একটি ‘সতর্ক বার্তা’ মন্তব্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “জনগণের প্রতিনিধি হতে হলে নিষ্কলঙ্ক হতে হবে। কোন রকম দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে না। এতে তারা নিজেরাই এখন হুঁশিয়ার হয়ে যাবেন।”

দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ড স্থগিত করে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হলে তা সংবিধানের অবমাননার শামিল বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা।