ইভিএম নিয়ে মামলা করার হুমকি

জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছে ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2018, 02:05 PM
Updated : 22 Nov 2018, 02:28 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে ইভিএম নিয়ে এক সেমিনারে ফ্রন্টের নেতা জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব এই হুমকি দেন।

ইভিএমে ভোট নেওয়া হলে সংবিধান লংঘন হবে দাবি করে তিনি বলেন, “সংবিধানের বিরোধিতা হবে, রাষ্ট্রদ্রোহ হবে। এটা রাষ্ট্রীয় অপরাধ, সাংবিধানিক অপরাধ। এটা যদি নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে ব্যবহার করতে যায় আমরা আমাদের নেতা সংবিধান প্রণেতা আইন বিশেষজ্ঞ প্রবীন রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করব।

“ইভিএম ব্যবহার করতে পারবে না, আমরা করতে দেব না। ভোটার ও জনগণ করতে দেবে না।”

ইভিএম নিয়ে বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের ২ (এ) ধারা উল্লেখ করেন রব।

তিনি বলেন, “সেখানে বলা আছে, সংসদ গঠন হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। মেশিনে প্রত্যক্ষ করা যায় না। সংবিধানে বলা আছে ডাইরেক্ট। প্রশ্নবিদ্ধ ইভিএম এই শর্ত পূরণ করে না।

“তাই সংবিধান সংশোধন করা ছাড়া ইভিএম ব্যবহার করা যাইবে না। প্রত্যক্ষ ভোটের একটি প্রধান শর্ত যে, ভোট প্রদান থেকে শুরু করে সর্বশেষ ভোট গণনা পর্যন্ত সকল নির্বাচনী প্রক্রিয়া জনগণের কাছে উন্মুক্ত থাকতে হবে। ইভিএমের বর্তমান প্রস্তাব ও কাঠামো বাংলাদেশের মতো দেশে প্রচণ্ডভাবে অগণতান্ত্রিক। জনগণের কাছে এই মেশিনের স্বচ্ছতা নেই, উন্মুক্ত নয়।”

বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীরা আপত্তি করলেও এবার নির্বাচনে শহরাঞ্চলের কিছু কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এ বিষয়ে তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন: “আমরা যারা নির্বাচনের অংশী, যারা নির্বাচন করব, করাব, ভোট দেব, জয়লাভ করব, সরকার গঠন করব, আমরা কেউ চাইলাম না। আপনি নির্বাচন কমিশন এত অ্যাডামেন্ট কেন?

“আসলে ঘটনা হল, আপনি গতবারের ১০ হাজার টাকার মেশিন এবার দুই লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন। হারামটা জায়েজ করার জন্য, টাকাটা খাওয়ার জন্য।”

ইভিএমের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতির শঙ্কা প্রকাশ করে আ স ম রব বলেন, “ইভিএমে ভোট করতে দেওয়া হবে না, আপনারা করতে পারবেন না।

“আমি নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই, এটা সংবিধানবিরোধী-রাষ্ট্রবিরোধী, মামলা হবে জেলে যাবেন। আমরা ছাড়ব না, দেশের ১৮ কোটি মানুষ ছাড়বে না।”

নির্বাচনে ‘ভোট বিপ্লব’ ঘটবে বলে আশা করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “নির্বাচনে আমরা যাব, জাতি নির্বাচনে যাবে। সেই নির্বাচনকে অবশ্যই জনগণের রায়ে পরিণত করতে জনগণ সেই লড়াই সেই যুদ্ধে লড়বে, ভোটের যুদ্ধে লড়বে। সেখানে কোনো কিছুই তাদের আটকে রাখতে পারবে না।’

“ভোট বিপ্লব হবে, জনগণ সেই ভোট বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে।”

গুলশানের লেকশোর হোটেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে ‘ইভিএমকে না বলুন, আপনার ভোটকে সুরক্ষিত করুন’ শিরোনামে এই সেমিনার হয়। সেখানে ইভিএমে ‘ভোট কারচুপির’ নমুনা দেখানো হয়।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, “বর্তমান সরকার এবার ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে বলে আমার সন্দেহ আছে। ইভিএমের এই রকম প্রেজেন্টেশন আরও সব জায়গায় দেওয়া দরকার। এতে মানুষ আরও সাহসী হবে। মূলত আমাদের দরকার মানুষকে সাহসী করে তোলা।”

নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “ভোটের দিন ভোটের মাঠে ভোট দিতে যান। এবার শ্লোগানটা দিতে হবে নিরাপদ ভোট চাই, নিরাপদ ভোট কেন্দ্র চাই। আমরা একটা শঙ্কামুক্ত, প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন চাই।”

দেশে গণঅভ্যুত্থানের সম্ভাবনা রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আশা হারাবার কোনো কারণ নেই। এজন্য লড়াইটা চালাতে হবে আমাদের। সর্বাত্মকভাবে সর্বাংশে মন-প্রাণ দিয়ে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। কারণ যারা ক্ষমতায় বসে আছে- দে আর রাইডিং অন অ্যা রানিং টাইগার। কোনো ছাড় দেওয়ার উপায় নেই।”

গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী বলেন, “নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, জনগণের ভোট ডাকাতি করা। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ভোট ডাকাতির পরিণতি হবে ভয়াবহ। এজন্য জনগণ এই সরকারকে কখনোই ক্ষমা করবে না।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজুর পরিচালনায় সেমিনারে অন্যদের মধ্যে গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার বক্তব্য রাখেন।

সেমিনারে ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিশের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের এমএ রকীব, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, খন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খাঁন, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা নুর হোসাইন কাশেমী, মুফতি মো. ওয়াক্কাস, মহিউদ্দিন ইকরাম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জাতীয় লীগের সৈয়দ এহসানুল হুদা, পিপিবির শামসুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, তাজমেরী ইসলাম, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, অধ্যাপক অধ্যাপক একেএম আজিজুল হক, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, মাহফুজ উল্লাহ, বিএনপির শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সেলিম ভুঁইয়া, শাকিল ওয়াহিদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শামীমুর রহমান শামীম, আশরাফউদ্দিন বকুল, তাবিথ আউয়াল, ফয়সল আলিম, তানভীরুল হাসান তমাল, কে এম আসাদুজ্জামান, বেবী নাজনীন, হাছিন আহমেদ, সারোয়ার হোসেন, মাহফুজউল্লাহ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, শহীদুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।