এমন চললে নতুন ভাবনা, হুঁশিয়ারি ফখরুলের

মনোনয়ন ফরম বিতরণের সময় বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সহিংসতার জন্য সরকার ও ইসিকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতেও পারেন তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2018, 06:37 PM
Updated : 14 Nov 2018, 06:37 PM

বুধবার দুপুরে সংঘর্ষের পর বিকালে সিইসির সঙ্গে বৈঠক থেকে ফিরে রাতে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের পাল্টায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন বানচালের লক্ষ্যে ক্ষমতাসীনরাই পরিকল্পিতভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং পুলিশের উপর হামলাকারীরা আওয়ামী লীগেরই লোক।

নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের জন্য বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আওয়ামী লীগের আহ্বানের পাল্টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাড়িতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ের বৈঠক নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ফখরুল।

তফসিল ঘোষণার পর রাজনীতির মাঠ সরগরম হয়ে ওঠার মধ্যে বুধবার দুপুরে ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রির সময় পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ বাঁধে। ওই সময় পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।

পুলিশের পক্ষ থেকে হামলার জন্য বিএনপিকে দায়ী করা হয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সন্ত্রাসে নেমেছে বিএনপি।

ফখরুল বলেন, “বিনা কারণে বিনা উস্কানিতে নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ ঢুকে হঠাৎ করে বাধা দিতে শুরু করে এবং এরপরেই টিয়ারগ্যাস ছোড়া হয়েছে, সাথে সাথেই গুলি চালানো হয়েছে। বহু নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।”

দুপুরের ঘটনার পর সন্ধ্যায় নয়া পল্টনের কার্যালয় থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা বের হওয়ার পর পুলিশি আটকাভিযানের মুখে পড়েন বলে তিনি জানান।

“যারা বেরিয়েছেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের বগুড়ার সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান লালু, গ্রাম সরকার সম্পাদক আনিস উজ্জামান খান বাবু এবং খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমির রেজা খানসহ কমপক্ষে ৬০/৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

“এটাকে আমরা হালকা করে দেখছি না।  আমরা নির্বাচন কমিশনকে পরিষ্কার বলতে চাই, এই মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। পুলিশ প্রশাসনকে বলতে চাই, অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় এই নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করব না। এর দায়-দায়িত্ব বর্তাবে সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের ও সরকারের উপরে,” বলেন ফখরুল।

সিইসির সঙ্গে বৈঠকের পর ইসিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

সংবাদ সম্মেলনের আগে ওই কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য আজকে আমাদের কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ নেতা-কর্মীদের উপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। এসব সহিংসতা করে তারা নির্বাচনকে বানচাল করতে চায়।

“আমি স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, আমরা কোনোভাবেই নির্বাচন বানচাল করতে দেব না। আমরা মনে করি, নির্বাচনের মাধ্যমেই এই সরকারের অপসারণ হবে, নির্বাচনই সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পথ।”

হামলাকারীরা ‘ছাত্রলীগের’

নয়া পল্টনে সংঘর্ষের সময় পুলিশের উপর হামলাকারী হেলমেটধারী যুবকরা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

তিনি বলেন, “হঠাৎ করেই পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগালো। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগালো কারা?”

কিছু ছবি দেখিয়ে ফখরুল বলেন, “এই ছবিগুলো দেখুন। হেলমেট পরা কিছু মানুষ এসে ওই গাড়ির ওপরে আক্রমণ শুরু করলো।

“আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি এই হেলমেট পরা লোকজন ছাত্রলীগের। অসমর্থিত খবরে আমরা এটা জানতে পেরেছি। আজকের এই হামলা সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিত। পুলিশ আক্রমণ করেছে এবং তাদের ছত্রছায়ায় গাড়িতে আগুন লাগিয়েছে হেলমেট বাহিনী।”

ঢাকার নয়াপল্টনে বুধবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিএনপি কর্মীরা। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

এই প্রসঙ্গে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় হেলমেটধারী যুবকদের তৎপরতার কথাও বলেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে, বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, যখন উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তখনই এই আক্রমণ। সেই আক্রমণটা সরাসরি সরকারের কাছ থেকে, নির্বাচন কমিশনের যোগসাজশে আসল।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে একটি মিছিল আসার পরপরই পুলিশের উপর হামলা হয় বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

এ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ~ঘটনার পর সরকারের একটি নির্দিষ্ট মহল অভিযোগ করল যে, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা অত্যন্ত সাজানো একটা পরিকল্পনা।

“সেই পরিকল্পনা হচ্ছে, এই সাজানো হামলা চালিয়ে বিএনপিকে দায়ী করে আবার বিএনপির ওপর হামলা নির্যাতন শুরু করা। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আজকে সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য এই প্লট তৈরি করেছে।”

নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন বন্ধে পুলিশকে ইসির নির্দেশনার প্রসঙ্গ তুলে ফখরুল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আজকে গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ব্যক্তির সাথে মিটিং করেছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠান গণভবনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর পদকে অপব্যবহার করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তিনি নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করেছেন।

“আমরা দেখতে চাই, নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে।”

কৃষক লীগ নেতা বিএনপিতে

গাইবান্ধার নেতা কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ফারুক আলম সরকার বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন।

তার যোগদান উপলক্ষে রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠান হয়। তাকে বিএনপিতে স্বাগত জানান মির্জা ফখরুল।

বিএনপিতে যোগ দিলেন গাইবান্ধার নেতা কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ফারুক আলম সরকার

অনুষ্ঠানের শুরুতে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, গাইবান্ধা জেলা সভাপতি সৈয়দ মইনুল হাসান সাদিক, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবী টুটুল ও শাঘাটা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মইন প্রধান লাবু।

কাদের সিদ্দিকী নয়া পল্টনে

এদিকে রাত ৯টায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে যান। সেখানে তিনি বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে কথা বলেন এবং দুপুরে সহিংসতার পুরো ঘটনা শোনেন।