জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ফের সংলাপ বুধবার

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ডাকে সাড়া দিয়ে আবারও তাদের সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2018, 04:50 PM
Updated : 6 Nov 2018, 01:20 PM

আগামী বুধবার এই সংলাপ হবে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

গণভবনে রোববার ১৪ দলের এক সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ঐক্যফ্রন্টের থেকে আবার সংলাপে বসতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই জানিয়েছিলেন যে সংলাপের জন্য তার দ্বার উন্মুক্ত। তবে ৭ নভেম্বরের পর সংলাপ সম্ভব নয়।

“সবমিলিয়ে ৭ নভেম্বর বেলা ১১টায় ছোট আকারে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ হবে।”

প্রথম সংলাপের ‘অসম্পূর্ণ আলোচনা সম্পূর্ণ’ করতে আবার আলোচনায় বসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রোববারই চিঠি দিয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা কামাল হোসেন।

বেলা ১২টার দিকে কামাল হোসেনের স্বাক্ষরিত ওই চিঠি ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পৌঁছে দেন গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে গত ১ নভেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বহুল আলোচিত সংলাপে বসে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

ওই সংলাপে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি তুলে ধরেন।

তবে প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো দাবি মানার সুযোগ নেই বলে তাদের জানান।

সেদিন সংলাপ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে কামাল হোসেন বলেন, এ আলোচনায় বিশেষ কোনো সমাধান তারা পাননি। আর জোটের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির ফখরুল বলেন, আলোচনায় তারা সন্তুষ্ট নন।

আবার সংলাপ চেয়ে রোববার কামালের চিঠিতে বলা হয়, “দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আলোচনার পরও আমাদের আলোচনাটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সেইদিন আপনি বলেছিলেন, আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

বৃহস্পতিবার গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

“তারই পরিপ্রেক্ষিতে অসম্পূর্ণ আলোচনা সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে অতি জরুরি ভিত্তিতে আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে আবারও সংলাপে বসতে আগ্রহী।”

তবে এবারের আলোচনার বিষয়বস্তু ‘সীমিত পরিসরে’ রাখার পক্ষে মত দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, “এই ক্ষেত্রে দফাগুলোর সাংবিধানিক এবং আইনগত দিক বিশ্লেষণের জন্য উভয় পক্ষের বিশেষজ্ঞসহ সীমিত পরিসরে আলোচনা আবশ্যক।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপে যাওয়ার আগে রোববার রাতে সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন নিয়ে বিশেষজ্ঞ আইনজীবীদের মতামত নিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আইন বিষয়ক সাংবাদিক সালেহউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসায় ৭ নভেম্বরের পর আর সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ না থাকার কথা ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন।  

এর মধ্যে সংলাপ শেষ হওয়ার আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠিও দেয় ঐক্যফ্রন্ট।

৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার কথা ইসি জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বসার জন্য ৭ নভেম্বর সময় নির্ধারণের কথা জানান কাদের।

বৈঠকে ১৪ দলের নেতারা

বৈঠকে শেখ হাসিনা

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টতে সংলাপে ডাকার পর অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করছেন শেখ হাসিনা। এর ধারাবাহিতায় রোববার রাতে গণভবনে নিজেদের জোট শরিক ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

দুই ঘণ্টার এই বৈঠকে শেখ হাসিনা গত প্রায় ১০ বছরে দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রগতি মূল্যায়ন করে জনগণ নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেবে বলে নিজের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বৈঠক শেষে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ১৪ দল আগের মতোই জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাবে। আগামী নির্বাচনও ঐক্যবদ্ধভাবে করতে তারা এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়া হয়েছে।

নাসিম বলেন, “একটি অশুভ চক্র এখনো সক্রিয় রয়েছে। নানাভাবে তারা নির্বাচন ভণ্ডুল করার ষড়যন্ত্র করছে। সংলাপের মধ্যে তারা আন্দোলনের কথা বলছে। এই অশুভ চক্রের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ে যাবে ১৪ দল।”

আসন্ন নির্বাচনে জোট শরীকদের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাওয়া হলে নাসিম বলেন, “এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই মেনে নেওয়া হবে।”