চিকিৎসকের অনুমোদন ছাড়াই খালেদা কারাগারে: জাহিদ হোসেন

পুরোপুরি সুস্থতা নিশ্চিত না করে মেডিকেল বোর্ডের প্রধানের অনুমোদন ছাড়াই খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2018, 11:15 AM
Updated : 8 Nov 2018, 11:15 AM

এক মাস চিকিৎসার পর বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে নিয়ে সেখানে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে হাজির করা হয়।

পরে দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মহাসচিব জাহিদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে এসে ওই অভিযোগ তোলেন।

এর আগে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘অনেকটাই স্থিতিশীল’ বলে জানায়। তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলও সাংবাদিকদের বলেছেন, হাসপাতালের ছাড়পত্র পেয়েই খালেদা জিয়াকে কারাগারে আনা হয়েছে।

কারাগারে স্থাপিত এচলাসে খালেদা জিয়াকে ‘সুস্থ এবং উৎফুল্ল’ দেখেছেন বলেও দাবি করেন দুদুকের আইনজীবী।

চিকিৎসকদের সংবাদ সম্মেলনে জাহিদ হোসেন বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক জলিলুর রহমান চৌধুরী এই মুহূর্তে দেশের বাইরে। বোর্ডের আরেকজন সদস্য ডা. বদরুন্নেসা দেশের বাইরে।

“অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক চৌধুরী, যার অধীনে বেগম খালেদা জিয়া ভর্তি, তিনি গতকালই বিদেশ থেকে ফিরেছেন। তার সাথে কোনো পরামর্শ না করেই উনার ডিপার্টমেন্টের অধীনে ভর্তি থাকা অবস্থায় কারো সাথে পরামর্শ না করেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সুনির্দিষ্টভাবে সরকারের ইচ্ছায় কারা কর্তৃপক্ষ আজকে বেগম খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ থেকে নিয়ে গেছে।”

বিএনপির এই চিকিৎসক নেতা আরো বলেন, “বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য উনার ব্যথা আগের থেকে বেড়েছে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, উনার অবস্থা স্থিতিশীল। যেসব মেশিনারি দিয়ে উনাকে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হত সেটা একটা সুপারভাইসড স্পেশালাইড সেন্টারে দেওয়া হতো। তা কিভাবে কারাগারে দেওয়া হবে আমাদের বোধগম্য নয়।”

অধ্যাপক জাহিদ বলেন, “যে হুইল চেয়ারে করে তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন সেই চেয়ারে করেই তাকে নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ যে রোগীকে উনারা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনলেন, সেই রোগীর চিকিৎসার কোনো উন্নতি আমরা দূর থেকে অথবা আপনারা মিডিয়ার যারা উপস্থিত ছিলেন, কেউ অবলোকন করেছেন কিনা আমরা জানি না।

“সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, যার অধীনে উনি ভর্তি ছিলেন- অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, উনার কোনো ছাড়পত্র লেখার সৌভাগ্য হয়নি এবং রোগীর কী রোগ হয়েছে সেটি লেখারও সৌভাগ্য হয়নি।”

তিনি দাবি করেন, খালেদা জিয়াকে ১১টা ২৬ মিনিটে গাড়িতে তুলে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু দুপুর ১টা ০৫ মিনিটে অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক যখন ডি ব্লকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে, সে সময় তাকে সেখান থেকে বের করে এনে হাসপাতালের পরিচালক একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলেন সই করতে। পরে তিনি সেই কাগজে সই করেন বলে অভিযোগ জাহিদ হোসেনর।

“আমরা জানি হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়, ডিসচার্জ সাটিফিকেট লেখা হলে তারপরে রোগী যায়। এখানে পুরোটাই উল্টো। রোগীকে ১১টা ২৬ মিনিটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তড়িঘড়ি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি কাগজ লিখেছে, যেটির মধ্যে সৈয়দ আতিকুল হকসহ যেসব চিকিৎসক সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের মেডিকেল সার্টিফিকেট অথবা ডিসচার্জ সামারি অথবা কেইস সামারি কিছুই তৈরি ছিল না।”

অধ্যাপক জাহিদ বলেন, “যখন পরিচালক মহোদয় সৈয়দ আতিকুল হককে বলেছেন আপনি এটাতে সই করে দেন, তখন তিনি বলেছেন ‘আমি তো রোগীকে ছুটিই দেই নাই, রোগী গেল কখন?’ তখন পরিচালক মহোদয় বলেছেন ‘রোগী অনেক আগেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এখন আপনি সই করে দেন। তখন আতিকুল হক বলেছেন ‘আমার রোগী তো ছুটির মতো হয় নাই’।

“সাংবাদিকরা সৈয়দ আতিকুল হকের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন এবং যোগাযোগ করলে আমার কথার যথার্থতা আপনারা বের করতে পারবেন। অধ্যাপক জলিলুর রহমান চৌধুরী ও ডা. বদরুন্নেসা কোথায় আপনারা খোঁজ নিলে জানতে পারবেন।”

বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল ও তিনি আগের চেয়ে ভালো আছেন- পরিচালকের এমন বক্তব্যের জবাবে জাহিদ হোসেন বলেন, “আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সর্বোপরি একজন মানুষ, একজন রোগী। তিনি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসার দাবিদার। এদেশের নাগরিক হিসেবে, দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে এবং স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী, সাবেক সেনাপ্রধানের সহধর্মিনী, রাষ্ট্রপতির সহধর্মিনী, দেশের গণতন্ত্রের আন্দোলনের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত নেত্রীর প্রতি আজকে যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে, এটা নিন্দনীয়।

“আমরা মনে করি, একজন রোগীর অধিকার যেভাবে ভুলন্ঠিত হয়েছে, তা নজিরবিহীন ঘটনা।”

সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম, আবদুল মান্নান মিয়া, আবদুল কুদ্দুস, সিরাজউদ্দিন আহমেদ, আমিনুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।