এমন নির্বাচনই দেশের মানুষ চায়: হাওলাদার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয়গুলোতে জনসমাগম উৎসবমুখর নির্বাচনী পরিবেশের প্রমাণ দিচ্ছে বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির নেতা এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2018, 03:44 PM
Updated : 14 Nov 2018, 03:44 PM

এ রকম নির্বাচনী পরিবেশই দেশের মানুষের চাওয়া বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

পাঁচ বছর আগে বিএনপি ও তার জোট শরিকরা দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে তা প্রতিহতের কর্মসূচি দেওয়ায় সহিংসতা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। সে সময় নাশকতার নানা ঘটনায় প্রাণ হারান অনেকে।

এবার বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে ফরম বিক্রি শুরু করেছে। ফরম বিক্রি ঘিরে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর সমাগম ঘটেছে আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডির কার্যালয়ে। গত তিন দিন ধরে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে।

জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ফরম বিক্রির চতুর্থ দিনে বুধবার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গিয়ে এই পরিবেশ নিয়েই কথা বলেন হাওলাদার।

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর অফিসের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন শুরু হয়েছে। দেশের মানুষও এমন উৎসবমুখর নির্বাচন চায়।”

দলীয় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তে মহাজোটে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে বসে আসন বণ্টনের বিষয়টি ফায়সালা করা হবে বলে জানান জাতীয় পার্টির এই নেতা।

“মহাজোটের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে,” বলেন তিনি।

তবে কবে বৈঠক হবে তা এখনও চূড়ান্ত করেনি জাতীয় পার্টি। বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে কতজন প্রতিনিধি থাকবে তা নিয়েও হয়নি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাওলাদার বলেন, “নির্বাচনে জয়যুক্ত হতে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকেই ছাড় দিতে হবে, সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।”

এবার একাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ জানিয়েছিলেন, বিএনপি ভোটে এলে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করবে, আর বিএনপি না এলে তারা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে।

বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিলে দলের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার জানানো হয়, জাতীয় পার্টি মহাজোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে।

হাওলাদার বলেন, মহাজোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে দর কষাকষি শুরু করবেন তারা।

এর আগে এক সভায় জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মহাজোটের কাছে জাতীয় পার্টি ১০০ আসন চাইতে পারে।

তবে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, তারা ৭০টি আসন পাওয়ার ‘প্রত্যাশা’ করেন।

বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচন এইচ এম এরশাদের দল আলাদাভাবে অংশ নিলেও ২০০৮ সালের নির্বাচন জোট বেঁধেই নির্বাচন করেছিল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি।

২০০৯-১৩ মেয়াদে মহাজোট সরকারের শরিক হিসাবে ছিল এরশাদের দল জাতীয় পার্টি। আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত সরকার ও বিরোধী দল- দুই জায়গাতেই জাতীয় পার্টিকে দেখা যাচ্ছে।   

বিকালে জাতীয় পাটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার বনানী অফিস থেকে ৪৩২টি দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এ নিয়ে চার দিনে সর্বমোট দুই হাজার ৪১৮টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হল।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “আশা করছি, বিএনপি নির্বাচনে এসে তাদের জাতীয় দায়িত্ব পালন করবে। সকল দল নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করলে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।”

রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতা থাকলে ‘ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায়’ নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি হবে বলে মনে করেন তিনি।

আগামী ১৭ ও ১৮ নভেম্বর জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে। ১৭ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হবে খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, রংপুরের  মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার।

পরদিন নেওয়া হবে সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের ১৫ জন সদস্য।