আর কয় ‘উইকেট’ পড়বে, সময়ই বলে দেবে: কাদের

বিএনপিকে নিয়ে কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে আওয়ামী লীগের ‘বিচলিত হওয়ার কিছু নেই’ মন্তব্য করে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ওই ঐক্য কতটা অটুট থাকবে তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2018, 10:23 AM
Updated : 20 Oct 2018, 10:23 AM

নির্বাচন সামনে রেখে কোনো দলের সঙ্গে সংলাপে বসার কোনো প্রয়োজন আছে বলেও মনে করছেন না ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।

শনিবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, “জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যারা গত দশ বছরে আন্দোলন করতে পারে নাই, শুরুর আগেই যাদের দুই উইকেট পড়ে গেছে… আরও কত উইকেট পড়বে তা সময় বলে দেবে।”

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারাও ছিল। কিন্তু বিএনপি তাতে যোগ দেওয়ায় বিকল্প ধারা সরে যায়।

এদিকে বিএনপি কামাল হোসেনের সঙ্গে জোট বাঁধায় ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ন্যাপ ও এনডিপি।

জোট নিয়ে এই ডামাডোলের মধ্যে বিকল্প ধারাতেও ভাঙন দেখা দেয়। ঐক্যফ্রন্টে যোগ না দেওয়ায় অসন্তুষ্ট হয়ে দলটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদলসহ কয়েকজনকে বহিষ্কার করেছিলেন বিকল্প ধারার সভাপতি বদরুদ্দোজা ।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বাদল ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে’ সভাপতি বদরুদ্দোজা, মহাসচিব আবদুল মান্নান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরীকে ‘অব্যাহতি’ দিয়ে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন।

বিকল্পধারার পর বিএনপিও ভাঙতে পারে- এমন গুঞ্জনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, “ভাঙনের প্রক্রিয়ায় আমাদের অংশ নেওয়ার কিছু নেই। অন্য দল যদি ভাঙে তাহলে তারা নিজেরাই নিজেদের দল ভাঙবে। সেখানে আমাদের তো কোনো হাত নেই।”

ঐক্য ফ্রন্ট গঠিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ বিচলিত- বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের এমন মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে তারা প্রথমেই বিদেশিদের কাছে গেছে। দেশের জনগণের কাছে তো যায়নি। দেশের জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই, জনগণের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”

নির্বাচন সামনে রেখে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপের সম্ভাবনা আগের মতই প্রত্যাখ্যান করেন ওবায়দুল কাদের।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন সচিব বলেছেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা হতে পারে। তাহলে এখন আর ১০/১২ দিনেরমধ্যে। কে কার সঙ্গে সংলাপ করবে? দেশে সংলাপ করার মত এমন কোনো পরিবেশ নেই, এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি, সংলাপের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।”

আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আগামী নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় প্রকাশ করেছেন এবং সম্মিলিত জাতীয় জোটের পক্ষ থেকে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন- সে বিষয়েও কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি বলেন,  “এরশাদ সাহেব তো পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে বক্তব্য রাখতে পারেন। উনি তো সংসদে বিরোধী দলের আসনে আছেন, বিরোধী দলের পক্ষ থেকে যে কোনো বক্তব্য উনি দিতেই পারেন।

“উনিতো আর উনার পার্টিকে আওয়ামী লীগে দিয়ে দেননি। এরশাদ সাহেব আমাদের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচন করতে পারেন, আবার নাও করতে পারেন। আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।”

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে কাদের বলেন, যে কোনো দলের নেতারা নির্বাচনের আগে সিলেটে মাজার জিয়ারতে যেতে পারেন। কিন্তু মাজার জিয়ারতের নামে কোনো ‘নাশকতা বা সহিংসতা ‘ পরিকল্পনা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে।

সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে নিয়ে এক টেলিভিশন আলোচনায় জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মন্তব্যের সমালোচনা করে নারী সাংবাদিকদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন কাদের।

অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামসুনন্নাহার চাপা, তথ্য ও গবেষণ বিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমীন, উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।