অ্যাডভোকেট নিপুণ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায়ের পুত্রবধূ এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরীর মেয়ে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিপুনের সঙ্গে কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনকে আটক করা হয়েছে বলে বিএনপি দাবি করলেও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে।
বিএনপিতে সক্রিয় বেবী নাজনীন একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী। বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিলেন তিনি।
বুধবারের সংঘর্ষের সময় পুলিশের উপর হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগের তিনটি মামলায় ইতোমধ্যে ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে পুলিশ নিপুণ রায়কে গ্রেপ্তার করে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়া পল্টনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে পুলিশ বেবী নাজনীন ও নিপুণ রায়কে ধরে নিয়ে গেছে।”
বুধবারের সংঘর্ষের সময় লাঠিহাতে নিপুণের ছবি ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে। পুলিশের করা মামলায়ও তিনি আসামি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার (পূর্ব) মো. নুরুন্নবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিপুণ রায়কে আমরা অ্যারেস্ট করছি। তিনি গতকালের ঘটনার মামলার আসামি।”
বেবী নাজনীনকে আটকের খবরের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা তাকে অ্যারেস্ট করিনি।”
পুলিশের অন্য কোনো দল তাকে গ্রেপ্তার করেছে কি না- জানতে চাইলে উপ কমিশনার নুরুন্নবী বলেন, “না, কেউই করেনি। এটা গুজব।”
মহানগর ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেনও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুধু নিপুণ রায়কেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
পুলিশের করা তিনটি মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও আসামি।
গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, রাস্তা অবরোধ, পুলিশকে মারধর, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে এসব মামলা হয়েছে।
৬৫ জনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি বাকি আসামিদের ধরতে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
৩৮ জন রিমান্ডে
নয়া পল্টনে সংঘর্ষের মামলায় গ্রেপ্তার ৬৫ জনকে হেফজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনসহ বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠায় পুলিশ।
শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারী ৩৮ জনকে পাঁচ দিন রিমান্ডের আদেশ দেন; বাকি ২৭ জনকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন তিনি।
এদের অধিকাংশই বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলার আসামি।
এদের পাঁচজন মনোনয়ন ফরম কিনতে নয়া পল্টনে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতাদের আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মেসবাহ।
এদের মধ্যে রয়েছেন তরিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন, আবু বক্কর সিদ্দিক ও হেলাল উদ্দিন।
পুলিশের করা তিনটি মামলার প্রতিটিতে হুকুমের আসামি করা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, তার স্ত্রী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির সভাপতি নবীউল্লাহ নবী, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কফিল উদ্দিনকে।
পল্টন থানায় করা মামলা তিনটি তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর হয়েছে।
বুধবার (১৪ নভেম্বর) রাতে থানায় ২১ নম্বর মামলাটি দায়ের করা হয় বিস্ফোরক আইনে। ১৯২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ১৬ জনকে।
বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা ২২ নম্বর মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৫৯ জনকে। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ২৩ জনকে।
পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া অভিযোগে দণ্ডবিধিতে করা ২৩ নম্বর মামলায় আসামির তালিকায় ১৩৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ২৬ জনকে।