কামালকে বিএনপির সঙ্গে যেতে ’না’ করেছিল সিপিবি

বিএনপির সঙ্গে জোটে না থাকার কারণ ব্যাখ্যায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, এক ’দুঃশাসনের’ অপসারণের জন্য আরেক ‘দুঃশাসন’ কায়েমের ঐক্য চান না তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2018, 07:10 PM
Updated : 7 Nov 2018, 07:25 PM

সেই কারণেই গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেনকে বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট না করার অনুরোধ করেছিলেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম শরিক দল সিপিবির সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বিদলীয় মেরুকরণ থেকে বেরিয়ে একটি তৃতীয় শক্তি গড়ার সংগ্রামে অবিচল রয়েছেন তারা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিতে ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি এবারও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করে আসছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের দাবিতে সাড়া না দেওয়ার প্রেক্ষাপটে অক্টোবরেই বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দেন কামাল হোসেন।

তার চিঠিতে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দফায় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে বসলেও নির্বাচনকালীন সরকারসহ তাদের দাবিগুলোর বিষয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি।

বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনে ‘রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ১০১তম বার্ষিকীর’ আলোচনায় মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “এবারও কামাল সাহেবকে আমরা বলেছিলাম যে, আপনি বিএনপির সঙ্গে যাইয়েন না। দ্বিদলীয় মেরুকরণের বাইরে থাকেন, আমরা একসঙ্গে সামনের দিকে অগ্রসর হব। সিদ্ধান্ত আপনাকে নিতে হবে। উনি থাকলেন না, ওইটার সঙ্গে গেলেন।”

তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মঞ্চে কামাল হোসেন যে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ও বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করেছেন সেই কথা উল্লেখ করেছেন সিপিবি সভাপতি।

“এটা ঠিক ওই মঞ্চে কেউ স্লোগান না দিলেও কামাল সাহেব জয় বাংলা স্লোগান দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর কথা বলেছেন।”

গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন

এর আগে ২০০৬ সালেও সে সময়ের ক্ষমতাসীন দল বিএনপির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে কামাল হোসেনের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে অংশ নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন সেলিম।

তিনি বলেন, “দেখেন যখন হাওয়া ভবনের রাজত্ব ছিল তখন হাওয়া ভবনের অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বৃহত্তর ঐক্য করতে আমাদের হাতে-পায়ে ধরা হয়েছিল। কামাল হোসেন ১১ দল ভেঙ্গে চলে গেলেন। আমরা তাকে বলেছিলাম, এখানে যাইয়েন না। ১১ দল গড়া হয়েছিল দ্বি-দলীয় মেরুকরণের বাইরে বিকল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে। ঘোষিত লক্ষ্য পরিত্যাগ করে কামাল হোসেন ১৪ দলে চলে গেলেন।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নতুন মুখপাত্র করার বিষয়ে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “ছোট-খাটো বিষয়গুলো আমাদের খেয়াল করতে হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র দুই দিন আগে পর্যন্ত যিনি ছিলেন তাকে অপসারণ করে ফখরুল সাহেব দায়িত্ব নিয়েছেন। এখানে ট্রেনডের যে ঘাত-প্রতিঘাত সেটা আল্টিমেন্টলি যে কোন জায়গায় যাবে, সেটা আমি ভবিষৎবাণী করতে চাই না। সেটা যে এক জায়গায় থাকবে সেটা মনে হয় না।”

তিনি বলেন, “আমরা সংক্ষীর্ণ নই, আমরা অন্যদের সঙ্গে যেতে চাই না, তা না; আমরা যেতে চাই। কিন্তু এক দুঃশাসনের অপসারণের জন্য আরেক দুঃশাসন কায়েম করার ঐক্য চাই না। এই খেলায় যোগ দিতে চাই না।”

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই খেলা চলতে থাকলে দেশে ‘লক্ষ বছরের জন্য দ্বি-দলীয় দুঃশাসন’ চলবে বলে মন্তব্য করেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

সিপিবি সভাপতি বলেন, “আমরা স্লোগান দেই- এক জোটে রাজাকার, এক জোটে স্বৈরাচার। স্লোগানটা একটু কারেকশন করা দরকার, দুই জোটেই রাজাকার, দুই জোটেই স্বৈরাচার।”

তিনি বলেন, “আমাদের এখানে এখনও একটি স্বাধীন উৎপাদনশীল বুর্জোয়া রাজনৈতিক সংগঠন নেই। আওয়ামী লীগের ভেতরে এই সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু সেই সম্ভবনা বিনষ্ট হয়ে গেছে। এটা এখন লুটেরা ধনীক শ্রেণির দলে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সময়ে আওয়ামী লীগের শুরুটা এমন ছিল না।”

সেলিম বলেন, “আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তো বটেই এমনকি তৃণমূল পর্যায়ে, ইউনিয়ন পর্যায়ে গেলেও দেখা যাবে লুটপাটের পেছনে তাড়িত হয়ে দলের একটা পদ পাওয়ার জন্য ১০-২০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে তদবির করে করার চেষ্টা করছে।”

সিপিবির উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান বলেন, “সবাই মিলে একটা শপথ নিতে হবে যে, বাংলাদেশে একটা বিপ্লব আনতে হবে। এই বিপ্লব ছাড়া বাংলাদেশের মানুষ মুক্তি পাবে না, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। সমাজতন্ত্রের কথা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে রচনা করেছি, সেই সমাজতন্ত্রের কথা আমাদের সংবিধানের মূলনীতির মধ্যেও নিহিত আছে।”

আলোচনায় অন্যদের মধ্যে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক শফিউদ্দিন আহমেদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা মশিউদ্দিন শাকেরসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।