একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিতরণের তৃতীয় দিন বুধবার দুপুরে নয়া পল্টনে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর এবং পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। নাশকতার এসব ঘটনায় মুখে কোনো আবরণ না থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কয়েকজন হেলমেটধারীকে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আপনারা দেখেছেন গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। আমি আপনাদের সামনে সেই পুরনো ঘটনার কথা বলতে চাই। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলন আপনারা দেখেছেন না? ওই আন্দোলন দমন করতে যায় হেলমেটধারীরা। আজকেও এখানে তাদের তৎপরতা।”
ঘটনার সময় বিএনপি কার্যালয়ের তিন তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে জানান রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “আমি এই তিন তলা থেকে দেখেছি, কিছু হেলমেটধারীর তৎপরতা এবং তারা মটরসাইকেলগুলো যেখানে আছে, সেখানেও কিন্তু যাচ্ছে। নেতা-কর্মীরা এখান থেকে হৈ হৈ করে উঠেছে। মটরসাইকেলের দিকে তারা আগুন লাগাতে গেছে।”
এই ঘটনাকে বিনা উসকানিতে পুলিশের ওপর হামলা হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন বানচালের ‘ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে’ বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে।
তবে পুরো ঘটনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেছেন বিএনপি নেতা রিজভী।
অভিযোগের পক্ষে যুক্তি হিসেবে মঙ্গলবার পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্বাচন কমিশনের পাঠানো চিঠির বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি। ওই চিঠিতে দলীয় কার্যালয় বা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা নিয়ে যে কোনো মিছিল-শোডাউন বন্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
রিজভী বলেন, “আপনারা ইতিমধ্যে দেখেছেন চার-পাঁচ দিন আওয়ামী লীগের অফিসের পাশে-পাশের রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিন সংঘর্ষ লেগে থেকেছে। এটির জের হিসেবে আদাবরে দুইজন মারাও গেছে। এক্ষেত্রে সিইসি ও কমিশনারগণ কোনো বিধি-নিষেধ জারি করলেন না, আইজিকে বললেন না, এসব নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন হচ্ছে।
“কিন্তু নয়া পল্টনে গতকাল নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি দেখে ওদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে- এটা কী কাণ্ড নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেই এই অবস্থা! তাই সরকারের প্রতিভূ হয়ে সিইসির নেতৃত্বে কমিশনের কিছু উর্ধ্বতন কর্মকর্তাই আজকে দায়ী বিএনপির নেতা-কর্মীদের রক্তাক্ত করা, আজকে সহিংস ঘটনার জন্য।”
এদিনের ঘটনায় ৫০ জনের বেশি নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, “পুলিশ সকাল থেকেই নানাভাবে আমাদের নেতা-কর্মীদের বাধা দিচ্ছিল, হেনস্তা করছিল। তখনই মনে হচ্ছিল যে, পুলিশের কোনো একটা অশুভ উদ্দেশ্য আছে আজকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জমায়েতের উপর।”
এ ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রিজভী বলেন, “নির্বাচন বানচালের জন্য আমরা নই, গণবিচ্ছিন্ন সরকারই বিনা ভোটে অথবা ভোটবিহীন নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে।
“এটা ওবায়দুল কাদেরদের চক্রান্ত, এত নির্যাতন করলাম তার পরেও কেন এতো লোক এখানে আসছে? তারাই নির্বাচন বানচাল করতে চায়, কারণ তারা গণবিচ্ছিন্ন।”
এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৭৭টি ফরম বিক্রি এবং ৩৩৭টি জমা পড়েছে। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, মুনির হোসেন, সাইফুল ইসলাম পটু, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের নেতা শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।