ফখরুল বললেন এক, কামাল আরেক

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা মির্জা ফখরুল ইসলাম বললেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা কামাল হোসেন বলছেন, দলীয় স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থই এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2018, 01:33 PM
Updated : 31 Oct 2018, 01:54 PM

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে, সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবি তোলা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার গণভবনে যাচ্ছেন।

এই সংলাপে যাওয়ার আগে বুধবার সকালে এক কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, “সবার আগে শর্ত হচ্ছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তার মুক্তি না হলে কোনো নির্বাচনই অর্থবহ হবে না।”

এরপর বিকালে এক আলোচনা সভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান উদ্যোক্তা কামাল বলেন, “সংলাপে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা সবসময় মনে করি, জনগণ ক্ষমতার মালিক। তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ করবে দেশের স্বার্থ নিয়ে, দলীয় স্বার্থ না। আমরা চাই, জাতীয় স্বার্থ নিয়ে সংলাপ হোক।”

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে ব্যর্থ হওয়ার পর একাদশ সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে গণফোরাম সভাপতি কামালের সঙ্গে জোট বেঁধেছে। দলটির নেতারা আশা করছেন, দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে বন্দি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাসহ ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ এবার সফল হবেন তারা।

এই জোটে আ স ম আবদুর রবের দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও মাহমুদুর রহমান মান্নার দল নাগরিক ঐক্যও রয়েছে। সেইসঙ্গে রয়েছে কামাল হোসেনের গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। 

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জেএসডির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কামাল; এই সভায় বিএনপি মহাসচিব ফখরুলও ছিলেন।

সংলাপে অংশ নেওয়ার দলে থাকলেও তার সফলতা নিয়ে সংশয়ের সুর ফুটে ওঠে ফখরুলের বক্তৃতায়।

তিনি বলেন, “প্রতিদিন আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী যে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তা কতটা আন্তরিকতার সাথে আহ্বান করেছেন এবং সেই সংলাপের পরিণতির দ্বার কোন দিকে নিয়ে যাবে, সে সম্পর্কে জনগণের মধ্যে ইতোধ্যেই সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

“আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবার জন্যে, মানুষের অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে আনবার জন্যে, সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করবার জন্যে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আজকে জাতীয় সংলাপের মধ্য দিয়ে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার তিনি করবেন। আমরা ৭ দফা দাবি দিয়েছি, তা অবশ্যই পূরণ করবেন। এছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কোনো সমাধান হবে না।”

এক অনুষ্ঠানে কামাল হোসেনের সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ফাইল ছবি)

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত সাত দফা প্রথম দাবিটি হচ্ছে-  অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।

সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্না বলেন, “আমরা ৭ দফা দাবি পেশ করেছি। আগামীকাল আলোচনা হবে এই দাবির ভিত্তিতে। এই তিনদিনে বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একটি মামলায় ৭ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। আরেকটি মামলার আপিলে তার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। আজকে আরেকটি রায়ে বলা হয়েছে যে, বিএনপি যে তার গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছিল, সেই সংশোধনী গ্রহণযোগ্য নয়।

“আমাদের ৭ দফার মধ্যে একটি দাবিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিয়েছে এই সরকার, ওরা এটা কেয়ার করে না।”

মান্না বলেন, “তারা (সরকার) বলছেন, সংবিধানসম্মত আলোচনার জন্য তারা আমাদের ডেকেছেন। আমরা সকলের উদ্দেশে বলতে চাই, অবশ্যই আন্তরিকভাবে এই সংলাপের মাধ্যমে আমরা একটা পরিসমাপ্তি ও নিষ্পত্তি আমরা চাই।

“যদি আগেই কেউ দেওয়াল তুলে দেন, তাহলে সংলাপ হবে না। আগেই যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেন যে কথা বলা যাবে না, তাহলে সংলাপ হবে না। আগেই যদি সংবিধানের নামে বেড়াজাল সৃষ্টি করা হয়, সংলাপ সফল হবে না।”

জেএসডির সভাপতি রব বলেন, “জাতীয় ঐকমত্যের সরকার করতে হবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেজন্যই আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি। সরকারকে বলব, ৭ দফা দাবি মেনে নিন।

“আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, দেশে যদি শান্তি চান, মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে চান, তাহলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা নিয়ে আলোচনা করুন।”

রবের সভাপতিত্বে ও জেএসডির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, সহসভাপতি এম এ গোফরান, হুমায়ুন কবীর হীরু বক্তব্য রাখেন।

কামাল বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচনে জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে। এবার অনুরোধ করব, সবাই সংগঠিত হন, ঘরে-ঘরে, পাড়া-মহল্লায় গ্রামে-গ্রামে। এবারে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আসুন দেশের মালিক হিসেবে আমাদের স্বার্থ ও সম্পদকে রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি।”

আলোচনা সভায় জানানো হয়, সামাজিক শক্তি, গণ-সাংস্কৃতিক দল, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দল, ভুমিবল সমাজবাদী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, কংগ্রেস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, জাতীয় বিপ্লবী পার্টি, সমাতান্ত্রিক মজলুর পার্টি, সোস্যালিস্ট পার্টি, সততা পার্টি,  শ্রমিক পার্টি, ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ পার্টি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী সিপিবিএম)সহ মোট ১৯টি দল-সংগঠন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে।