জামায়াতের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাও আছে: বিএনপির নজরুল

দণ্ডিত দুই যুদ্ধাপরাধীর ভাই ও ছেলেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন দেওয়া বিএনপি বলেছে, কোনো যুদ্ধাপরাধীর হাতে তারা ‘ধানের শীষ’ প্রতীক তুলে দেবে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2018, 08:32 AM
Updated : 29 Nov 2018, 10:22 AM

আর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় যুদ্ধাপরাধের নেতৃত্ব দেওয়া দল জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ধানের শীষের মনোনয়ন দেওয়ার মধ্যে কোনো সমস্যা দেখছেন না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম খান।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলের তিনি বলেন, “আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, কোনো যুদ্ধাপরাধীকে আমরা ধানের শীষ প্রতীক দেবে না।”

তার এ কথায় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন- নিববন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর যে প্রার্থীদের ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিএনপি কি করবে। 

জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা তো বলেছি কোনো যুদ্ধাপরাধীকে আমাদের প্রতীক দেব না। কেউ যুদ্ধাপরাধ না কইরা থাকলে তাকে দিতে অসুবিধা কী? জামায়াতের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাও আছেন।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন ১১ দফাসহ বিভিন্ন দাবির বিরোধিতা করে জামায়াতে ইসলামী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ নামে বিভিন্ন দল গঠন করে জামায়াত ও এর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ।

সে সময় তারা সারা দেশে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো যুদ্ধাপরাধ ঘটায়। যুদ্ধাপরাধ মামলার বিভিন্ন রায়ে বিষয়গুলো উঠে আসে।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উস্কানি, হত্যাকাণ্ডে সায় ও সহযোগিতা দেয়ার দায়ে জামায়াতে ইসলামীর তখনকার আমির গোলাম আযমকে টানা ৯০ বছর অথবা আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলটির পাঁচ শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতকে পুনর্বাসিত করার জন্য বিএনপিকেই দায়ী করে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ের পর জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। যুদ্ধাপরাধী দুই জামায়াত নেতা ওই সরকারের মন্ত্রিসভাতেও জায়গা পান।

জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়াকে লাখো শহীদের প্রতি ‘চপেটাঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করা হয় যুদ্ধাপরাধের এক মামলার রায়ে। জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার জন্য বিভিন্ন পক্ষ থেকে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানানো হলেও তাতে সাড়া দেয়নি দলটি।

নির্বাচন কমিশনের শর্ত পূরণ করতে না পারায় আদালতের আদেশে ইতোমধ্যে নিবন্ধন হারিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তাদের মার্কা দাঁড়িপাল্লাও প্রতীকের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

নিবন্ধন না থাকলেও জামায়াত নেতাদের দুইভাবে নির্বাচন করার সুযোগ রয়ে গেছে। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন, আবার নিজেদের পরিচয় বাদ দিয়ে সরাসরি অন্য দলের প্রার্থী হিসেবে ওই দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে পারেন।

বুধবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন পর্যন্ত অন্তত ২৪টি আসনে ধানের শীষের প্রত্যয়ন নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জামায়াত নেতারা। আরও ডজনখানেক আসনে জামায়াত নেতাদের মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে স্বতন্ত্র হিসেবে। 

এর মধ্যে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং পিরোজপুর-১ আসনে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন।

এছাড়া বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন যুদ্ধাপরাধ মামলার পলাতক আসামি আব্দুল মোমিম তালুকদার খোকা।

এবারের নির্বাচনে বিএনপি তাদের জোটসঙ্গী জামায়াতকে কতগুলো আসন ছেড়ে দিচ্ছে জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, “একটাও ছাড়ি নাই, কিংবা একটাও ধরি নাই। কারণটা হচ্ছে, আমরা প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দিয়েছি। আমাদের ২০ দলের মধ্যে যারা নিবন্ধিত পার্টি, তাদের মনোনয়ন তারাই দিয়েছেন। যারা নিবন্ধিত না, তাদের ব্যাপারটায় আমরা চিঠি দিয়েছি।

“আমরা একই আসনে একাধিক প্রার্থী দিয়েছি। প্রত্যাহারের আগে আমরা প্রত্যেক আসনে একজন করে প্রার্থীকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ করব। যখন আমরা প্রতীক বরাদ্দ করব, তখন আপনাদেরকে বলব কোন দলকে কয়টা আসন ধরলাম বা ছাড়লাম।”

বিএনপির মোট কতজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সেই তথ্য জানতে চাইলে নজরুল বলেন, “এটা হিসাব করে বলতে হবে। আমরা কয়েকদিন পরিশ্রম করে একটু ক্লান্ত আরকি। হিসাবটা করে জানাতে পারব। তবে একই আসনে একাধিক প্রার্থী বহু জায়গায় দিয়েছি।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, বেলাল আহমেদ, সাইফুল ইসলাম পটু, একেএম আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।