পুলিশের হামলা ‘সরকারের নির্দেশে’, অভিযোগ বিএনপির

পুলিশ ‘সরকারের নির্দেশে’ নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের ওপর ‘হামলা’ চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2018, 09:36 AM
Updated : 14 Nov 2018, 09:41 AM

তিনি বলেছেন, “আপনারা আজ যা করলেন, আপনারা মৌচাকে ঢিল মেরেছেন কেন? আপনারা মনে করেন গুলির ভয়ে জাতীয়বাদী শক্তি মাটির নিচে ঢুকে যাবে? ঢুকে যাবে না। … লাঠিচার্জ করে, টিয়ারগ্যাস মেরে দমন করতে পারবেন না।”

নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিক্রির তৃতীয় দিন বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক ঘণ্টার বেশি সময় সংঘর্ষ চলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপি কর্মীদের একটি বড় মিছিল ফকিরাপুলের দিক থেকে বিএনপি কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে মিছিল নিয়ে যেতে নিষেধ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়।

বিএনপি কর্মীরা পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়তে শুরু করলে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে চলে লাঠিপেটা।

এক পর্যায়ে বিএনপি কর্মীরা নয়া পল্টনের সড়কে থাকা বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বিনা উসকানিতে সংঘর্ষে জড়িয়েছে অভিযোগ করে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, তাদের অন্তত ১৩ জন সদস্য এ ঘটনায় আহত হয়েছেন।

সংঘর্ষের পর বেলা ২টার দিকে বিএনপি কার্যালয় থেকে নেমে এসে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানাতে গিয়ে এ ঘটনার জন্য পুলিশ ও সরকারকে দায়ী করেন রিজভী।

তিনি বলেন, “আজকে পুলিশ বিনা উসকানিতে আমাদের ভাইদের গুলি করল, তারা লাঠিচার্জ করল, টিয়ার গ্যাস মারল। এই যে শান্তিপূর্ণ প্রাণের মেলা যেটি বসেছিল, সেই প্রাণের মেলার ওপর তারা আঘাত করে অশান্তি সৃষ্টি করল।”

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “আমি মনে করি, এই আক্রমণ সরকারের নির্দেশেই হয়েছে, সরকার প্রধানের নির্দেশে হয়েছে। এই আক্রমণের বিনিময়ে আমরা শান্তি নষ্ট করব না। আমি বিনা উসকানিতে পুলিশের এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি, ধিক্কার জানাচ্ছি।”

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে তাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

“কেউ কোনো ফাঁদে পা দেবেন না। যতই উসকানি দিক সরকারের লোকেরা, পা দেবেন না। ফুটপাতে অবস্থান করে আপনারা আমাদের মনোনয়ন ফরম বিক্রি এবং জমা নেওয়ার কার্য্ক্রমে সহযোগিতা করুন। হিমালয় পর্বতের মত আপনারা এখানে অবস্থান করবেন।”

রিজভী বলেন, এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা আব্বাস, মহানগর দক্ষিণের যুব দল মেহেদী হাসান নয়ন, মতিঝিল যুবদলের নেতা মকবুল, খিলগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মোক্তার, মুগদা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সুমন, কলাবাগান স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সুমন, মুগদা থানা বিএনপির নেতা আরিফ, শাহজাহানপুর ছাত্রদলের মহীউদ্দিন, হাসান, টুটুল, শাহবাগের কামাল, পল্টনের আবদুল কাদির, সবুজবাগের মুনির, সাইফুল, মেহেদী হাসান মিরাজ, রমনার গিয়াস উদ্দিন মানিক, যুবদল নেতা হৃদয় শেখ, রতন, আসাদুজ্জামান, শামসুল হক, আবদুর রাজ্জাক, খিলগাঁও থানা মনিরুজ্জামানসহ ‘অসংখ্য’ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

আহত নেতা-কর্মীদের অনেকে বিএনপি অফিসের ভেতরে ড্যাবের চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও তখন কার্যালয়ে ছিলেন।

পুলিশের উদ্দেশে রিজভী বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানাব, আপনারা কারো অন্যায় নির্দেশ কাজ করবেন না। আপনারা এদেশের সন্তান, আমাদেরই আত্মীয়-স্বজন আপনারা। কারো স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে শান্তি বিঘ্নিত হয়, গণতন্ত্রের বিপক্ষে যায়।”

রিজভীর বক্তব্যের পর নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ের সামনে সমবেত হয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে শ্লোগান দিতে থাকেন।

দলের সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, সংঘর্ষের কারণে দুপুরে ঘণ্টাখানেক মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমার কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও বেলা ২টার পর আবার শুরু হয়।