ভোটে যাচ্ছে ২০ দল, বিএনপির ধানের শীষ পাচ্ছে ৭ শরিক

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট জোটবদ্ধভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2018, 11:22 AM
Updated : 11 Nov 2018, 12:28 PM

এদিকে বিএনপি তাদের জোটের সাত শরিক দলকে ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহারের অনুমতি দিতে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে।

জোটের নেতা এলডিপি সভাপতি অলি আহমেদ রোববার দুপুরে গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “জনগণের প্রতি আস্থা আছে বলে আমরা ২০ দলীয় জোট প্রতিকূলতার মধ্যেও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করছি।”

তিনি বলেন, ‘‘সরকারের দুর্নীতি, অনাচারসহ তিস্তার পানি আনতে ব্যর্থতা ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষায় সীমাহীন ব্যর্থতার বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিৎ বলে আমরা মনে করি। সেই কারণে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।”

বিএনপিকে নিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রোববার যখন জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছিল, তখনই গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের সংবাদ সম্মেলন চলছিল।  

খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতারা বলে আসছিলেন, দাবি পূরণ না হলে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

ক্ষমতাসীনদের অনড় অবস্থানে সেই দাবি পূরণ না হলেও এখন ভোটে আসার ঘোষণা দিল ২০ দলীয় জোট। তবে ঐক্যফ্রন্টের মত ২০ দলীয় জোটও নির্বাচন একমাস পেছানোর দাবি জানিয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে অলি আহমেদ বলেন, “আমরা দাবি করছি, সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে। তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন কোনো সমস্যার সৃষ্টি করবে না।

“অবিলম্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করবে। অবাধ সুষ্ঠূ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের হয়রানি করবে না।”

ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেও ২০ দলের সমঝোতা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন অলি আহমেদ।

২৩ ডিসেম্বর ভোটের দিন রেখে নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে তফসিল ঘোষণা করেছে, সেখানে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা এবং ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় রাখা হয়েছে।

জোটগতভাবে নির্বাচন করলে এবং শরিক দলের প্রতীক ব্যবহার করতে চাইলে রোববারের মধ্যেই তা জানাতে সব নিবন্ধিত দলকে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এর ধারাবাহিকতায় বিএনপি তাদের সাত শরিক দলকে ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার কথা ইসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তির সরকার, সাবেক আমলা আবদুল বারী ও প্রেস উইং কর্মকর্তা শায়েরুল কবির রোববার বিকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠি নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে পৌঁছে দেন।

চিঠিতে বলা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আটটি দলের যৌথভাবে মনোনীত প্রার্থীরা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহার করবেন।

বিএনপি ছাড়া বাকি সাত দল হল- কল্যাণ পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্ট (জাগপা), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।

পরে বিজন কান্তি সরকার সাংবাদিকদের বলেন, এক প্রতীক ব্যবহারের জন্য জোটের নিবন্ধিত আটটি দলের তালিকা তারা কমিশনে জমা দিয়েছেন।

 “সেইসঙ্গে নির্বাচন এক মাস পেছানোর জন্য ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র হিসেবে বিএনপি মহাসচিবের আরেকটি চিঠি কমিশনকে দেওয়া হয়েছে।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ২০ দলের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক আবদুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের এমএ রকীব, খেলাফত মজলিশের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, এনডিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, পিপিবির রিটা রহমান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার, মন্ডল উপস্থিত ছিলেন।