শেখ হাসিনার প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন বন্ধের দাবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘হাসিনা: আ ডটার’স টেল’-এর প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনী বন্ধের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2018, 02:17 PM
Updated : 17 Nov 2018, 02:31 PM

দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। সেখান এই প্রামাণ্যচিত্রে দেশের ইতিহাস, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হচ্ছে, যা নির্বাচনী আচরণ বিধির লংঘন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের অজানা-অদেখা নানা ঘটনা নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘হাসিনা: আ ডটার’স টেল’ শুক্রবার থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের চারটি প্রেক্ষাগৃহে চলছে।

১৯৫২ সালে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকায় আসা থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন ঘটনা উঠে এসেছে এই প্রামাণ্যচিত্রে।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকা অবস্থায় পরিবারের সব সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। এরপর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফেরা, দিক হারানো আওয়ামী লীগের হাল ধরে দলকে আবার কক্ষপথে ফেরানো, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রিত্ব- সব বিষয়ই প্রামাণ্যচিত্রে তুলে এনেছেন নির্মাতা।

এই প্রামাণ্যচিত্র জীবন, সংগ্রাম ও সাহসের গল্প বলছে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। প্রামাণ্যচিত্রটি দেখে রাজনীতি ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকের অভিমত, তরুণ প্রজন্মকে সাহস যোগাবে ও অনুপ্রাণিত করবে এই প্রামাণ্যচিত্র।

‘হাসিনা: আ ডটার’স টেল’ প্রামাণ্যচিত্রে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে কোলে নিয়ে শেখ হাসিনা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

তবে প্রেক্ষাগৃহে এর প্রদর্শনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের প্রধান  রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতা রিজভী বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী আচরণবিধি মালার ১৪ (২) ধারা ‘ভঙ্গ করে’ গণভবনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।

“তার ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘হাসিনা: এ ডটার’স টেল’ ডকুমেন্টারি ফিল্মটি রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টার, মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হল ও চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে।

“প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে একজন প্রার্থী। শেখ হাসিনা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সেই কারণে ইতিহাসের নানা ঘটনা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ক্ষমতার পালাবদল, ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনের নানা অভিজ্ঞতা এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি এককেন্দ্রিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা আচরণবিধির চরম লংঘন।

“অবিলম্বে শেখ হাসিনার ওপর নির্মিত ডকুমেন্টারি ফিল্মটি সিনেমা হলগুলো থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।”

নির্বাচনী আচরণবিধির ১২ ধারা তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “এখানে বলা আছে, ভোটগ্রহণের তিন সাপ্তাহ পূর্বে কোনো প্রকার প্রচার শুরু করা যাবে না। একইসঙ্গে বিধিমালার ১০ (ঙ) ধারা অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারণার জন্য প্রার্থীর ছবি বা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণামূলক কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। এই ডকুমেন্টারি ফিল্মটি কি প্রচারণামূলক নয়?”

নির্বাচনী বিধিতে পোস্টার ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা থাকার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকার কোথাও পোস্টার সাঁটানোর কোনো সুযোগ নাই। অথচ ডকুমেন্টারি ফিল্মটি সিটি করপোরেশন এলাকায় অর্থাৎ সিনেমা হলগুলোয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত পোস্টারসহ রীতিমতো মহড়া আকারে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

“ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এসব করা হলেও নির্বাচন কমিশন নীরব দর্শকের ভূমিকায়। এই কমিশন পুরোপুরি নির্বিকার।”

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দায় শেখ হাসিনার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনের প্রতি এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে রিজভী বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে বলব, আপনারা দ্রুত আচরণবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন, নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার চেষ্টা করুন। অন্যথায় আপনাদের পরিচালনায় যে নির্বাচন, তা জনগনের কাছে উপহাসে পরিণত হবে।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। শুক্রবার ঢাকা মহানগর, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আটক নেতা-কর্মীদের তালিকা তুলে ধরে তাদের মুক্তির দাবি জানান রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, নাজমুল হক নান্নু, কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফউদ্দিন বকুল, মুনির হোসেন, শাহিন শওকতসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।