ভোটের হাওয়ায় ফের সরগরম নয়া পল্টন

এক দশক ধরে ক্ষমতায় না থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশি বাধায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে না পারলেও জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ উপলক্ষে বিপুল সংখ্যায় তাদের উপস্থিতি ঘটছে নয়া পল্টনে।

সুমন মাহমুদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2018, 12:20 PM
Updated : 13 Nov 2018, 02:24 PM

পাঁচ বছর আগের নির্বাচন বর্জন করে আসা বিএনপি এবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই দলটির নেতাকর্মীদের নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা দেখা যায়। নির্বাচন নিয়ে ফেইসবুকে নানা পোস্ট দিচ্ছেন অনেকে।

দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে সোমবার মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করে বিএনপি। প্রথম দিনে এক হাজার ৩২৬টি ফরম সংগ্রহ করেন দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবারও  সকাল থেকেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়। দিনভর অপেক্ষায় থেকে ফরম সংগ্রহ করছেন তারা।

নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে দিনভর সরগরম থাকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তা। সে কারণে ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে সারা দিন, যাতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে।

নেতাকর্মীদের এই উপস্থিতিতে উচ্ছ্বসিত দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “জাতীয়তাবাদী শক্তির যে উত্থান ঘটেছে, আজকে নয়া পল্টনের অফিসের সামনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহে আসা নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের জনস্রোত তার প্রমাণ। মানুষের উপস্থিতিতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই।

“চরম কষ্ট করে নেতৃবৃন্দ তাদের কর্মীদের নিয়ে এত গরমের মধ্যে ফরম সংগ্রহ করছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর বিরোধী দলে যাওয়া বিএনপি বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সভা-সমাবেশ করতে পারলেও সেই চিত্রও পাল্টে যায় একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ওই নির্বাচন বর্জন এবং প্রতিহতের ডাক দেয় বিএনপি। সে সময় তাদের আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় অনেকের প্রাণহানি ঘটে।

এরপর ওই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাস বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের টানা অবরোধ-হরতালে গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপসহ নাশকতার বিভিন্ন ঘটনায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।

সেই থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক তৎপরতা দৃশ্যত সংকুচিত হয়ে আসে। নাশকতার বিভিন্ন মামলায় আসামি হন হাজার হাজার নেতাকর্মী, গ্রেপ্তার হন অনেকে। অপরদিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনেও সভা-সমাবেশের জন্য পুলিশের অনুমতি চেয়ে বার বার ব্যর্থ হতে হয় দলটিকে।

দলটি আবার নির্বাচনমুখী হওয়ায় কয়েক বছর পর আগের চেহারায় ফিরেছে তাদের নয়া পল্টনের কার্যালয়। এদিন সকাল ১০টা থেকে ফরম বিক্রি শুরু হলেও নেতা-কর্মীরা সড়কে অবস্থান নেন ৮টা থেকেই। সাড়ে ৯টার পর ফকিরাপুল থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁর মোড় পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং তাদের অনুসারীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। ব্যাপক মানুষের উপস্থিতিতে এই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নয়া পল্টন সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন গলি ও বিপনীবিতানগুলোতেও নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখা যায়।

মনোনয়ন ফরম সংগ্রহে ধানের ছড়া নিয়ে আসেন নেতাকর্মীরা। নারায়ণগঞ্জ থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম ব্যান্ড দলের পাশাপাশি দুটি হাতি নিয়ে আসেন।

হাতি ও ঘোড়া গাড়ির বহর নিয়ে নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয় অভিমুখে এক মনোনয়নপ্রত্যাশীর মিছিল। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

নেতাকর্মীদের অনেকের হাতে হাতে ছিল খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড। ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, দেশনেত্রীর মুক্তি চাই,’ স্লোগানে সারা দিন ওই এলাকা মুখর করে রাখেন তারা।

বিএনপির মনোনয়ন ফরমের জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তবে জমা দেওয়ার সময় জামানত হিসেবে দিতে হচ্ছে আরও ২৫ হাজার টাকা। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমা দিতে পারবেন দলটির প্রার্থী হতে ইচ্ছুকরা।

নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে মঙ্গলবার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে আসা নেতাকর্মীদের হাতে দেখা যায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লার দুটি আসনে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তার পক্ষে ছেলে খন্দকার মারুফ হোসেন ফরম দুটি তোলেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকার কেরানীগঞ্জ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া আসন থেকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ নেতা-কর্মীদের নিয়ে ফরম কিনতে আসেন। কুমিল্লা-৬ ও ১০ আসনের জন্য দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কারাবন্দি মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে।

ফেনী-৩ আসনের জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ফেনী-২ আসনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ভিপি জয়নাল আবেদীন, ময়মনসিংহ- ৪ আসনে ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা- ১ আসনে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বরিশাল-৩ আসনে ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, পটুয়াখালী-১ আসনে ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ঝালকাঠি-১ আসনে ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে আহমেদ আজম খান মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

দলের স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য আ স ম হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান গাজীপুর-৪ আসনের জন্য, গাজীপুরের সাবেক মেয়র ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এবং প্রবীণ শ্রমিক নেতা ও মহানগর সভাপতি হাসান উদ্দিন সরকার গাজীপুর-২ আসনের জন্য, দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন গাজীপুর-৩ আসনের জন্য, জেলা সাধারণ সম্পাদক সাইয়েদ্যুল আলম বাবুল ও কালিয়াকৈরের মেয়র মজিবুর রহমান গাজীপুর- ১ আসনের জন্য, কারাব‌ন্দি চট্টগ্রাম মহানগর বিএন‌পির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের পক্ষে চট্টগ্রাম ৯ আসনের মনোনয়ন ফরম তোলা হয়, ড্যাবের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু ও জেলা যুগ্ম সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সবুজ গাজীপুর-৫ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান নরসিংদী-৩ আসনে এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল নরসিংদী-৪ আসনে, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান মাদারীপুর-১ আসনের জন্য ফরম কিনেছেন।

জামালপুর-৩ আসনে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও দলের কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে শরীফুল আলম, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক ঢাকা -১৪ ও ১৬ আসনের জন্য এবং অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া ঢাকা-৪ আসনের জন্য, নেত্রকোনা-৪ আসনে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

সোমবার দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে ফেনী-১, বগুড়া-৬ ৩ ৭ আসনের জন্য ফরম কিনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফরম বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও -১ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কেনেন ওই দিনই।