জয়ী হলে কে হবেন ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী, মেলেনি উত্তর

নির্বাচন সামনে রেখে গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসেও সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের- বিজয়ী হলে কে হবেন তাদের প্রধানমন্ত্রী।   

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2018, 04:09 PM
Updated : 18 Nov 2018, 02:54 AM

শুক্রবার বিকালে ঐক্যফ্রন্টের ওই মতবিনিময়ে অংশ নেওয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের জানালেন, ওই প্রশ্নের উত্তর তিনি পাননি।

বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের নিয়ে হোটেল লেইকশোরে প্রায় দুই ঘণ্টার এই আলোচনায়, নির্বাচন, ভোটের পরিবেশ, সরকারের ভূমিকা, বিরোধী দলের প্রত্যাশাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়।

আলোচনা শেষে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে এসে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‍অবাধ ও সুষ্ঠু করতে গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

বিএনপিসহ কয়েকটি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দল নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সাত দফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়।

সংসদ ভেঙে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ছিল তাদের ওই সাত দফার মধ্যে।

এসব দাবি নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দুই দফা সংলাপে বসেছিলেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। সেখানে কোনো সমঝোতা না হলেও তারা ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে’ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শুক্রবার গুলশানের হোটেল লেকশোরে গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মতবিনিময় সভা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচন পোছানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও বৈঠক করেছে ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু সেখানেও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতাদের সংশয় কাটেনি।

বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলে আসছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জনগণ বিপুল ভোটে তাদের বিজয়ী করবে, ‘প্রত্যাখ্যান’ করবে আওয়ামী লীগকে।

কিন্তু ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে জোট বাঁধা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জয়ী হলে তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন- সেই প্রশ্ন বুধবার সামনে আনেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “আমি জানতে চাই। দেশবাসীও জানতে চায়। বলুন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? ড. কামাল হোসেন না তারেক রহমান? কে হবেন? হু ইজ দেয়ার পিএম ফেইস।”

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য ইতোমধ্যে তিনটি আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলটির নেতারা। কিন্তু দুর্নীতির দুই মামলায় তার ১৭ বছরের কারাদণ্ড হওয়ায় আদৌ তিনি ভোট করতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সংশয় কাটেনি এখনও।

আর খালেদার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত এক দশক ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন লন্ডনে। দুর্নীতির দুই মামলায় তার ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড মামলায় হয়েছে যাবজ্জীবন সাজা।

বিএনপির এই দুর্দিনে স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দল সামলাচ্ছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাত দফা দাবি নিয়ে সরকারকে আলোচনার টেবিলে বসাতে তাদের কামাল হোসেনের সঙ্গে জোট বাঁধতে হয়েছে।

ঐক্যফ্রন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে কামাল হোসেনকে তাদের ‘প্রধান নেতা’ হিসেবে বর্ণনা করে। ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন জনসভায় তাকে দেখা গেছে ‘প্রধান অতিথি’ হিসেবে, আর মির্জা ফখরুল ছিলেন ‘প্রধান বক্তা’। 

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনার মুখে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো পদ পাওয়ার ইচ্ছা তার নেই। আর তারেক রহমান সাজা মাথায় নিয়ে দেশে ফিরবেন- এমন কোনো ইংগিতও এখনও পাওয়া যায়নি।

ঐক্যফ্রন্টের দলগুলো একসঙ্গে নির্বাচনে গেলে আসন ভাগাভাগি কীভাবে হবে- সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেননি জোটের নেতারা। সেক্ষেত্রে তারা সরকার গঠন করতে পারলে কে হবেন সেই সরকারের প্রধান- সেই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে।

ঐক্যফ্রন্ট জয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী কে হবে- তা জানতে চেয়েছিলেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী, কিন্তু উত্তর পাননি

শুক্রবার সম্পাদকদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের মতবিনিময় সভা থেকে বেরিয়ে আসার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর কাছে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, ভেতরে কী আলোচনা হয়েছে।

উত্তরে তিনি বলেন, “আমি মতবিনিময় সভায় একটি প্রশ্ন করেছি, ফ্রন্ট যদি জয়লাভ করে তাহলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। সেই প্রশ্নের উত্তর আমি পাইনি।”

তিনি বলেন, সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ঐক্যফ্রন্ট যদি বিজয়ী হয় কে প্রধানমন্ত্রী হবে তা এই জোটের নেতাদের এখনই স্পষ্ট করা উচিৎ।

“যেমন আমরা ব্রিটিশ সংসদীয় ব্যবস্থা অনুসরণ করার চেষ্টা করি। ভারতে হোক, ব্রিটেনের হোক বা অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে… সবাই কিন্তু আগে থেকে জানেন যে, এই দল বা এই জোট বিজয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। সেই বিষয়টা কিন্তু এই ফ্রন্টকে স্পষ্ট করতে হবে। সেটা তারা এখনো স্পষ্ট করেননি।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল বলেছেন, তারা সম্পাদকদের মতামতগুলোর নোট রাখছেন। পরে একসঙ্গে তারা উত্তর দেবেন।

মির্জা ফখরুল ছাড়াও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে বিএনপির খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জেএসডির আসম আবদুর রব, তানিয়া রব, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মনটু, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমেদ উপস্থিত ছিলেন মত বিনিময়ে। 

আর সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন প্রথম আলোর মতিউর রহমান, হলিডের সৈয়দ কামালউদ্দিন, মানবজমিনের মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ এর নুরুল কবীর, আমাদের নতুন সময়ের নাইমুল ইসলাম খান, ঢাকা ট্রিবিউনের জাফর সোবহান, দিনকালের রেজোয়ান সিদ্দিকী এবং সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ।