দুর্নীতির আরেক রায়, খালেদার আরও ৭ বছর সাজা

ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার আসামির সবাইকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

মাসুম বিল্লাহপ্রকাশ বিশ্বাস ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2018, 06:23 AM
Updated : 29 Oct 2018, 02:52 PM

ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে বসানো পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাস থেকে বিচারক মো. আখতারুজ্জামান সোমবার এই রায় ঘোষণা করেন।

২০০১-২০০৬ মেয়াদে খালেদা জিয়ার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা তুলে ধরে রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, “সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন থেকে অপরাধমূলক কাজের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ট্রাস্টের অনুকূলে অবৈধভাবে অর্থ সংগ্রহ করে তিনি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা কখনো কাম্য হতে পারে না।”

জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আট মাসের মাথায় দ্বিতীয় দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হলেন।

কারা কর্তৃপক্ষ বারবার খালেদাকে আদালত কক্ষে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার অনুপস্থিতিতেই এ মামলার শেষ দিকের কার্যক্রম চালিয়ে নেয় আদালত। রায়ের সময়ও তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না; তার আইনজীবীরাও কেউ আসেননি।

এ মামলার বাদী প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছিলাম, তা পেয়েছি।”

আদালতে উপস্থিত না থাকায় আসামিপক্ষের আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আসন্ন নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়াকে দূরে রাখতে এই ‘ফরমায়েসি’ রায় দেওয়া হয়েছে।

এই রায়ের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সারা দেশে জেলা সদর ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তিনি।

৬ অগাস্ট খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেওয়া হয়

৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য কারা তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) রাখা হয়েছে। সর্বশেষ ৫ সেপ্টেম্বর তিনি আদালতে এসে বলেছিলেন, বিচারক যত খুশি সাজা দিতে পারেন, তিনি আর আসবেন না।

সাত বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এ মামলার চার আসামির মধ্যে খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন। সম্প্রতি ২১ অগাস্ট গ্রেনেড মামলার রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।  

হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। 

বিচারক আখতারুজ্জামান তার চার শতাধিক পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসার প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা সময় নিয়ে আদালতে পড়ে শোনান। ১৫টি বিষয় বিবেচনা করে তিনি আসামিদের সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করেন।   

দুর্নীতির দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন তিনি।

আর খালেদা জিয়াকে দুর্নীতিতে সহযোগিতা করার দায়ে বাকি তিন আসামিকে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার পাশাপাশি দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় একই সাজার আদেশ দেন বিচারক। 

পাশাপাশি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে কেনা কাকরাইলের ৪২ কাঠা জমি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে রায়ে।

দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা: কোনো সরকারি কর্মচারী অপরাধমূলক অসদাচরণ সংঘঠন করিলে বা সংঘঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করিলে সাত (০৭) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডযোগ্য হইবে এবং অপরাধমূলক অসদাচরণ সংশ্লিষ্ট অর্থিক সম্পদ অথবা সম্পত্তি ও রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হইবে।

দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা: কোনো ব্যক্তি কোনো অপরাধে সহয়তা করিলে যদি সহায়তার ফলে সাহায্যকৃত কার্যটি সম্পাদিত হয় এবং এই বিধিতে অনুরূপ দুস্ককর্মে সহায়তার শাস্তি বিধানার্থে কোন স্পষ্ট বিধান না থাকে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির উক্ত অপরাধের জন্য ব্যবস্থিত শাস্তি বিধান করা হইবে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, “ভবিষ্যতে যাতে অনুরূপ দায়িত্বে থেকে কেউ ওই ধরনের অপরাধ করতে উৎসাহিত না হন, সেজন্য ওই আসামিকে (খালেদা) কঠোর শাস্তি প্রদান করা অত্যাবশ্যক।

“অপর তিনজন আসামি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে আসামি খালেদা জিয়াকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ওই ধরনের অপরাধ করার কাজে সহায়তা করায় তাদেরকেও সম পরিমাণ শাস্তি দেওয়া যুক্তিসঙ্গত বলে এই আদালত মনে করে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এ মামলার বিচার চালানোর সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আপিল বিভাগে গিয়েছিলেন তার আইনজীবীরা। সোমবার সকাল ৯টার পর আপিল বিভাগ সেই লিভ টু আপিল খারিজ করে দিলে রায় ঘোষণার বাধা কাটে। 

