চট্টগ্রাম-৯ আসনে দলের মনোনয়ন পাওয়া নওফেল আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, আর সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক।
মঙ্গলবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে নগর ভবনে আসেন নওফেল। সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম-৮ আসনে ১৪ দলের মনোনয়ন পাওয়া জাসদের একাংশের নেতা মাইনুদ্দিন খান বাদল।
বাদল ও নওফেলের সাথে আলাপচারিতার পর মেয়র আ জ ম নাছির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি দলের সাধারণ সম্পাদক। উনারা নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। তাই দেখা করতে এসেছেন।
এরপর প্রশ্নের জবাবে নাছির বলেন, “নেত্রী যাদের মনোনয়ন দিয়েছেন তাদের সবাইকে বিজয়ী করতে পারব বলে আশা রাখি।”
এ সময় নওফেল বলেন, “চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে পরিমাণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে জনসাধারণ এর প্রতিদান জনরায়ে দিতে উন্মুখ হয়ে আছে।
“শুধু চট্টগ্রাম-৯ নয়, নগরী ও আশপাশের সব আসনে নৌকা বিজয়ী হবে, সে আত্মবিশ্বাস ও সৎ সাহস আমাদের আছে।”
নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়ায় এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা মনক্ষুণ্ন হয়েছেন কি না জানতে চাইলে জাসদ নেতা বাদল বলেন, “জোটের নেত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, নৌকার জন্য সবাই কাজ করবেন।
“এবারের নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এবার নৌকা বিজয়ী না হলে উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়বে। আর এখন সময় নতুন প্রজন্মের হাতে ‘ব্যাটন পাস’ করার। আমাদের যাবার পালা, এদের (নওফেল) এবার শুরুর পালা।”
একসঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা, ইভিএম নিয়ে আলোচনা
এ সময় মেয়র আ জ ম নাছির ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পাশের কক্ষে।
জানতে পেরে মেয়রের কক্ষ থেকে বেরিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান বাদল ও নওফেল।
দুই নেতা প্রবেশের পর মেয়র চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে তাদের স্বাগত জানান।
এ সময় তাদের বুকে টেনে নেন মেয়র ও করমর্দন করেন। তখন তিনজনই ছিলেন হাসিমুখে।
সেখানে নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, উপ-দপ্তর সম্পাদক ও কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুরও ছিলেন।
তখন মেয়র নাছির বলেন, “আপনারা তো এখনও মনোনয়নপত্র জমা দেননি, আচরণবিধি লংঘন হবে না। এটা তো সৌজন্য সাক্ষাৎ।”
এরপর মেয়র বলেন, “আগামীকাল সকালে জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসায় আসেন। সেখান থেকে সকাল ১১টায় আপনাদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাব।”
বোয়ালখালী-চান্দগাঁও, কোতোয়ালী-বাকলিয়া, ডবলমুরিং-হালিশহর, বন্দর-পতেঙ্গা, সীতাকুণ্ড-পাহাড়তলী এবং হাটহাজারী-পাহাড়তলী আসনের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার কথা জানান মেয়র।
এই পর্যায়ে নওফেল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম-৯ আসনে এবারের নির্বাচনের প্রসঙ্গ তোলেন। মেয়র বলেন, “ইভিএম নিয়ে আমার কোনো আইডিয়া নেই।”
নওফেল বলেন, “এটা নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরাই চেয়েছিলাম। চট্টগ্রাম-৯ আসনে জিততে হবে। প্রমাণ করতে হবে, ইভিএমে আমরা জিতেছি। কুমিল্লায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হয়েছিল, আমরা হেরেছিলাম।”
জবাবে মেয়র নাছির বলেন, “কুমিল্লা আর চট্টগ্রাম এক না। চট্টগ্রাম-৯ আসনে আমরা অবশ্যই জিতবো।”
নওফেল নগরীর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির প্রসঙ্গ তুললে মেয়র বলেন, ‘আমি ওয়াসার চেয়ারম্যানকে বলেছি ৩০ নভেম্বরের পর যেন আর রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি না করে। কিন্তু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ নাকি শুরু হয়েছে। এখন উনাকে (সিডিএ চেয়ারম্যান) কে বোঝাবে? ”
এরপর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদারকে ডেকে নেন। তিনি ইভিএম সম্পর্কে তিন নেতাকে ধারণা দেন।
এরপর সংবাদকর্মীদের অনুরোধে হাতে হাত ধরে তিন নেতা ছবি তুলতে পাশাপাশি দাঁড়ান হাসিমুখে।
চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে দুই বিপরীত ধারার নেতৃত্বে ছিলেন প্রয়াত সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং আ জ ম নাছির।
মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর দলের কেন্দ্রীয় নেতা নওফেলের নেতৃত্বেই আছেন মহিউদ্দিন অনুসারী নগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
নগর ভবনে যাওয়ার আগে নগরীর বাগমনিরাম এলাকায় নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বাসায় যান বাদল ও নওফেল।