প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন স্থগিত

নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের ফল জানাতে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর যে সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল, তা স্থগিত করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2018, 03:39 PM
Updated : 7 Nov 2018, 07:12 PM

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম হেলাল বুধবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনিবার্য কারণবশত আগামীকালের সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে।”

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর কাদের পরে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কারণে।

সংলাপ আর হবে না জানিয়েই তিনি বলেন, “আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আলোচনার জন্য দরজা সব সময় খোলা। পরবর্তীতে সময় থাকলে, গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে, প্রয়োজনীয় কথা বা আলোচনা যে কারো সাথে হতে পারে।”

তিনি জানান, ১ নভেম্বর শুরু করার পর প্রধানমন্ত্রী মোট ১০০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছেন।

“একটা মধুর সমাপনীর মাধ্যমে সংলাপ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এটা নতুন মাইলফলক।”

বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাবে কাদের বলেন, “শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। সংলাপ এখন শেষ, কাজেই এখন তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতেই পারে।

“তবে পদযাত্রার নামে এবং রোডমার্চের নামে কোনো প্রকার সহিংসতা বা নাশকতা করার চেষ্টা যদি করেন, তাহলে আমরা কিন্তু চুপচাপ থাকব না। আমরা সেটা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব।”

একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য ইসির প্রস্তুতির মধ্যেই অপ্রত্যাশিতভাবে সংলাপের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত ১ নভেম্বর কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে গণভবনে আলোচনায় বসেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই সংলাপে খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। তবে প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো দাবি মানার সুযোগ নেই বলে তাদের জানান।

অন্যান্য দল ও জোটও সংলাপের আগ্রহ দেখালে তাদেরও আমন্ত্রণ পাঠানো হয় গণভবন থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বলা হয়, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য সংবিধানসম্মত যে কোনো বিষয়ে আলোচনার জন্য তার দুয়ার রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য খোলা।

এ ধারাবাহিকতায় গত এক সপ্তাহে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট, এইচ এম এরশাদ নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট, ইসলামী ঐক্যজোটসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল, বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং আরও বেশ কিছু দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসেন প্রধানমন্ত্রী। 

এসব সংলাপের সারসংক্ষেপ তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ও্ সার সংক্ষেপ তৈরি হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার দুপুরে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপের পরও কাদের বলেছিলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করে আলোচনার ফলাফল তুলে ধরবেন। 

এদিকে নির্বাচন কমিশনও আলাদাভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে তফসিল ঘোষণার সব প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে তফসিল চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসবে কমিশন। এরপর সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে সিইসি কে এম নূরুল হুদার ভাষণে সেই তফসিল ঘোষণা করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলগুলোর সংলাপের ফলাফলের ওপর তফসিল নির্ভর করবে কি না- এ প্রশ্নে হেলালুদ্দীন বলেন, “ফলাফল জেনে গেছি। আমাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়েছে। উনারাও তফসিল ঘোষণায় সমর্থন জানিয়েছেন এবং সাংবিধানিকভাবে তফসিল ঘোষণার এখতিয়ার ইসির।”

আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার জন্যও আর অপেক্ষা করার কিছু নেই।

“আমরা সবার সঙ্গে বসেছি, মতামতও পেয়েছি। এখন তফসিল ঘোষণা করা হবে।”