এ রায়কে ঘিরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কারাগারে থাকা দুই আসামি মনিরুল ইসলাম খান ও জিয়াউল ইসলাম মুন্নাকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের কয়েকজন স্বজনও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

বেলা ১১টার দিকে বিচারক আখতারুজ্জামান খাস কামরায় এলে এ মামলায় দুদকের আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু তার সঙ্গে কিছু সময় কথা বলেন।

বেলা ১১টা ২২ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আপিল বিভাগের আদেশের বিষয় বিচারককে জানান কাজল। একইসঙ্গে মামলার রায় ঘোষণার আর্জি জানান তিনি।

এরপর রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়ে ১২টা ১০ মিনিটের মধ্যে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক আখতারুজ্জামান।

দুই আসামি মনিরুল ও মুন্নাকে আদালত থেকে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়ার সময় স্বজনরা তাদের বিদায় দেন। এ সময় মনিরুলের স্ত্রী শাহনাজ ইসলাম ও মুন্নার স্ত্রী সাহানারাকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়।

এ রায় ঘিরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল এবং কারাগার এলাকায় সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আশপাশের বিভিন্ন ভবনের ছাদেও পুলিশ প্রহরা দেখা যায়।

রায়ের পর প্রিজন ভ্যানে মনিরুল ইসলাম খান

আদালতের বাইরে দুই আসামি মুন্না ও মনিরুলের স্বজনরা

বিচার পরিক্রমা

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালের ৮ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন।

তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।

তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায় ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে চার আসামির বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।

আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনের পর্যায়ে থাকাবস্থায় ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর সরকার বাসুদেব রায়কে বদলি করে, তার জায়গায় আসেন আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহমেদ জমাদার।

পরে বিচারক আবু আহমেদ জমাদারের প্রতি খালেদার অনাস্থার প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১৭ মে হাই কোর্টের আদেশে মামলা স্থানান্তরিত হয় ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামানের আদালতে।

রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৭ সালের গত ১ ডিসেম্বর আদালতে উপস্থিত হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন খালেদা। সেখানে নিজেকে ‘সম্পূর্ণ নির্দোষ’ দাবি করে তিনি আদালতের কাছে সুবিচার চান।

তার আবেদনে কয়েক দফা এ মামলার বিচারক বদলে দেয় হাই কোর্ট। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা নানাভাবে সময়ক্ষেপণ করে বিচার বিলম্বিত করছেন বলে অভিযোগ করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলার কার্যক্রম গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বকশীবাজারে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে এতিমখানা দুর্নীতি মামলার সঙ্গেই চলছিল।

এ বছর ৮ ফেব্রুয়ারি একই বিচারক এতিমখানা দুর্নীতি মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর পরের সাত মাসে কারা কর্তৃপক্ষ খালেদাকে আদালতে উপস্থিত করতে না পারায় জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি দফায় দফায় পেছানো হয়। প্রতিবারই আদালতকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা বলা হয়।

এই পরিস্থিতিতে ৪ সেপ্টেম্বর ‘নিরাপত্তার কারণ’ দেখিয়ে কারাগারের ভেতরেই আদালত বসিয়ে এ মামলার শুনানি শেষ করার ব্যবস্থা করে সরকার। পরদিন ওই অস্থায়ী এজলাসে হাজির করা হলে খালেদা জিয়া বলেন, তিনি বার বার আদালতে আসতে পারবেন না, বিচারক তাকে ‘যতদিন খুশি’ সাজা দিতে পারেন।

