বাম জোটও নির্বাচনে আসছে ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে’

বিএনপি ও তার সমমনাদের পর নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে সিপিবি-বাসদ নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2018, 10:55 AM
Updated : 13 Nov 2018, 10:55 AM

পাঁচ বছর আগে ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে বিএনপি জোটের পাশাপাশি তারাও নির্বাচন বর্জন করেছিল।

এবারও সেই দাবি পূরণ না হলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় বামজোটের নেতারা বলছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের অংশ হিসেবেই তারা এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

২০১৪ সালের ভোট বর্জন করে তিন দশকের মধ্যে প্রথম সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি নেতারাও এবার ভোটে অংশ নেওয়ার পক্ষে যে যুক্তি দিয়েছেন, তাও অনেকটা এরকম।

দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি ছিল তাদের। কোনো দাবি পূরণ না হলেও এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তারা। ‘আন্দোলনের অংশ’ হিসেবেই নির্বাচনে যাওয়া বলে ব্যাখ্যা দিয়ে আসছেন বিএনপি নেতারা।

বাম জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি সমাধান না করে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণা করায় একতরফা নির্বাচনের জন্য সরকার ফাঁদ পেতেছে বলে জনমনে ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশন ও সরকারের দায়িত্বশীল আচরণ ও ভোট নিয়ে শঙ্কা দূর করার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি।

“একই সাথে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের ফাঁদে পা না দিয়ে, আন্দোলনের অংশ হিসেবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।"

সংবাদ সম্মেলনে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “আমাদের দেশে এখন লুটপাটতন্ত্র চালু আছে। লুটপাটতন্ত্রের জন্য ক্ষমতায় থাকাটা অত্যাবশ্যক হয়ে গেছে৷ ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রহসন ও তামাশার নির্বাচনও অপরিহার্য হয়ে গেছে৷ আমরা এভাবে চক্রাকারে ঘুরপাক খাচ্ছি। যেখানে পাকিস্তান আমল থেকে অবাধ নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি, সেই সংগ্রাম এখনও পরিপূর্ণভাবে শেষ করতে পারিনি।"

তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগ-বিএনপি বিরোধী দলে থাকলে অবাধ নির্বাচনের জন্য পাগল হয়ে যায়; কিন্তু একই দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন তারা নির্বাচনকে কীভাবে দক্ষতার সঙ্গে প্রহসণমূলক করা যায় সেই তৎপরতা করে।"

এজন্য দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।

সেলিম বলেন, “অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এবং আওয়ামী লীগ বিএনপির বাইরে বিকল্প গড়ে তোলার জন্য, আমাদের লড়াই অব্যাহত রেখেই আমরা নির্বাচন সংগ্রামে অবতীর্ণ হব।"

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে সংশয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, এই নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না, এটা ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন হবে। আমরা যে ধরনের নির্বাচন চাই সেই ধরনের নির্বাচন হবে না, সেই জন্য আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।"

সিপিবি সভাপতি সেলিম বলেন, "নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা মানেই নির্বাচনকে সুষ্ঠু বলে ধরে নেওয়া যায় না, বরং একটা ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করছি, আমাদের বৃহত্তর সংগ্রাম নির্বাচনকে অবাধ নিরপেক্ষ করা। "

জোটের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “দেশে নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হয়নি। সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে মানুষ বিশ্বাসও করে না। মানুষের মধ্যে বিশ্বাস সৃষ্টির জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷"

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের দেহের যে ভাষা, সেই ভাষাতেই বোঝা যায় সরকার যে নির্বাচনের ছক দিয়েছে, সেই ছক ধরে নির্বাচন কমিশন হাঁটছে৷"

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বাম জোটের শরিক দল বাসদের নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের নেতা আবদুস সাত্তার, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা মানস নন্দী, গণসংহতি আন্দোলেনর জুলহাস নাঈন বাবু উপস্থিত ছিলেন।