মইনুলকে পাকিস্তানি বাহিনীর ‘দালাল’ বললেন শেখ হাসিনা

সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে কটূক্তির জন্য মইনুল হোসেনের সমালোচনা করতে গিয়ে তাকে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর ‘দালাল’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2018, 02:22 PM
Updated : 22 Oct 2018, 02:22 PM

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ছেলেকে একাত্তরে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন হত্যাকাণ্ডের জন্যও দায়ী করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

সৌদি আরব সফর করে ফেরা প্রধানমন্ত্রী সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এলে মাসুদা ভাট্টিকে মইনুলের কটূক্তির প্রতিবিধান চান সাংবাদিকরা।

তখন শেখ হাসিনা বলেন, “যে লোক একজন মহিলা সাংবাদিককে কটূক্তি করল জঘন্য ভাষায়। তার বাচনিক ভঙ্গি ছিল খুব খারাপ। তার কাছে এর বেশি কী আশা করবেন?

“সে কে তা জানেন? একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দালালি করে বেড়াত। ইত্তেফাক থেকে যে সিরাজুদ্দীন হোসেনকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, এর জন্য তো সেও কম দায়ী না, অন্তত আমি এতটুকু বলতে পারি।”

ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক থাকার সময় ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর আলবদর ও রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সিরাজুদ্দীন হোসেনকে তার বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর আর খোঁজ মেলেনি এই বুদ্ধিজীবীর।

মানিক মিয়ার ছেলে ব্যরিস্টার মইনুল জরুরি অবস্থার সময় সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্ববধায়ক সরকারে উপদেষ্টা ছিলেন। ওই সময় দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

এক সময় ইত্তেফাকের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মইনুল এখন নিউ নেশনের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ও প্রকাশক। বাবার সম্পত্তি ভাগাভাগির পর ইত্তেফাকের মালিকানা পেয়েছেন তার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তিনি শেখ হাসিনার সরকারে মন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “সে (মইনুল) ইত্তেফাকে একটা মার্ডারও করে। নিজে মার্ডার করে নিজের ভাইকে ফাঁসানোরও একটা প্রচেষ্টা চালিয়েছিল।”

মইনুল সম্পর্কে শেখ হাসিনা আরও বলেন, “উনি গিয়েছিলেন ব্যারিস্টারি পড়তে। তোফাজ্জল হোসেন মানিক চাচা পাঠালেন। আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল। ব্যারিস্টারি পাস করে আসার পর উনি সাহেব হয়ে গেলেন! মানিক চাচা কিন্তু খুব পান্তা ভাত খেতেন। আর উনার ছেলে আসছেন সাহেব হয়ে। বাংলাদেশি খাবার আর খেতে পারেন না, সাহেবি খাবার খেতে হবে। চাচি স্বাভাবিকভাবেই মার কাছে খুব আফসোস করে বলছেন, ‘আমি এখন কী করি, আমার ছেলে ইংরেজি খাবার খাবে। সেই যুগে একশ টাকা দিয়ে উনার জন্য ইংরেজি খাবার রান্নার জন্য বাবুর্চি রাখা হয়।”

মইনুল হোসেন (ফাইল ছবি)

মইনুলকে ব্যঙ্গ করে শেখ হাসিনা বলেন, “উনি হল ওই যে, কাক ময়ূরপুচ্ছ লাগায়ে চলে। ময়ূর হওয়ার চেষ্টা করে। উনিও বিদেশে ব্যারিস্টারি পড়তে গিয়ে ইংরেজ হওয়ার চেষ্টা করেছেন। শিখেছেন খাওয়াটা ঠিকই। কিন্তু ইংরেজের ভদ্রতাটা শিখে আসেন নাই। কথা বলা শিখে আসেন নাই।

“একথা তো সবার পক্ষে জানান সম্ভব না। আমি জানি। আরও জানি পরে বলব,” বলেন শেখ হাসিনা।

বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে কামাল হোসেনের নতুন জোটে সক্রিয় মইনুলের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর আপনাদের মনে আছে খুনি মোশতাক একটা দল খুলেছিল, এই মইনুল হোসেন কিন্তু সেই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।

“এরপরে সে আবার একটি দল করে জাতির পিতার হত্যাকারী, খুনি হুদা, পাশা এদেরকে নিয়ে। তার রাজনৈতিক দলে কারা? জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিরা। তার কাছ আর কী পাবে?”

মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মাসুদা ভাট্টি মানহানির মামলা করার পর তিনি হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেক্ষেত্রে আমি বলবো, আমাদের নারী সাংবাদিকরা, আপনারাই বা কী করছেন? একটা মামলা হয়েছে, আরও তো মামলা হতে পারে। আপনারা প্রতিবাদও করতে পারেন। আপনারা প্রতিবাদ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা করার করবে। আপনারা মামলা করেন, আমরা যা করার করব।”

একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মইনুল হোসেনকে আর টেলিভিশনে ডাকব না।”

তখন শেখ হাসিনা বলেন, “ডাকলেও আর আসবে কি না, সেএখন সন্দেহ আছে। সে যে এখন কোথায় চলে গেছে ইঁদুরের গর্তে, সেটা আগে দেখেন। কোন ইঁদুরের গর্তে ঢুকেছে, আগে তাই দেখেন।”