এরপর শুনানির দুটি নির্ধারিত দিনে কারা কর্তৃপক্ষ খালেদাকে আদালত কক্ষে আনতে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেন বিচারক মো. আখতারুজ্জামান।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে গেলে তাদের আবেদন ১৪ অক্টোবর খারিজ হয়ে যায়। এরপর হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। সেই লিভ টু আপিল সোমবার সকালে খারিজ হয়ে যায়।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্কের শুনানিতে অংশ না নিয়ে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে পাঠানোসহ বিভিন্ন আবেদন নিয়ে শুনানি করতে থাকায় দুদকের আইনজীবী কাজল যুক্তিতর্ক ছাড়াই রায়ের তারিখ নির্ধারণের আবেদন করেন জজ আদালতে। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ১৬ অক্টোবর বিচারক আখতারুজ্জামান রায়ের জন্য ২৯ অক্টোবর দিন ঠিক করে দেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রোববার সাংবাদিকদের বলেন, জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের শুনানির সময় খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে ৪০ বার সময় নেওয়া হয়। তারপর যখন আসামি পক্ষের বক্তব্য শোনার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হল, তখন তিনি ৩২ বার সময় নিয়েছেন।

আট মাসের মাথায় দ্বিতীয় মামলায় দণ্ডিত হলেন খালেদা জিয়া

অভিযোগপত্রে যা ছিল

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ‘অবৈধ উৎস থেকে’ অর্থ সংগ্রহ, কাকরাইলে জনৈক সুরাইয়া খানের কাছ থেকে ৪২ কাঠা জমি কেনায় অনিয়ম এবং ট্রাস্টের নামে জমির নামজারি না করার অভিযোগ আনা হয় এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে।

সেখানে বলা হয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সময় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, ‘শহীদ জিয়াউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ নামে ওই ট্রাস্ট গঠন করেন।

ওই সময় খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাসার ঠিকানাই ট্রাস্টের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। খালেদা জিয়া নিজে এবং তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের তাতে ট্রাস্টি ছিলেন।

এই ট্রাস্টের নামে ২০০৫ সালের ৯ জানুয়ারি তেজগাঁওয়ে সোনালী ব্যাংকের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন খালেদা জিয়া। পরে সেখানে টাকও জমা করা হয়।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর খালেদা জিয়া ওই ট্রাস্টের নামে কোনো ধরনের কার্যক্রম বা লেনদেন করেননি বলে উল্লেখ করা হয় অভিযোগপত্রে।

সেখানে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অতিরিক্ত অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়, যা ‘অবৈধ’ উৎস থেকে এসেছে বলে অভিযোগ করে দুদক।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, খালেদা জিয়া ও হারিছ চৌধুরীসহ আসামিরা ‘সরকারের পদমর্যাদা ব্যবহার করে পরস্পর যোগসাজশে’ ওই টাকা ‘অবৈধভাবে’ সংগ্রহ, জমা ও ব্যয় করেন।

মামলায় বলা হয়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ব্যাংক হিসাব খোলার পর সাত দিনের মধ্যে জমা হয় ৭ কোটি ৮০ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ টাকা। এর মধ্যে ৬ কোটি ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ টাকা বিএনপির দলীয় তহবিল থেকে আসে।

বাকি টাকার মধ্যে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা মেট্রো মেকার্স ডেভেলপার্স লিমিটেড এবং ২৭ লাখ টাকা জিয়াউল ইসলামের কাছ থেকে ওই হিসাবে আসে।

দুদকের অভিযোগ ছিল, বিএনপির দলীয় ফান্ডের টাকা ছাড়া বাকি টাকার কোনো বৈধ উৎস নেই। তখনকার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার দাপ্তরিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে ওই অর্থ সংগ্রহ ও জমা করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, মেট্রো মেকার্স ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এফ এস জাহাঙ্গীর ট্রাস্টে টাকা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার এপিএস মনিরুল ইসলাম মেট্রো মেকার্সের নাম ব্যবহার করে ওই অর্থ জমা দিয়েছেন।

অন্যদিকে মনিরুল ইসলাম দুদককে বলেছেন, হারিছ চৌধুরীর দেওয়া টাকা পে অর্ডারের মাধ্যমে তিনি ওই হিসাব নম্বরে জমা দিয়েছেন। একইভাবে জিয়াউল ইসলামও বলেছেন, নির্দেশ ছিল বলেই তিনি টাকা জমা দিয়েছেন।